সুমন আহমেদ বিজয় ॥ প্রতিরক্ষা বাঁধ না থাকায় লাখাই উপজেলার পশ্চিম বুল্লা গ্রামের নদী তীরবর্তী অর্ধশতাধিক বসত বাড়ি ও কবরস্থান সুতাং নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। শেষ সম্ব^ল বাপ দাদার ভিটে মাটি ও বসত বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে অর্ধশতাধিক পরিবার। এক সময় সুতাং নদীর পাড়ে অনেক মানুষের ঘর বাড়ি ছিল। কিন্তু কালের আবর্তে সুতাং নদীর ভাঙ্গনের কারণে অনেক পরিবারই তাদের বাপ দাদার পৈত্রিক বসতবাড়ি হারিয়ে আজ দিশেহারা। অবশিষ্ট যে বসতবাড়ি ও কবরস্থান আছে সেই অংশটুকুও আগামী বর্ষা মৌসুমেই বিলিন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী।
সরেজমিনে দেখা যায়, লাখাই উপজেলার বুল্লা ইউনিয়নের পশ্চিম বুল্লা গ্রামের নদী তীরবর্তী অর্ধ শতাধিক ঘরবাড়ি নদী ভাঙ্গনের কারণে ঠিক যেন শূন্যের উপর দাঁড়িয়ে আছে এবং পশ্চিম বুল্লা কবরস্থানও নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। তাছাড়া অনেক ঘর-বাড়ি ইতোমধ্যে নদী গর্বে বিলীন হয়ে গেছে। সুতাং নদীর ভাঙ্গনের ফলে হতদরিদ্র মানুষগুলো তাদের সহায় সম্বল হারিয়ে যাযাবরের মতো আজ এখানে তো কাল অন্য স্থানে বসবাস করে আসছেন। কেউ কেউ তাদের একমাত্র অবলম্বন ঘর-বাড়ি হারিয়ে সামান্য কৃষি জমি, গরু-বাছুর বিক্রি করে অন্য জায়গায় অনেক বেশি মূল্যে বসতভিটা ক্রয় করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আবার অনেকেই আর্থিক অনটনে নিজস্ব বসতভিটা ক্রয় করতে পারছেন না। তাই নদী ভাঙ্গন কবলিত স্থানে অবশিষ্ট ঘরবাড়িতে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন।
নদীপাড়ের রওশন মিয়া নামে এক ব্যক্তি জানান, প্রতি বছর বর্ষা আসলে বাঁশ ক্রয় করে বস্তার মধ্যে মাটি ভরে নিজেদের বাড়ি রক্ষার জন্য হাজার হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। তিনি সরকার ও প্রশাসনের কাছে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করার জোর দাবী জানান।
জাকারিয়া নামে এক ব্যক্তি জানান, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করার জন্য একাধিকবার মাপজোক করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অনেক বছর আগে কবরস্থানের অংশে একটি প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেই প্রতিরক্ষা দেয়ালও ভেঙ্গে গেছে।
হবিগঞ্জ-সরাইল আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ঐতিহ্যবাহী পশ্চিম বুল্লা গ্রামটি অবস্থিত হলেও বছরের পর বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও সুতাং নদীর ভাঙ্গন রোধে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো পুনর্বাসন করার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পশ্চিম বুল্লা গ্রামের সর্বস্তরের জনগণের প্রাণের দাবী অতি দ্রুত গ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে পশ্চিম বুল্লা কবরস্থান ও পশ্চিম বুল্লা গ্রামকে সুতাং নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা।
বুল্লা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খোকন চন্দ্র গোপ জানান, উপজেলা মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় পশ্চিম বুল্লা গ্রামের বসত-বাড়ি ভাঙ্গনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করবো এবং হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট মোঃ মুশফিউল আলম আজাদ এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা সুলতানার সাথে আলাপ করে হাওর উন্নয়ন প্রকল্প অথবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে পশ্চিম বুল্লা গ্রামের নদী পাড়ের মানুষদের দীর্ঘদিনের সমস্যা নদী ভাঙ্গন রোধে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা সুলতানা জানান, আপনার মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হয়েছি। আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার সাথে আলাপ করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে পশ্চিম বুল্লা গ্রামের নদী পাড় পরিদর্শন করে অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।