সংবাদ সম্মেলনে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী
পত্রিকায় বলা হয়েছে একাত্তর সালে ইঞ্জিনের নৌকা নিয়ে আক্রমণ করা হয়েছিল, তখনকার সময়ে ইঞ্জিনের নৌকা ছিল কি-না তা সকলেই জানেন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোঃ আলমগীর চৌধুরী বলেছেন দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকা আমার ভাই শওকত চৌধুরী শকুকে এবং আমার পিতাকে নিয়ে যে মিথ্যাচার করেছে তা নজিরবিহীন। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। তিনি বলেন- কেউ যদি আমাকে স্বাধীনতা বিরাধীর সন্তান ও আমার বড় ভাইকে অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত প্রমাণ করতে পারেন; তাহলে আমি যে কোন শাস্তি মাথা পেতে নেব। আমার বড় ভাই শওকত চৌধুরী শকু একজন সহজ-সরল মানুষ। এ ব্যাপারে আমার জন্মস্থান নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁওসহ হবিগঞ্জবাসী অবগত আছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি বালক ছিলেন এবং সিলেটে থাকতেন। তিনি এ ধরণের কোন ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন না। এমনকি যে শহীদদেরকে হত্যার কথা বলা হয়েছে; তাদের পরিবারের সদস্যরাও পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে বলেছেন আমার ভাই কিংবা পরিবারের কেউ এ হত্যাকান্ডে জড়িত না। এমনকি এলাকার শত শত মানুষ এ ব্যাপারে বিবৃতি প্রদান করেছেন। এলাকাবাসী পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন আমার বাবা শাহজাহান মিয়া চৌধুরী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। আমার ভাই শওকত চৌধুরী শকু দীর্ঘদিন আমেরিকায় থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। ১৯৬৯ সালে নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন আমার পিতা শাহজাহান মিয়া চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মরহুম আবুল ফাত্তাহ। আমার পিতা মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে বলিষ্ট ভূমিকা রেখেছেন। ফলে পাকিস্তানী বাহিনীর টার্গেট ছিল আমাদের বাড়ি। পাঞ্জাবীরা আমাদের বাড়িতে বোমা হামলাও করেছিল। তখন আমার পরিবারের লোকজন পালাতে গিয়ে আমার এক ভাই আবু নাছের চৌধুরী কুটি পানিতে ডুবে মারা যান। আমার ফুফাত ভাই আব্দুল মোছাব্বির চৌধুরী জিতু একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ভগ্নিপতি ও মামা ফজলুল রহমান চৌধুরী ১১নং সেক্টরে ভারতের ঢালু ক্যাম্পের ট্রেনিং ইনচার্জ ও আজমিরীগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রতিষ্ঠাকালীন কমান্ডার ছিলেন। মামাত ভাইও মুক্তিযোদ্ধা। আমার মামা ইউসুফ চৌধুরী ও মামাতো ভাই ইকবাল চৌধুরী খোকন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নিজের পরিবারের মুক্তিযোদ্ধাদের এই গৌরবগাঁথা ও ত্যাগ এবং আওয়ামী লীগের পরিবারে জন্ম হওয়ায় আমার প্রত্যেক ভাই ছাত্র জীবন থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর চেতনাকে লালন করে ও বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আনুগত্য থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরু করে। আমি ৩৯ বছর পূর্বে হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজ ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতি শুরু করি। এরই ধারাবাহিকতায় আমি ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেয়ার পর হবিগঞ্জ জেলায় শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সংগঠিত করেছি। পরবর্তীতে হবিগঞ্জে আমি জেলা যুবলীগের সভাপতি হয়ে এই সংগঠনকে সু-সংগঠিত করি। সফল যুব নেতা হিসাবে আমাকে কেন্দ্রীয় যুবলীগেরও কমিটিতে সদস্য রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে আমি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলরদের ব্যালটে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রামে দীর্ঘ ১০ বছর রাজপথে থেকেছি। এর পর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমাকে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী জননেতা ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির ধারাবাহিকতায় আমাকে নবীগঞ্জ উপজেলায় দুই দফা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রদান করা হয়। আমি জনগণের ভোটে সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম। আমার ছোট ভাই ইমদাদ চৌধুরী হবিগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিল। বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় সে আমেরিকার নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছে। আমার স্ত্রী মুসলিমা খানম শারমিন হবিগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে।
আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং রাজনৈতিক অগ্রযাত্রাকে থমকে দিতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার পিতা ও ভাইকে জড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। সংবাদে যে কথিত অভিযোগের কথা বলা হয়েছে সেই অভিযোগ আদৌ সত্য নয়। যাদেরকে হত্যার কথা বলা হয়েছে সেই শহীদ পরিবারের লোকজন আমাদের পরিবারের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন। আমার হবিগঞ্জের সংবাদের একটি অংশে ইঞ্জিনের নৌকা নিয়ে যে আক্রমণের কথা বলা হয়েছে তখনকার সময়ে আদৌ ইঞ্জিনের নৌকা ছিল কিনা তা সকলেই জানেন। মূলত সংবাদ প্রকাশের জন্য কৌশলে আমার বিরুদ্ধে কাজ করা কুচক্রী মহল এই কাল্পনিক অভিযোগ সৃজন করেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই অভিযোগ তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হবে এবং চক্রান্তের রহস্য উদঘাটন হবে। একজন সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেও একটি দরখাস্ত রিসিভ করিয়ে প্রমাণ হওয়ার পূর্বে এভাবে সংবাদ প্রকাশ করা দুঃখজনক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে আমি সবসময় রাজপথে থেকে আন্দোলন করেছি। রাজাকাররা আমার এলাকায় যে ৯ জনকে হত্যা করেছে আমি সেই হত্যার বিচার চাই। এই বিচারের জন্য আমার সবধরণের সহযোগিতা থাকবে। আমি ৩৯ বছর রাজনীতি করার পর এখন ব্যক্তি আলমগীর নই। আমার সাথে আমার প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি জড়িত। আমার দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে যারা এই সংবাদ প্রকাশ করছে তারা কিন্তু আওয়ামী লীগের ক্ষতির মিশন নিয়েই মাঠে নেমেছে। তারা বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে কোন সংবাদ প্রকাশ করে না। তাদের এই মিশনের বিরুদ্ধে আমার নেতাকর্মীরা স্বোচ্চার হয়ে যেভাবে বিবৃতি দিচ্ছেন এতে আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কিন্তু যারা আমার পক্ষে প্রকৃত সত্য তুলে ধরার কাজ করছেন তাদেরকে নিয়ে যেভাবে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে তাতে আমি বিস্মিত হয়েছি। সত্যিকারের একজন সাংবাদিকের এমন রুচি হওয়ার কথা নয়। আমার বিরুদ্ধে এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন বাজারে তাদেরকে নিয়ে অনেক কথা আমরা শুনছি। আমি প্রত্যাশায় রয়েছি সত্য একদিন উদঘাটন হবে এবং যারা আমার ও আমার দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন তারা আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ হবেন। আমি আলমগীর একদিনে সৃষ্টি হইনি। এভাবে কেউ আমাকে ধ্বংস করতে পারবে না। জনগণের ভালবাসায় আমার রাজনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা নুর উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল, মশিউর রহমান শামীম, অ্যাডভোকেট রোকন উদ্দিন তালুকদার, অ্যাডভোকেট আব্দুল মোছাব্বির বকুল, অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ, নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী, মোস্তফা কামাল আজাদ রাসেল, জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন চৌধুরী, হাবিবুর রহমান খান, ডাঃ ইশতিয়াক রাজ চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহী প্রমূখ।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com