আত্মগোপনে থাকা স্বামীকে খুঁজছে পুলিশ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লুকড়া ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের স্ত্রীকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজাতে গিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন স্বামী শামীম মিয়া। এ ঘটনায় জড়িত ঘাতক স্বামী শামীম মিয়াকে গ্রেফতার করতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, চানপুর গ্রামের আনফর মিয়ার কন্যা জুয়েলা বেগমকে (৩০) প্রায় ১৩ বছর পূর্বে একই গ্রামের আব্দুস শহীদের ছেলে শামীম মিয়া (৩৫) এর কাছে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর তাদের দাম্পত্য জীবন কয়েক বছর সুখেই কাটছিল। এর মধ্যে রাকিব মিয়া নামের এক পুত্র সন্তান, মিম আক্তার ও মিক আক্তার নামের আরো ২ জন কন্যা সন্তানের জন্ম হয় জুয়েলা বেগমের গর্ভে। বর্তমানে রাকিবের বয়স ৯, মিম আক্তার এর ৭ ও মিক আক্তার এর বয়স ৫ বছর। তাদের এই সুখের সংসারে হঠাৎ করে দুঃখের আগুন জ্বলে উঠে। পারিবারিক দরিদ্রতার কারণে শামীম জুয়েলাকে তার পিত্রালয় থেকে অর্থ এনে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এর মধ্যে কয়েক দফা টাকা এনে দেয় জুয়েলা। কিন্তু শামীম তার পিছু ছাড়েনি। সর্বশেষ রবিবার দুপুরে আবারও শামীম মিয়া বিদেশ যাওয়ার জন্য জুয়েলাকে তার বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এ সময় জুয়েলা তার বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে অস্বীকার করলে তার উপর নির্যাতন শুরু করে শামীম মিয়া। এ বিষয়টি জুয়েলা তার পরিবারের সদস্যদের অবগত করে। রাতে আবারও এ নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে শামীম মিয়া জুয়েলাকে বেধড়ক মারপিট করে এবং জুয়েলার মুখে বিষ ঢেলে দেয়। পরে এ খবর পেয়ে তার পরিবারের লোকজন শামীম মিয়ার বাড়িতে গিয়ে জুয়েলাকে উদ্ধার করে আড়াইশ শয্যা বিশিষ্ট হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সোমবার জুয়েলার লাশের ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। বিকেলে নিহত জুয়েলার লাশের দাফন সম্পন্ন করা হয়। নিহত জুয়েলার ভাই শাহীন মিয়া জানান, আমার বোনকে মারধোর করে মুখে বিষ ঢেলে দিয়েছে তার স্বামী। বিষয়টি আমার ভাগ্নি মিম জানিয়েছে। আমার বোনকে হত্যার পর নিজে বাঁচার জন্য তার স্বামী আত্মহত্যার নাটক সাজাতে চেয়েছিল। আমি আমার বোন হত্যার বিচার চাই। এদিকে গতকাল চানপুর গ্রামে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই অজিত। তিনি জানান, নিহতের লাশের ছুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করতে গিয়ে কানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়াও নিহতের স্বজনরা বলছেন তাকে মারধোর করার পর মুখে বিষ দিয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছে এটি হত্যাকান্ড। তিনি বলেন- আমরা এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছি। একটি সূত্র জানায়, ঘটনার পরই নিহতের স্বামী আত্মগোপন করে। তাকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ অব্যাহত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।