অফিস সহায়ক রেজাউল করিম ফার্মাসিস্ট ও চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করছেন
জামাল মোঃ আবু নাছের ॥ হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে দেড় বছর ধরে চিকিৎসক নেই। এছাড়া উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার পদটি শূন্য রয়েছে বিগত দুই বছর ধরে নেই ফার্মাসিস্ট। এতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা একমাত্র অফিস সহায়কই সেবা দিচ্ছেন রোগীদের।
সরজমিনে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় মেডিক্যাল অফিসার ও উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসারের দরজায় তালা ঝুলছে। রোগীরা ভিড় করছেন ঔষধ প্রদানকারীর কক্ষের দরজায়। দায়িত্বে থাকা একমাত্র অফিস সহায়ক রেজাউল করিম সেবা দিচ্ছেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসা রোগীদের।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের আগস্ট মাস থেকে মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ বিশাখা মাসুক বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার ইমলাক আহমেদ ২০১৮ সালে এলপিআরএ চলে যান। সর্বশেষ ২০২০ সালে এলপিআরে যান একমাত্র ফার্মাসিস্ট আলাউদ্দিন। এর পর থেকে একমাত্র অফিস সহায়ক রেজাউল করিমই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের রোগীদের সেবা দেওয়ার দায়িত্বে আছেন।
নোয়াপাড়া ইউনিয়নের বেঙ্গাডোবা গ্রামের মৃত ময়ব আলীর স্ত্রী ফজিলা খাতুন বলেন জ্বরে শরীর কাপছে, সাথে গলা ব্যাথা তাই হাসপাতালে আসছি ঔষধ নিতে। ডাক্তার না থাকায় তিনিই (অফিস সহায়ক) এখন আমাদের ডাক্তার।
অপরদিকে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে আছেন পরিদর্শিকা শিখা বণিক। তিনি বলেন সপ্তাহে ৬ দিন নোয়াপাড়া ও একদিন ছাতিয়াইন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এ দুই কেন্দ্রের দায়িত্ব আমাকে একাই পালন করতে হয়। শিখা বণিক বলেন নোয়াপাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতি মাসে ১৮ থেকে ২০ জন নবজাতকের নরমাল ডেলিভারী হয়। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় মমুর্ষ রোগীদের উপজেলা স্থাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করতে হয়। বিভিন্ন সময় বাচ্চা ডেলিভারীর পরে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়। কিন্তু ওই কেন্দ্রে চিকিৎসক না থাকায় মমুর্ষ রোগীরা বিপাকে পড়ে।
এছাড়া শিখা বণিক বলেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নাইট গার্ড নেই, দরজা জানালা ভাঙ্গা। রাতে ডেলিভারী রোগী আসলে একা একা ভয় পাই। ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে হয়।
নোয়াপাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা অফিস সহায়ক রেজাউল করিম বলেন প্রতিদিন শতাধিক রোগীকে সেবা দিতে হচ্ছে। জরুরী কাজে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়া হলে ওইদিন নোয়াপাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকে। চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি তিনি উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন।
নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোঃ জাবেদ বলেন, বৃহৎ শিল্পাঞ্চল এলাকা নোয়াপাড়া। প্রায় ৫০ হাজার লোকের বসবাস। এ ইউনিয়নের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক না থাকায় এলাকাবাসী সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। বিষয়টি আমি কয়েকবার উপজেলা সমন্বয় সভায় আলোচনা করেছি।
মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ইসতিয়াক মামুন বলেন- নোয়াপাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার তিন দিনের ছুটি নিয়ে ১১ মাস ধরে নিখোঁজ। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সব কার্যক্রম প্রস্তুত করা হচ্ছে। এছাড়া অন্য পদে নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত জনবল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।