আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীরা কে কি সিদ্ধান্ত নিলেন

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন চুড়ান্ত করা হয়েছে। গতকাল শনিবার কেন্দ্র থেকে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। নাম ঘোষণার পর পরই দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে আনন্দের বন্যা দেখা দেয়। নিজের পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ায় তাঁর পক্ষে শহরে আনন্দ মিছিল করেছেন কর্মী সমর্থকরা।
হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় পদে মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগের ৮ প্রার্থী ঢাকার ধানমন্ডিস্থ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এবং বিএনপির ৫ প্রার্থী বিএনপির চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছিলেন। গতকাল শনিবার কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় একক প্রার্থী হিসেবে জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম এবং বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে অ্যাডভোকেট এনামুল হক সেলিমের নাম ঘোষণা করা হয়। এর পরই দলীয় নেতাকর্মী ও শুভাকাক্সক্ষীদের মাঝে দেখা দেয় আনন্দের বন্যা।
হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় একক প্রার্থী মনোনয়নের জন্য হবিগঞ্জ থেকে ৯ জনের তালিকা কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়েছিল। তাঁরা হলেন (আওয়ামী লীগ প্রেরিত তালিকার ক্রমানুসারে) হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, হবিগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র মোঃ মিজানুর রহমান মিজান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মর্তুজ আলী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সৈয়দ কামরুল হাসান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং জেলা আওয়ামী লীগ নেতা একেএম নুর উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য শংখ শুভ্র রায়, জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ নুরুল আমিন ওসমান ও পৌর আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শেখ তারেক উদ্দিন সুমন।
গতকাল হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিমকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হলে মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্যদের প্রতিক্রিয়া জানতে দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়।
আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জানান, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে দলীয় সভানেত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে আমার কোন সিদ্ধান্ত নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে আমি এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেইনি। আমি আমার কর্মী, সমর্থক, শুভাকাক্সক্ষী ও নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।
পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র অংশ নিবেন বলে জানিয়েছেন। গতকাল দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ থেকে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন- বিগত সময়ে মেয়র নির্বাচিত হয়ে আমি হবিগঞ্জ পৌরসভার অনেক উন্নয়ন করেছি। পৌরবাসীর সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহন করবো। গতকাল শনিবার রাতে তাঁর কর্মী-সমর্থকরা তাঁকে নিয়ে হবিগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কে মিছিল করেছে। প্রসঙ্গত, মেয়র মিজান গত উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত সৈয়দ কামরুল হাসান তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, নৌকা যার আমরা তার। দলীয় সভানেত্রী যাকে দলীয় প্রতীক নৌকা দিয়েছেন তাকে আমি আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই। যেহেতু নেত্রী আওয়ামী লীগের দলীয় লোককে মনোনয়ন দিয়েছেন তাই আমাদেরকে আওয়ামী পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিতে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, বিগত উপ-নির্বাচনে দলীয় লোককে মনোনয়ন না দেয়ায় আমরা অনেকেই প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। যেহেতু এবার দলীয় লোককে প্রার্থী দেয়া হয়েছে তাই এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত একেএম নুর উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল বলেন, নৌকা যার, আমি তার। দলীয় সভানেত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তার পক্ষে আমি কাজ করবো। নৌকার বিজয় নিশ্চিতে আমি সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানাই।
আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী শংখ শুভ্র রায় তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন আমি তাকে স্বাগত জানাই। আমি দলের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমি শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করার আহবান জানাই।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত মোঃ নুরুল আমিন ওসমান তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা কেন্দ্রে নাম প্রেরণের পূর্বেই ওয়াদা করেছিলাম দলীয় সভানেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষে কাজ করবো। সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবো। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত শেখ তারেক উদ্দিন সুমন বলেন, আমি নির্বাচন করবো কি না তা এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। আমি আমার গ্রাম, কর্মী সমর্থক এবং এলাকাবাসীকে নিয়ে বসে আলোচনাক্রমে সিদ্ধান্ত নেব। তাই এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারবো না।
অপরদিকে, বিএনপি মনোনীত দলীয় মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট এনামুল হক সেলিম তার মনোনয়ন প্রাপ্তিতে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, হবিগঞ্জ পৌরবাসী যদি তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করে তাহলে আমি গতানুগতিকের বাইরে গিয়ে জনগণের হয়ে কাজ করবো। হবিগঞ্জ পৌরবাসীর সমস্যা সমাধানের জন্য আধুনিক ও সার্বক্ষণিক অর্থাৎ ২৪ ঘন্টা সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিতে কাজ করবো। আমি নির্বাচিত হলে পৌরবাসী যে কোন সমস্যায় যেন পৌরসভার কাছ থেকে তার কাক্সিক্ষত সেবা পায় সে ব্যাপারে দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই ব্যবস্থা গ্রহণ করব। হবিগঞ্জের মৃতপ্রায় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করতে দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিশু কিশোরদের চিত্ত বিনোদনের জন্য পৌর পরিষদকে সাথে নিয়ে কার্যকরি উদ্যোগ নেয়া হবে। যেহেতু পৌরসভার আকার এবং জনসংখ্যা বেড়েছে তাই পৌর নাগরিকদের কল্যাণে শহরের বিভিন্ন কর্ণারে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র চালু করা হবে। যাকে পৌর নাগরিকরা সহজেই সেবা গ্রহণ করতে পারেন। সর্বোপরি নাগরিক সুবিধাকেন্দ্রীক পৌরসভা গড়ে তোলা হবে। শুধু তাই নয় হবিগঞ্জের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেকোন মূল্যে রক্ষা করা হবে।
বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত এম ইসলাম তরফদার তনু তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, দলীয় হাই কমান্ড দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এর বাইরে যাওয়ার এখতিয়ার আমার নেই। তবে যেহেতু ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়ন পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে সেহেতু আমি আশাবাদী। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করতে পারি।
মনোনয়ন বঞ্চিত মিয়া মোঃ ইলিয়াছ তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, যেহেতু রাজনীতি করি তাই দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার এখতিয়ার নেই। দলীয় সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আপনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে তা বলা যাচ্ছে না। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। তাই দলীয় সিদ্ধান্তকে আমি শ্রদ্ধা জানাই।
বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত সৈয়দ মুশফিক আহমেদ তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সাংগঠনিক সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এর বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে দল যদি প্রার্থী পরিবর্তন করে এবং আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। এ প্রসঙ্গে তিনি চুনারুঘাটের উদাহরণ দেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল বলে জানান।
বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত শাহ রাজীব আহমেদ রিংগন তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, কিন্তু দলীয় যে কোন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে আমরা প্রস্তুত। এই নির্বাচন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নির্বাচন। ইনশাল্লাহ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে বিজয় নিশ্চিত করবো।