প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মেয়র মিজান বললেন
অনুসন্ধান করলে বেরিয়ে আসবে কে চাঁদাবাজি করছে

স্ট্যাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান বলেছেন, জনগণের ভালোবাসায় আমি মাত্র দেড় বৎসরের জন্য মেয়র নির্বাচিত হয়ে প্রতিনিয়ত পৌরবাসীর সেবায় সময় পার করছি। অন্যান্য মেয়ররা ৫ বছরের জন্য দায়িত্ব নিলেও আমি এই স্বল্প সময়ের দায়িত্ব পেয়ে যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম সেই চ্যালেঞ্জে যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে তখন আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। পৌরসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে উদ্দেশ্যমূলক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে এই অপপ্রচার। গত ৭ অক্টোবর সিএনজি অটোরিক্সা মালিক শ্রমিকদের একটি সংগঠন হবিগঞ্জ শহরের থানার সামনে এবং সার্কিট হাউজের সামনে এলোমেলোভাবে সিএনজি দাঁড় করিয়ে রেখে শহরের প্রধান সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। এই অবরোধের সাথে সড়কে বিশৃংখল পরিবেশ সৃষ্টি করে সিএনজি শ্রমিকরা। এ সময় তারা আমার বিরুদ্ধে নানাবিধ অপপ্রচার ও আমার সম্মানে আঘাত করে বক্তব্য দেয়। তাদের এই আচরণকে শহরবাসী সন্ত্রাসী কার্যক্রম হিসেবে মন্তব্য করেছেন। সড়কে অবরোধকালীন সময়ে সাধারণ পথচারী ও অন্য যানবাহনে চলাচলকারী সাধারণ মানুষের সাথে যে অশোভন আচরণ করেছে তাতে অনেকের মধ্যে ভয়-ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। শহরবাসীর মাঝে রীতিমতো আতংক বিরাজ করছিল। যা সভ্য সমাজে কারো কাছে কাম্য নয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ও টিভি চ্যানেলে একতরফা খবর প্রকাশ ও প্রচারিত হয়েছে। এ সব মিডিয়া আমার কোন বক্তব্য গ্রহণ করেনি। আমার বক্তব্য নিলে প্রকৃত সত্যটি তারা প্রচার ও প্রকাশ করতে পারতেন। প্রকৃতপক্ষে হবিগঞ্জ সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাচ্ছিরুল ইসলাম সিএনজি মালিক সমিতির কাছে চাঁদাবাজি সম্পর্কে ভালো জানবেন। যার মাধ্যমে আমি চাঁদাবাজি করি বলে অভিযোগ এসেছে সেই হাবিবও মোতাচ্ছিরুল ইসলাম কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত।
তিনি গতকাল দুপুরে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি হবিগঞ্জ পৌরসভাস্থ খোয়াই নদীর উত্তরপাড় উমেদনগর প্রধান সড়কের উপর অবস্থিত সিএনজি স্ট্যান্ডটি নতুন একটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত সমিতির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতির সাথে উক্ত স্ট্যান্ড কর্তৃপক্ষ আলাদা হওয়ার কারণ তারাই ভাল জানবেন। উক্ত স্ট্যান্ডটি অপসারণ করে অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য জেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় উপস্থাপন করেছি। কেননা প্রধান সড়কের উপরে স্ট্যান্ডটি থাকায় একাধিক উপজেলার সাথে শহরের যোগাযোগ পথে যানজটের সৃষ্টি হয়। আমি সিএনজি মালিক বা শ্রমিক সমিতির কোন সদস্যও নই। আমি সাধারণ জনগণের ভোটে নির্বাচিত মেয়র। আমার পক্ষে সিএনজি থেকে চাঁদাবাজির কোন সুযোগ নেই। বরং অনুসন্ধান করলে বেরিয়ে আসবে কে সেখানে চাঁদাবাজি করছে।
তিনি আরো বলেন, হবিগঞ্জের মানুষ জানে আমি দায়িত্ব গ্রহণ করার পূর্বে হবিগঞ্জ পৌরসভা নানা কারণে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়ে আসছিল। বলতে গেলে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছিল হবিগঞ্জ পৌরসভা। আমি জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরণ, অবকাঠামো উন্নতিকরণ, পৌরসভার কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, দারিদ্র হ্রাসকরণ, পানি সরবরাহ বিদ্যুত সেবা, স্বাস্থ্য সেবা ও মশক নিধন কার্যক্রম গতিশীল করা সহ হবিগঞ্জকে একটি পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গিকার নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। পরে দিন রাত সেবা দিতে কাজ করেছি। আমি নিজের ব্যক্তিস্বার্থের কথা চিন্তা না করে সব সময় পৌরসভার জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছি। পৌরসভার মেয়র হিসেবে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করার ফলে আমি অনেকটা প্রমাণ করতে পেরেছি যে আমার অঙ্গিকারগুলো ফাঁকা বুলি ছিল না। জলাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য আমি হবিগঞ্জ-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির, সাবেক জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ, বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যাসহ সকলের সহযোগিতায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বড় ড্রেন সমূহকে অনেকাংশে সচল করতে পেরেছি। এই প্রচেষ্টার ফলাফল এখন পৌরবাসীর কাছে দৃশ্যমান। চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হলেও কোথাও পূর্বের মতো পানি জমে থাকেনি। তবে কিছু কিছু স্থানে উন্নয়ন কাজ চলমান থাকার কারণে বৃষ্টির পানিতে সাময়িক অসুবিধা হয়েছিল যা ইতিমধ্যে অবসান হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই পৌরসভার প্রতিটি কাজে গতি সঞ্চার করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। প্রশাসনিক কর্মকান্ডকে ঢেলে সাজিয়েছি। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছি। শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য মুক্তিযোদ্ধা চত্তর, ফোয়ারা ও ডিভাইসগুলোকে মনোরম করে গড়ে তোলেছি। অবকাঠামো উন্নয়ন, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, স্বাস্থ্য, পানি, বিদ্যুৎ, লাইসেন্স, বাজার নিয়ন্ত্রণ, মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম এবং ট্যাক্স-ননট্যাক্স আদায়কে গতিশীল করাসহ যাবতীয় নাগরিক সেবার মান উন্নত করেছি। আমি আমার অঙ্গিকার বাস্তবায়ন করতে অনেক দূর এগিয়ে এসেছি। আমি বিশ্বাস করি, হবিগঞ্জ পৌরবাসী আমার পাশে থাকলে হবিগঞ্জকে প্রকৃত অর্থেই একটি পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সারা দেশে অনুকরণীয় পৌরসভায় রূপান্তর করতে পারব।