ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাবার ৮ দিন পর আজমিরীগঞ্জের ইমনের পরিচয় পেয়েছে পুলিশ ॥ হিমাগার থেকে লাশ নিয়ে আসছেন স্বজনরা
এসএম সুরুজ আলী ॥ রাজধানী ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ৮ দিন পর হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের ইমদাদুল হক ইমন এর পরিচয় খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। নিহতের ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র বের করে তার সন্ধান পায় পুলিশ। নিহত ইমদাদুল হক ইমন (৩৫) শরীফনগর গ্রামের শামছুদ্দিনের ছেলে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ৫ এপ্রিল মহাখালী রেলক্রসিং এলাকায় একটি প্রাইভেটকার ইমনকে চাপা দিয়ে ফেলে যায়। এতে গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ইমন। পরে খবর পেয়ে রাজধানীর কাফরুল থানার এসআই রবিউল আলম লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। দিনভর অপেক্ষা করার পর নিহতের স্বজনদের কোন সন্ধান না পাওয়ায় রাতে পুলিশ তার পরিচয় চিহ্নিত হওয়ার জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয় লাশ। এদিকে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে নিহতের বর্তমান ঠিকানা ঢাকা পল্লবী এলাকা পাওয়া যায়। কিন্তু পল্লবী এলাকায় পুলিশ খোঁজাখুজি করে তার কোন স্বজনের সন্ধান পায়নি।
পরবর্তীতে এনআইডি থেকে তার স্থায়ী ঠিকানা আজমিরীগঞ্জ বের করা হয়। কিন্তু গ্রামের নাম না থাকায় পুলিশ গতকাল মঙ্গলবার সকালে আজমিরীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি নূরুল ইসলামকে ফোন করে। পরে আজমিরীগঞ্জ থানায় ছবি পাঠালে ইমনের পরিবারের সদস্যরা থানায় গিয়ে মরদেহটি শনাক্ত করেন। পুলিশে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় নিশ্চিত হয় নিহত ইমনের গ্রাম শরীফনগর এবং তিনি শামছুদ্দিনের ছেলে। এর পরপরই নিহতের স্বজনরা লাশ বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য ঢাকা রওয়ানা দেন।
লাশ উদ্ধারকারী রাজধানীর কাফরুল থানার এসআই রবিউল আলম দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গতকাল মঙ্গলবার রাতে নিহতের ভাই জিয়াউল হকসহ তার স্বজনদের কাছে রাত ১২টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমাগার থেকে লাশ হস্তান্তর করা হয়। পরে তারা লাশ ধুয়ে গাড়ীতে তুলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। তিনি বলেন- তার স্বজনরা জানিয়েছেন নিহত ইমন প্রায় ১৪/১৫ বছর ধরে নিখোঁজ ছিলেন। তাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করে তারা পাননি। এক পর্যায়ে তারা হতাশ হয়ে খুঁজে পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু অবশেষে পরিবার তাকে পেয়েছে ঠিকই কিন্তু জীবিত নয়, মৃত।
এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নূরুল ইসলাম জানান, প্রায় এক সপ্তাহ আগে ইমন ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। কাফরুল থানা পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গের হিমাগারে রাখেন। গতকাল ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে নিহতের এনআইডি কার্ড বের করে পরিচয় পান। তবে তার গ্রাম কোথায় এনআইডিতে উল্লেখ না থাকায় তারা আমাকে ফোন করেন। পরবর্তীতে আমি সাংবাদিকদের সহযোগিতা নিয়ে তার পরিবারের সন্ধান খুঁজে বের করি।
সূত্র জানায়, ইমন প্রায় ১৫ বছর আগে অভিমান করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়ে আর ফেরেনি। এরপর তার মা ছেলেকে খুঁজেছেন অনেক জায়গায়। কিন্তু ছেলে আর বাড়ির খোঁজ রাখেনি। স্বজনদের সাথেও যোগাযোগ রক্ষা করেনি।