বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের নানা কর্মসূচি

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের এই দিনে হত্যা করা হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাযজ্ঞ চালায়। দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাসে দিনটি কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ইতিহাসবিদরা মনে করেন, তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানিরা পরাজয় বুঝতে পেরে জাতিকে মেধাশূন্য করতে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছে। পাকিস্তানি সেনাদের এদেশীয় দালালরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার প্রথিতযশা ব্যক্তিদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। বিজয়ের স্বাদ গ্রহণের আগে নিদারুণ যন্ত্রণা দিয়ে রাজধানীর রায়েরবাজার ও মিরপুরের বধ্যভূমিতে নিয়ে তাদের গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
দেশের মুক্তির জন্য রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়তে বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুজিবনগর সরকার গঠন, বিভিন্ন এলাকাকে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করে সেক্টরপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব প্রদান, বাংলাদেশের প্রথম সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ে বুদ্ধিজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন হবিগঞ্জ। জেলা প্রশাসন গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ হওয়া বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে সকাল ১০টায় দুর্জয় হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ হবিগঞ্জে পুষ্পস্তবক অর্পন, সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা, সুবিধাজনক সময়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে সকল মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং সুবিধাজনক সময়ে সকল মন্দির, গীর্জা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন, সন্ধ্যায় দুর্জয় হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ হবিগঞ্জে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হবে। তাছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে হবিগঞ্জ জেলার সকল স্থানীয় পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক রশীদুল হাসান, ড. আবুল খায়ের, ড. মুর্তজা, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এসএ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভিনসহ অনেকে।