বৈশ্বিক মহামারীতে গণমানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ!
এম, এ, আজিজ, লন্ডন থেকে

অদৃশ্য করোনাভাইরাস সংক্রমণে পৃথিবীময় আজ সকলে আক্রান্ত। ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী নির্বিশেষে সকলে ভূগছে একযোগে। দেশে দেশে, পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লা-মহল্লায়, গ্রামে-গঞ্জে করোনার হানা থেকে পিছনে পালাবার কোন পথ নেই খোলা। বিশ্বব্যাপী লাশের মিছিল বেড়েই চলেছে। ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় অযতেœ অবহেলায় পরে থাকে আপনজনের মৃতদেহ। ঘরে ঘরে স্বজন হারানোর আহাজারী। গণমানুষের হৃদয়ে ঘটেছে রক্তক্ষরণ। অদৃশ্য শত্রু করোনার আক্রমণে আচমকা মৃত্যু মানুষের সঙ্গী। তাই মৃতের সৎকারে আপনজনদেরকে রাখা হয় নিরাপদ দূরত্বে। অন্তরে চাপা দুঃখ, ক্ষোভ ও ব্যাথা নিয়ে মানুষ কিংকর্তব্যবিমুঢ়! জিজ্ঞাসাভরা চোখে নিঃশব্দে প্রত্যেকে চেয়ে থাকে প্রত্যেকের দিকে। করোনা সংক্রমণে মানুষের পরিকল্পনা তছনছ করে দিয়েছে। চলছে স্বপ্নের দূর্দিন। মহামারি অন্তরে রোপন করেছে হতাশা। সঞ্চারিত করছে দূঃখ, ব্যাথা আর ক্ষোভ পৃথিবীময় প্রতিটি মানুষের ধমনীতে। প্রশ্ন জাগে মনে মানুষের দাম এত কম কেন এই ধরনীতে !
করোনার উপদ্রপে সহসা বিশ্ব মোড়লগণ সব বাঁকরুদ্ধ। তাদের উৎপাদনের চাকা বন্ধ। আমদানী রফতানী হচ্ছে ব্যাহত। মরণ জেনেছে পরাশক্তি দেশ সমূহ পর্যুদস্ত। তাদের বৈজ্ঞানিক কৌশল পরাভূত। স্তব্ধ হয়ে গেছে সব অগ্রগতির ¯্রােত। তাই ধূর্তের মত আমাদের পিছে পিছে ছুটে চলেছে করোনার দাবানল। ধনীক-বণিক ও বৈজ্ঞানিকের আস্ফালন আজ বাকরুদ্ধ। কাঁপছে তাদের হৃদযন্ত্র। ছোট ব্যাবসায়ী, খুচরা বিক্রেতা ও শ্রমজীবী মানুষের চোখে মুখে হতাশার গ্লানি শিল্প উদ্যোক্তাগণ দিশাহারা। মরণ তাদের করছে তাড়া। অন্ধকার বিশ্ব ভ্রমান্ড। করোনার ছোবলে মানুষের জীবন পিষ্ট হতে দেখে অদৃষ্ট ভৎর্সনায় ক্লান্ত কাটে সকলের দিন আর রাত। নিঃশব্দে শ্বাস তাদের হয়ে আসছে ক্রমাগত ক্ষীণ। মানবতার কোন দোহাই মানেনা অদৃশ্য করোনা। মানুষের দোয়ারে মৃত্যু হানা দিয়েছে অতীতে বার বার। কখনো বিশ্ব মোড়লদের দখলদারিত্ব ও অধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে অস্ত্রবাজি তথা যুদ্ধ বিগ্রহের মাধ্যমে। বিশ্বব্যাপী নির্বিচারে হত্যা করেছে লক্ষ কোটি নারী-পুরুষ শিশুসহ নিরপরাধ মানুষকে। আবার কখনো কৃত্রিম উপায়ে রোগ-বালাই সৃষ্টি করে। কিন্তু করোনার আক্রমণ হচ্ছে নিঃশব্দে-নিরবে। মনে হচ্ছে যেন ঐশ্বরিকভাবেই এই মহামারীর সৃষ্টি। ফলে বিশ্ব মোড়লদের সব হিসাব নিকাশে ঘটেছে ব্যত্যয়। চলছে মানুষের স্বপ্নের দুর্দিন। দিনে দিনে মহামারি দেশ, জাতি ও মানুষের অন্তরে রোপন করেছে হতাশা আর ক্ষোভ। যা সঞ্চারিত করেছে পৃথিবীময় প্রতিটি মানুষের ধমনীতে।
তারপরও সচেতন সমাজ কর্মীগণকে ও গণমানুষকে আশাহত বা বাঁক রুদ্ধ হয়ে বসে থাকলে চলবে না। সামাজিক দায়বদ্ধতার আলোকে একে অপরের প্রতি বিপদে সহমর্মিতা, সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে। ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকার জন্য গণমানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির প্রত্যয়ে কাজ করতে হবে। কথায় বলে প্রত্যেক সুড়ঙ্গের শেষে আলো থাকে বা প্রতিটি মেঘ রূপালী আস্তরণে ঢাকা থাকে। তেমনি বিভীষিকাময় করোনাভাইরাস থেকেও বেঁচে থাকার কোন না কোন উপায় বেরুবে। দুঃসহ দিনের হবে অবসান। স্বপ্ন দেখি মানুষের বেঁচে থাকার আকাক্সক্ষার মুক্তি নয় অসম্ভব! যদিও দেখা যায়নি আলোর রশ্মি তবুও অনেক মৃত্যুর উত্তরণের শেষে সূচনা হবে দিনবদলের পালা। প্রতিক্ষায় আছি আবার গড়ে তোলা হবে বিশ্বময় নতুন সভ্যতা।
এম, এ, আজিজ
সমাজসেবক
লন্ডনঃ ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ইং