হবিগঞ্জ আদালতে কঠোর নিরাপত্তায় কারাবন্দি জি কে গউছের হাজিরা
স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২০১৫ সালে পুলিশের দায়েরকৃত একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়েছেন কারাবন্দি বিএনপি নেতা আলহাজ্ব জি কে গউছ। গতকাল বুধবার সকাল ১১টার সময় হবিগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে জি কে গউছকে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাকির হোসাইনের আদালতে হাজির করা হয়।
এদিকে সকাল থেকেই আদালত পাড়ায় ছিল নজীরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রতিটি প্রবেশ পথে পুলিশ ব্যারিকেড তৈরী করে সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ করে দেয়। অনেক আইনজীবিকে প্রবেশ করতে দেয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়াও জজকোর্টের প্রবেশ পথেও পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে মানুষের চলাচল সীমিত করে দেয়। এতে বিচারপ্রার্থী মানুষকে চরম বিড়ম্ভনায় পড়তে হয়।
এ ব্যাপারে জি কে গউছের আইনজীবি আফজাল হোসেন বলেন- বুধবার ছিল বিএনপি নেতা আলহাজ্ব জি কে গউছের নিয়মিত হাজিরা। এ জন্য সকাল থেকেই পুলিশ আদালতের প্রবেশমুখে ব্যারিকেড তৈরী করে মানুষের চলাচল বন্ধ করে দেয়। কারণ জি কে গউছ বিএনপির জাতীয় পর্যায়ের একজন নেতা। উনি আদালতে এলে হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আসেন একনজর দেখার জন্য। জি কে গউছকে মানুষের দৃষ্টির আড়ালে রাখতেই নিরপত্তার নামে পুলিশ আদালতের প্রবেশমুখে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। একজন রাজনৈতিক নেতার সাথে এমন আচরণ নজীরবিহীন। এমনটি করে মানুষের হৃদয় থেকে জি কে গউছকে মুছে ফেলা যাবে না।
তিনি আরও জানান- ২০১৫ সালে হবিগঞ্জ কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় বিএনপি নেতা জি কে গউছকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় কাল্পনিক মিথ্যা অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে হবিগঞ্জ সদর থানা পুলিশ। এই মামলায় সোমবার ধার্য্য তারিখ থাকায় জি কে গউছকে আদালতে হাজির করা হয়।
জানা যায়, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় হবিগঞ্জ কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে নিজ কক্ষে ফিরার পথে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও টানা ৩ বারের নির্বাচিত হবিগঞ্জ পৌরসভার পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাত করে একাধিক খুনের মামলার আসামী যুবলীগ কর্মী ইলিয়াছ মিয়া ওরফে ছোটন।
এ ঘটনায় হবিগঞ্জ কারাগারের জেলার মো. শামীম ইকবাল বাদী হয়ে হামলাকারী ইলিয়াছকে একমাত্র আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার এসআই সাহিদ মিয়া। আদালত ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে গত ২০ জুলাই হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল আলীম রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সন্ত্রাসী ইলিয়াছকে দেড় বছরের কারাদন্ডের আদেশ দেন। ইলিয়াছ শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার দাউদনগর গ্রামের সালেহ আহাম্মদ কনার পুত্র।
অপরদিকে একই ঘটনায় হবিগঞ্জ সদর থানার এসআই সানা উল্লা বাদী হয়ে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগের ভিত্তিতে উল্টো জি কে গউছকে আসামী করা হয়। মামলাটি দীর্ঘ ৮ বছর যাবত তদন্তাধীন রয়েছে। দীর্ঘ দিন পর এই মামলায় জি কে গউছকে গ্রেফতার দেখাতে আদালতে আবেদন করেন মামলার আইও (সদর থানার ওসি তদন্ত) বদিউজ্জামান। গত ৫ সেপ্টেম্বর শুনানী শেষে আদালত জি কে গউছকে এই মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখাতে আদেশ দেন। একই সাথে তাকে ডিভিশন-১ (প্রথম শ্রেণীর বন্দির মর্যাদা) দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেন।
এরআগে গত ২৯ আগস্ট রাত ৭টার দিকে হাইকোর্ট এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ জি কে গউছকে আটক করে। ৩০ আগস্ট ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে ঢাকা সিএমএম কোর্টে হাজির করা হয়। একই সাথে ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই পবিত্র ঈদের দিন হবিগঞ্জ কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় জি কে গউছকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় দায়েরকৃত একটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন ডিবির কোতয়ালী জোনাল টিমের উপ পরিদর্শক আফতাবুল ইসলাম। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদের আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড শেষে গত ২ সেপ্টেম্বর একই আদালতে হাজির করে আবারও ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত রিমান্ড না মঞ্জুর করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর জি কে গউছকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে হবিগঞ্জ কারাগারে নিয়ে আসা হয়।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান চৌধুরী জানান- গত ১৯ আগস্ট বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচী বিএনপির পদযাত্রায় নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলি বর্ষণ করে। এ নিয়ে পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় সদর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে আলহাজ্ব জি কে গউছকে প্রধান আসামী করে ১২শ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ২টি মামলা দায়ের করা হয়।
পরের দিন ২০ আগস্ট বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছের বাস ভবন এবং জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আওয়ামীলীগ অতর্কিত হামলা ও ভাংচুর করে। খবর পেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে প্রতিরোধ গড়ে তুললে আওয়ামীলীগের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহি বাদী হয়ে ২ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
এই ৩টি মামলার আসামীদের জামিন করতে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা আলহাজ্ব জি কে গউছ গত ২৯ আগস্ট হাইকোর্টে যান। হাইকোর্ট জি কে গউছ সহ বিএনপির ১৮৩ নেতাকর্মীর ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। জামিন পেয়ে ২৯ আগস্ট রাত ৭টার দিকে বাসায় ফিরার পথে হাইকোর্ট এলাকা থেকে আলহাজ্ব জি কে গউছকে আটক করে নিয়ে যায় ঢাকার ডিবি পুলিশ।