টাকা তোলার জন্য ব্যাংকগুলোর সামনে মানুষের দীর্ঘ লাইন ॥ শহরে অসহনীয় যানজট ॥ জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে

এসএম সুরুজ আলী ॥ আগামী ১৪ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় আবারও লকডাউন দেয়া হবে এমন ঘোষণার পরপরই হবিগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। হাট বাজারগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়ে হবিগঞ্জ শহরে দিনভর ছিল যানজট। সেখানে কোন ধরণের স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সামনের লকডাউন ও আসন্ন পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয় করেছেন প্রয়োজনীয় তুলনার চেয়ে অধিক। এ কারণে ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। গতকাল সকালে হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজারের মুদিমালের দোকান ও কাঁচামাল হাটায় গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। ক্রেতারা কাঁচামাল ও মুদির দোকান থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করছেন।
হবিগঞ্জ শহরের পুরান মুন্সেফী এলাকার নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক মহিলা জানান, সকালে ব্যাংকে গিয়েছিলাম। সেখানে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা উত্তোলন করেছি। পরে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে গিয়েও দোকানে মানুষের ভিড়ে পড়তে হয়েছে। তিনি বলেন- গতকাল ৫ কেজি পেয়াজ ৩৫ টাকা করে নিয়েছি। এর আগের সপ্তাহে পেয়াজ নিয়েছিলাম ৩০ টাকা কেজি। সোয়াবিন তৈল ৫ লিটারের প্যাকেট ৬৩০ টাকা দরে নিয়েছি। এছাড়াও অন্যান্য জিনিসপত্র আগের চেয়ে বেশি দামে ক্রয় করতে হয়েছে। বানিয়াচং উপজেলার আতুকুড়া গ্রামের শাহিদ মিয়া জানান, আগামী বুধবার থেকে পবিত্র রমজান শুরুর সম্ভাবনা। এই রমজান ও লকডাউনকে সামনে রেখে বাজার করতে এসেছি। বাজারে এসে দেখি পুরুষ ক্রেতাদের চেয়ে নারী ক্রেতারা বেশি এসেছেন। প্রচুর ভিড়ের মাঝে বাজার করতে হয়েছে। তিনি বলেন- এক সপ্তাহ আগে মোটা আলু ৫ কেজি ৮০/৮৫ টাকা দরে ক্রয় করেছি। গতকাল ৯৫ টাকা দিয়ে ৫ কেজি আলু কিনতে হয়েছে। এছাড়া ঝিঙ্গা ৪০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা কেজি দরে ক্রয় করেছি। তিনি বলেন- মোটামুটি প্রত্যেকটি কাচামাল দামে ক্রয় করতে হয়েছে। তিনি বলেন-এমন পরিস্থিতি থাকলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আরো বাড়বে। বাজারে আসলে বুঝা যায়, মানুষ স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করছে। আমার সরকারের কাছে দাবি জানাবো, লকডাউন প্রত্যাহার করে মানুষ স্বাভাবিক ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করার সুযোগ করে দেন। তাহলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। উমেদনগরের কাচামাল ব্যবসায়ী রইছ আলী জানান, এখনো কাচামালের দাম পুরোপরিভাবে বাড়েনি। তবে এ পরিস্থিতি থাকলে রমজানে কাচামালের দাম আকাশ চুম্বি হবে। কারণ লক ডাউনে ব্যবসায়ীরা আগের মত কাচামাল পাইকারী ক্রয় করতে পাড়ছেন না। যারা ক্রয় করছেন তারা আগের চেয়ে ডাবল ভাড়া দিয়ে আনতে হচ্ছে। ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন জানান, গতকাল শহরের মানুষের উপস্থিতি দেখা বুঝা গেছি যেন লক ডাউন নেই। সারাদিন রাস্তাগুলো যানজট লেগে ছিল। তিনি বলেন- এই লকডাউনের কারণে সাধারণ মানুষকে যাতায়াতে ডাবল ভাড়া দিতে হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত যাতায়াতকারী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সাধারণ মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, এজন্য পরিবহন ভাড়া কমাতে হবে এবং লকডাউন প্রত্যাহার করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে আতঙ্কের কেনাকাটা বা প্যানিক বায়িং শুরু হয়ে গেছে। মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বাজারে ভিড় করছে। কেউ কেউ একসঙ্গে বাড়তি পরিমাণ পণ্য কিনে ঘরে ফিরছেন। লকডাউন পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনেক মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মজুদ শুরু করেছেন। নগরীর শপিং মলগুলোতেও লোকজনের প্রচন্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। লকডাউনের খবরে ঈদের কেনাকাটাও সেরেছেন কেউ কেউ। গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শহরের চৌধুরী বাজার, শায়েস্তানগর বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে ক্রেতাদের বাড়তি ভিড় দেখা যায়। বেশিরভাগ মানুষ সংসারের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ ও আলু কিনছিলেন। কেউ কেউ সাতদিন কিংবা পনের দিনের জন্য পরিবারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। হঠাৎ বাজারে ক্রেতার চাপ বেড়ে যাওয়াতে চাল, ডালসহ বিভিন্ন ধরনের নিত্য পণ্যে কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা করে বেশি নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, লকডাউনের খবরে দোকানে ক্রেতা বেড়েছে। হয়তো ক্রেতারা মনে করছেন এখন এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন দেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে আরও বাড়তে পারে। এ পরিস্থিতিতে লোকজন বাড়িতে মজুদ শুরু করেছে।