নিতেশ দেব, লাখাই থেকে ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪৯টি বছর পেরিয়ে গেলেও নিজের একটা ঘরের স্বপ্ন আজো অপূর্ণই থেকে গেছে মুক্তিযোদ্ধা সফর আলীর। একাত্তরে যেমন গৃহহীন অবস্থায় পাড়ি জমিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে, আজও তেমনি গৃহহীন অবস্থায় জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে।
জন্ম তার কিশোরগঞ্জ। তার পিতা মৃত হোছন আলী। তবে মুক্তিযুদ্ধের পরে সপরিবারে চলে এসেছিলেন হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার বামৈ গ্রামে। প্রায় ৬০ বছর ধরে তিনি ওই গ্রামের সুলতান খাঁ নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ছোট একটি কুঁড়ের ঘরে বসবাস করছেন।
জানা গেছে, ভারতের চেরাপুঞ্জি প্রদেশের ইকো ওয়ান প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের এফ এফ গ্রুপের ৩নং বেইজে ২৮ দিন প্রশিক্ষণ নেন তিনি। পরে ৫ নং সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর মুসলেহ উদ্দিন আহমদ (দ্বীন মোহাম্মদ) এর অধীনে যোগদান করে সিলেটের সাচনা, তাহেরপুর ও কলমাকান্দা এলাকায় অবস্থানরত শত্রু বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করে শত্রু বাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় পতাকা উত্তোলন করতে সক্ষম হন।
আক্ষেপ আরো আছে। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিচ্ছেন। দুঃস্থদের দিচ্ছেন ঘরবাড়িও। কিন্তু সফর আলীর ভাতা জুটলেও জুটছেনা বাড়ি। স্বাধীনতার আগের সময়ের মতো আজো তিনি পরাশ্রয়েই আছেন।
কথা হয় সফর আলী সাথে। জানালেন, ৪ সন্তানের জনক তিনি। সংসারে আছেন স্ত্রী আর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে।
দুঃখ ভারাক্রান্ত কন্ঠে বললেন, আজো আমি ঘরবাড়িহীন একজন মানুষ। দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি জীবন বাজি রেখে। কিন্তু নিজের জীবন যুদ্ধ চালাতে আজ আর পারছি না।
সফর আলী জানান, বিভিন্ন সময় তিনি শ্রমিকের কাজ করতেন। এখন তাও আর পারেন না বয়স হয়ে গেছে। সরকারী ভাতা পাচ্ছেন তবে অসুস্থতার কারণে তা অপ্রতুল। সিংহভাগ টাকাই চলে যায় ওষুধ ক্রয় করতে। বললেন, সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জমি দিয়ে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছেন। তবে আমার মত একজন আসহায় মুক্তিযোদ্ধা আজও পেলাম না একটি সরকারি ঘর। যুদ্ধের স্মৃতি মনে করতে গিয়ে আজো কাঁদে সফর আলীর অন্তর।
এখনো টেলিভিশনে জাতীয় সংগীতের সুর শুনলে ও যুদ্ধের কথা মনে পড়লে শরীর শিহরিয়ে উঠে মুক্তিযোদ্ধা সফর আলীর। পাকিস্তানি হানাদারদের গুলিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে পুরুষাঙ্গের ব্যাথায় আজও তিনি ঘুমহীন বিছানায় ছটফট করেন। এছাড়া হানাদারদের গুলি করতে গিয়ে রাইফেল তাক করার সময় আঘাত পেয়ে দাঁত পড়ে যায় ওই মুক্তিযোদ্ধার।
তিনি বললেন, আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটাই চাওয়া, মৃত্যুর আগে আমার ছেলেমেয়েদের জন্য মাথা গোঁজার জায়গা হয়েছে যেন দেখে যেতে পারি।
এ ব্যাপারে লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সরকার থেকে এখনো আমরা ঘর বরাদ্দ পাইনি। তবে বরাদ্দ যদি আসে তাহলে যাচাই বাছাই করে দেখা যাবে দেওয়া যাবে কি-না।