হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ছেলের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রাজিউড়া ইউনিয়নের বালিকান্দি গ্রামে মামলা তুলে নিতে হাজী আইয়ুব আলী নামে বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিকে খুন ও গুমের হুমকি দিচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৬টায় হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন ওই ব্যক্তির ছেলে মো. আব্দুল মালেক। এসময় হাজী আইয়ুব আলী ও তার আত্মীয় জুয়েল মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মো. আব্দুল মালেক বলেন- বালিকান্দি গ্রামের একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পরিবারের সাথে অন্যায় করছে। এসব অভিযোগে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আমরা বিভিন্ন আদালতে ৬টি মামলা করেছি। এর মধ্যে একটি মামলায় আদালত আমাদের পক্ষে আদেশ দিয়েছেন। অন্য মামলাগুলো বিচারাধীন আছে। সম্প্রতি মামলাগুলো তুলে নিতে বিরোধী পক্ষ আমার বাবা হাজী মো. আইয়ুব আলীকে খুন ও গুমের হুমকি দিচ্ছে। যে কারণে আমি ও আমার পরিবার খুবই শংকিত।
মৃত আফতাব উদ্দিনের ছেলে আব্দুল্লাহ মিয়া, আব্দুল করিম ওরফে মনা ও আব্দুল আহাদ, মৃত আব্দুল মতলিবের ছেলে মো. তৈয়ব আলী, তার ছেলে রুবেল মিয়া, মৃত মরম আলীর ছেলে রাসেল মিয়া ও সোহেল মিয়া, হাজী ইছাক মিয়া ওরফে ছাবু মিয়ার ছেলে মাহফুজ মিয়াসহ আরো কয়েকজন আমাদের ক্রয়কৃত ভূমি দখল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। যে কারণে গত বছরের ২৯ মার্চ আমার বাবা হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক এই মামলায় আমাদের পক্ষে রায় দেন। এছাড়াও ২৯/০৩/২০২৩ তারিখে রাতের আঁধারে আমাদের দেড়শ গাছ কেটে ফেলে তারা। ঘটনাটি বিভিন্ন পত্রিকায় ফলাও করে রিপোর্ট করা হয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. ইয়াছিন আরাফাত চৌধুরী গত ১৯ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এই মামলায় আব্দুল্লাহ মিয়া ও আব্দুল করিম ওরফে মনাকে কারাগারে পাঠান আদালত। এই দুইজন কারাগার থেকে বেরিয়েই ৬ জুন আমাদের জমির মাটি কেটে ক্ষতিসাধন করেন। এই অভিযোগে হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আমার বাবা তিনজনকে আসামী করে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। বিচারক পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন। সদর থানার এসআই ওয়াহেদ গাজী মামলার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন মর্মে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু তারপরও ওই প্রভাবশালী মহলটি হুমকি দিতেই থাকে।
মো. আব্দুল মালেক লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন- গত ১২ জুলাই আমার বাবা বাড়ি থেকে বের হয়ে আব্দুল্লাহ মিয়ার বাড়ির সামনের রাস্তায় গেলে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা করে। আমার বাবা প্রাণ বাঁচাতে দৌঁড়ে পালিয়ে যান। এ ব্যাপারে আমার বাবা চারজনকে আসামী করে ১৬ জুলাই হবিগঞ্জ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরেকটি মামলা করেন। শুধু তাই নয়, গত ২ আগস্ট আবারও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমার বাবাকে মারার জন্য তৈয়ব আলী, রুবেল মিয়া, রাসেল মিয়া ও কাজল মিয়া হামলা করেন। আমার বাবা কোনক্রমে হামলা থেকে বেঁচে যান। এই ঘটনার পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (০১) আদালতে আমার বাবা বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন। এরপর ১১ জুলাই হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আমার বাবা সাতজনকে আসামী করে একটি মামলা করেন।
মো. আব্দুল মালেক অভিযোগ করে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন- আমরা নিরীহ হওয়ায় আমাদের ক্রয়কৃত ভূমি দখল করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আইনের দ্বারস্থ হয়ে উপরোক্ত মামলাগুলো দায়ের করতে হয়। বর্তমানে এসব মামলা তুলে নিতে আমার বৃদ্ধ বাবা হাজী মো. আইয়ুব আলীকে হত্যা ও গুমের হুমকি দিচ্ছে আসামীরা। এছাড়াও ওই প্রভাবশালী লোকজন আমাদের বসতবাড়ির দুইদিকে বেড়া দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এরা এতই প্রভাবশালী যে, তাদের বিরুদ্ধে এলাকার কেউ কথা বলতে চায় না। বাড়িতে শুধু আমার বৃদ্ধ বাবা ও মা বাস করছেন। আমি জীবিকার কারণে পরিবার নিয়ে হবিগঞ্জ শহরে বাস করি। আমার ছোট ভাই পরিবার নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাইতে রয়েছেন। দুই বোন শ্বশুরালয়ে আছেন। যে কারণে আমাদের বৃদ্ধ পিতা ও মাতাকে নিয়ে আমরা খুবই দুশ্চিন্তায় সময় কাটাচ্ছি।