এসএম সুরুজ আলী ॥ যতই দিন ঘনিয়ে আসছে জমে উঠছে হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। এই প্রচারণাকে কেন্দ্র করে পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডের পাড়া মহল্লায় পৌর ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে। চায়ের স্টলগুলোতে কে হবেন আগামী দিনের পৌরসভার অভিভাবক ও ওয়ার্ডগুলোর কাউন্সিলর এ নিয়ে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ। তবে পৌরসভার ভোটাররা অত্যন্ত সচেতন। তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চান। আজ দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকায় তুলে ধরা হলো- হবিগঞ্জ পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণা খবর।
হবিগঞ্জ পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা। এ ওয়ার্ডটি যশেরআব্দা, গরুর বাজার, খাদ্য গোদাম রোড, নরসিংহ আখড়া, বগলা বাজার, পুরান বাজার, কামড়াপুর, কুরিহাটি, দানিয়ালপুর, উমেদনগর শিল্প এলাকা, উমেদনগর আলগাবাড়ি ও উমেদনগর টাইটেল মাদ্রাসা এলাকার একাংশ নিয়ে গঠিত। এ ওয়ার্ডে ভোটার সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি। তবে এ ওয়ার্ডে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা দুর্বল থাকার কারণে ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকে। এর ফলে ওয়ার্ডবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়াও এ ওয়ার্ডে মদের পাট্টা থাকার কারণে মাদকসেবীদের আনাগোনা রয়েছে। এবার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও মাদকমুক্ত ওয়ার্ড গড়ার আশ্বাস দিয়ে প্রচারপ্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ওয়ার্ডে সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামীলীগ, বিএনপিসহ স্বতন্ত্র ৬ জন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন- বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ জাহির উদ্দিন, সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম জীবন, হবিগঞ্জ জেলা প্রাইভেট বীজ ডিলার এসোসিয়েশন এর সদস্য সচিব ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি (ব্যকস) এর সাবেক প্রচার সম্পাদক শেখ মোঃ নূরুল হক, হবিগঞ্জ মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুনসুর আলী, হবিগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহেল আহমেদ ও তুলসী কুরি। এর মধ্যে নতুন মুখ রয়েছেন ৪ জন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের সমর্থনে উঠান বৈঠক, গণসংযোগসহ প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ ওয়ার্ডটিতে দীর্ঘদিন ধরেই কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করে আসছেন বর্তমান কাউন্সিলর জাহির উদ্দিন। এ পর্যন্ত তিনি ৪ বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিটি নির্বাচনেই কাউন্সিলর জাহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বি থাকলেও শেষ মুহূর্তে জাহির উদ্দিনই বিজয়ী হন। এবারও তিনি কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। তিনি দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে জানান, পরপর ৪বার এ ওয়ার্ডবাসী আমাকে ভোট দিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছেন। আমি নির্বাচিত হয়ে ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট নির্মাণসহ ৮০% উন্নয়ন কাজ করেছি। সুখ দুঃখে ওয়ার্ডবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছি। এ ওয়ার্ডের জনগণকে যেমন আমি ভালোবাসি জনগণও আমাকে ভালোবাসেন। ভালবাসেন বলেই তারা আমাকে প্রতিবারই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন। আমি জনগণের ঋণ কখনও শোধ করতে পারবো না। এজন্য তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বলেন- উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবারের নির্বাচনেও আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন ওয়ার্ডবাসী।
এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম জীবন। ইতিমধ্যে তিনি ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার, ফেস্টুন লাগিয়েছেন। বর্তমানে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গিয়ে গণসংযোগ করছেন। এ ব্যাপারে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী সিরাজুল ইসলাম জীবন জানান, পৌরসভার অনেক উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু হবিগঞ্জ পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড বরাবরই অবহেলিত। বাইপাস সড়ক ও এম এ রব ব্রীজ হওয়ার পর সবাই প্রত্যাশা করেছিল ২নং ওয়ার্ডে উন্নয়নের ছোয়া লাগবে। জেলা ও জেলার বাইরের মানুষ সড়ক ও ব্রীজের সুফল পেয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় ২নং ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। সরকারী সাহায্য সহযোগিতা ও কর্ম সংস্থানের সুযোগ অন্য ওয়ার্ডে যেভাবে জনগণ পেয়ে আসছেন, এই ওয়ার্ডের মানুষ সেভাবে পায় না। পৌরসভার নাগরিক অধিকার যেমন পানি, বিদ্যুৎ, ড্রেন, রাস্তা, অবকাঠামো উন্নয়ন সবকিছুই যেন এ ওয়ার্ডে সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তিনি আরো বলেন, আসলে এই ওয়ার্ডে সাধারণ মানুষের অর্থাৎ খেটে খাওয়া মানুষের জন্য একজন ‘গরীবের বন্ধু’ জনপ্রতিনিধি না থাকার কারনে ওয়ার্ডবাসীর এই দুরাবস্থা। আমি জনপ্রতিনিধি না হয়েও এলাকার সাধারণ মানুষের বিপদ-আপদে, সুখে-দুখে সবসময় ছুটে গেছি। আমার সেবামূলক কর্মকান্ড আরো জোরদার করার জন্য এবং ওয়ার্ডবাসীর সমর্থনে হবিগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর পদে এবার প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচিত হলে পৌরসভার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরণের জন্য কাজ করবো। তরুণ-যুবক ও মা-বোনদের জন্য পারিবারিক স্বচ্ছলতা আনার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবো। বিদ্যুৎ, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, রাস্তা মেরামত, স্বাস্থ্য সেবাসহ সকল প্রকার নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবো। ওয়ার্ডবাসীর প্রতি আমার আবেদন আপনারা আমাকে রায় দিয়ে সেবা করার সুযোগ দিন।
এ ওয়ার্ডে আরেক সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী হবিগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহেল আহমেদ। তিনি বলেন নির্বাচিত হলে ওয়ার্ডে যেসব সমস্যা রয়েছে তার সমাধান করবো। বিশেষ করে মাদক নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবো। পরিকল্পিতভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তুলবো।
সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী হবিগঞ্জ জেলা প্রাইভেট বীজ ডিলার এসোসিয়েশন এর সদস্য সচিব ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি (ব্যকস) এর সাবেক প্রচার সম্পাদক শেখ মোঃ নূরুল হক জানান, ২নং ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা মাদক ও জলাবদ্ধতা। তিনি নির্বাচিত হলে মাদক নির্মূল ও জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ এলাকার সার্বিক উন্নয়নে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাবেন।
অপর সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী হবিগঞ্জ মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুনসুর আলী জানান, নতুন একজন প্রার্থী হিসেবে আমি বলতে চাই- নির্বাচিত হলে ওয়ার্ডের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও মাদক নির্মূল হবে আমার প্রধান কাজ।
এছাড়াও এ ওয়ার্ডের বিগত নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তুলসী কুরির নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে শোনা গেলেও তিনি এখনও চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। তবে তিনি শীঘ্রই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন। এবারও ওয়ার্ডবাসী প্রত্যাশা করছেন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনে একজন ভালো মানুষ কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।