স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নের চক্রমোহনা গ্রামে আলোচিত জেসমিন আক্তারের মৃত্যু নিয়ে একদিকে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে, অপরদিকে, অভিযোগ উঠেছে- জেসমিনের মৃত্যুর সাথে এক বিকাশ ব্যবসায়ীকে জড়িয়ে মামলা দিয়ে হয়রানির চেষ্টা করছে তার পরিবার। স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ এলাকাবাসী এই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার তেতৈয়া গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে হাসান বছরখানেক ধরে তার নানার বাড়ি এলাকায় সুকড়ীপাড়া মসজিদ মার্কেটে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং ও বিকাশের ব্যবসা করে আসছেন। বুধবার সন্ধ্যায় তার দোকানে চক্রমোহনা গ্রামের আরজু মিয়ার কন্যা জেসমিন আক্তার (১৮) বিকাশ করতে যান। এ সময় জেসমিন আক্তার ০১৬১৫৩৬৯৮৩৮ নাম্বারে এক হাজার ২০ টাকা বিকাশ করতে ব্যবসায়ী হাসানকে অনুরোধ করেন। হাসান বিকাশে টাকা পাঠানোর সাথে সাথে জেসমিন আক্তার বিকাশের টাকা পরিশোধ না করে দৌঁড় দিয়ে প্রতিবেশি আব্দুল আলীর বাড়িতে চলে যান। পরবর্তীতে হাসান তার দোকানের আশপাশের লোকজনকে এ বিষয়টি অবগত করেন। এক পর্যায়ে হাসানের দোকানের পাশের দোকানে অবস্থান করা জেসমিনের চাচা সমছু মিয়া হাসানকে বলেন ওই মেয়েটি আমার ভাতিজি। তুমি চিন্তা করো না, আমি টাকা দেব। পরবর্তীতে চাচা জেসমিনের ছোট ভাইকে জানালে সে হাসানের দোকানে এসে টাকা পরিশোধ করে।
প্রতিবেশী সূত্র জানায়, রাত সাড়ে ৭টার দিকে জেসমিনের সাথে এ বিষয় নিয়ে তার পরিবারের লোকজনের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে জেসমিন অজ্ঞান হয়ে মাটিতে ঢলে পড়েন। এ সময় তাৎক্ষণিক জেসমিনকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে হাসপাতালের ডায়রীতে জেসমিনের পরিবারের লোকজন লেখান সে, গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যার খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হবিগঞ্জ সদর (সার্কেল) মোহাম্মদ খলিলুর রহমান, হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেব, তদন্ত মুসলেহ উদ্দিন, ওসি অপারেশন মোবারক হোসেন, এসআই মমিনুল হক, এসএম আব্দুল মান্নানসহ সদর থানা পুলিশ হাসপাতাল ও সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং পুলিশ জেসমিনের ছুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করেন। ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর পুলিশকে নিহত জেসমিনের চাচা সমছু মিয়া জানান, হাসানের দোকানে এসে বিকাশ করে টাকা না দিয়েই জেসমিন চলে গিয়েছিল। পরে আমি আমার ভাতিজি বলায় সে আর কিছু বলেনি। পরে আমার ভাতিজাকে জানালে সে হাসানের দোকানে এসে টাকা দিয়ে যায়। হাসান তার সাথে কোন ধরণের খারাপ ব্যবহার করেনি। এরপর রাতে জেসমিন তার পরিবারের সাথে ঝগড়া করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। কিন্তু পরবর্তীতে এ ঘটনায় হাসানকে ফাঁসানোর জন্য জেসমিনের চাচা সমছু মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের থানায় নিয়ে এসে পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দেয়। সমছু মিয়া পুলিশকে জানান, সেদিন তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। হাসানকে বিকাশের টাকা না দেওয়ায় হাসান জেসমিনকে জোরপূর্বক আব্দুল আলীর বাড়ি থেকে দোকানে নিয়ে আসে। এ বিষয়টি পাশের দোকানের ব্যবসায়ী শিপন মিয়াসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীসহ এলাকার লোকজন অবগত আছেন। এ প্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার আবারও ঘটনাস্থলে গিয়ে সদর থানার এসআই আব্দুল মান্নান তদন্ত করেন। এসময় পুলিশ আব্দুল আলীর সাথে কথা বলেন। আব্দুল আলী জানান, এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। তারা কারো প্ররোচনায় পড়ে হাসানকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। এছাড়াও পুলিশ ব্যবসায়ী শিপন মিয়াসহ বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীসহ আগত লোকজনের সাথে কথা বলেন। শিপন মিয়াসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা জানান, নিহত জেসমিনের পরিবার হাসানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট। তারা লোভে পড়ে হাসানাকে ফাঁসানোর জন্য তার বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ তুলেছেন। আমরা ব্যবসায়ীসহ এলাকাবাসী এর সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের দাবি জানাচ্ছি।
এলাকাবাসীরা জানান, ইতিপূর্বে নিহত জেসমিন আরো ২/৩বার বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। এছাড়াও তার বাবা-মা তাকে অতিরিক্ত মোবাইলে কথা বলাসহ তুচ্ছ বিষয় নিয়ে প্রায় সময় মারধোর ও গালিগালাজ করেন। ওই দিন তার মা-বাবার গালি-গালাজ ও মারধোরের কারণেও জেসমিন আত্মহত্যা করতে পারে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ছুরতহাল রিপোর্টে মেয়েটির গলায় কোন ফাঁস লাগানোর চিহ্ন নেই এবং শরীরের কোন স্থানে আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে মেয়েটি আত্মহত্যা কিংবা স্ট্রোক করে মারা যেতে পারে। জেসমিনের লাশের ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকরা জানান, তার গলায় কিংবা শরীরে কোন ধরনের আঘাতের চিহ্ন নেই। গলায় ফাঁস লাগিয়ে মারা গেলে দাগ থাকবে। এ ধরণের কোন চিহ্ন মেয়েটির গলায় নেই। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তবে ময়না তদন্তের চুড়ান্ত রিপোর্ট আসলে নিশ্চিত হওয়া যাবে মেয়েটি কি-ভাবে মারা গেছে। এদিকে হাসানের দোকান থেকে বিকাশে জেসমিন যে নাম্বারে টাকা পাঠিয়েছে সেই নাম্বারের কললিস্ট দেখার জন্য দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হবিগঞ্জ সদর (সার্কেল) মোহাম্মদ খলিলুর রহমান জানান, মেয়েটি কিভাবে মারা গেছে, তা ময়না তদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যাবে না।