খোয়াই নদীর উত্তর পাড় অটো টেম্পু অটোরিকশা সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ হাবিবুর রহমান জানান- রাস্তা অবরোধ করে ৯ লাখ টাকা আত্মসাতের যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ॥ মেয়র মিজান বললেন হবিগঞ্জ পৌরবাসীকে উন্নত সুযোগ-সুবিধা দিতে কাজ করছি বলেই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। আমি সিএনজি’র কোন কমিটিতেও নেই, চাঁদাবাজিতেও নেই
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ-বানিয়াচং রোডস্থ উমেদনগর সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজির অভিযোগে শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে শহরকে অচল করে দিয়েছিল শতাধিক সিএনজি অটোরিকশা। গতকাল বুধবার দুপুর থেকে শহরের থানার মোড়, বেবীস্ট্যান্ড, পোদ্দার বাড়িসহ বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে রাখে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকরা। এ ঘটনায় জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও শ্রমিকরা সিএনজি চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ।
অবরোধ সৃষ্টিকারী শ্রমিকরা জানান, শহরের উমেদনগর সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড থেকে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজানের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা প্রতিদিন শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন। সম্প্রতি শ্রমিকরা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে শ্রমিকদের মারপিট করে বলে অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে শ্রমিকরা প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিচার দাবি করেন। অন্যথায় তারা সারা জেলায় সড়ক অবরোধ করার হুশিয়ারি দেন। এ ব্যাপারে উমদেনগর সিএনজি স্ট্যান্ডের ম্যানেজার মো. আশরাফ আলী জানান, ‘মেয়র মিজানুর রহমান মিজানের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ আমাদের শ্রমিকদের মারপিট করে উমেদনগর স্ট্যান্ড দখল করে নেয়। এমনকি সাবেক ম্যানেজারের মাধ্যমে সমিতির প্রায় ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে নিয়েছেন। আমাদের শ্রমিকরা বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামলে জেলা প্রশাসক তিন দিনের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। পরে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেয়।
হবিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী বলেন- শ্রমিকরা শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট অবরোধ করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের বুঝিয়ে অবরোধ তোলার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া, উভয়পক্ষকে নিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অপরদিকে, খোয়াই নদীর উত্তর পাড় অটো টেম্পু অটোরিকশা সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ হাবিবুর রহমান জানান- রাস্তা অবরোধ করে মেয়র মিজানের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা আত্মসাত ও চাঁদাবাজির যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি কোন টাকা আত্মসাত করেননি। হাবিবুর রহমান অভিযোগ করেন- জেলা সিএনজি মালিক সমিতি গঠনের পর হতে নিয়মিত এর কোন মাসিক সভা হয় না। ওই সমিতির রেজিস্ট্রেশন অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। জেলা সমবায় অফিস থেকে রেজিস্ট্রেশন করা হলেও বর্তমানে তার মেয়াদ নেই। শহরের জেকে এন্ড এইচকে হাই স্কুল সংলগ্ন সিএনজি স্ট্যান্ড, আলম বাজার, দক্ষিণ সাঙ্গর, উত্তর সাঙ্গর, আগুয়া, ইকরাম, সুজাতপুর, উমেদনগর স্ট্যান্ড থেকে মাসে আয় হয় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ হিসেবে ১১ বছরে সমিতির ফান্ডে কোটি কোটি টাকা জমা হয়েছে তার কোন হিসেব নেই। সমিতির অন্তর্ভূক্তি হয়ে লাইনে চলাচলের জন্য প্রতিটি সিএনজিকে ৫ হাজার টাকা করে দিতে হয়। সমিতির অধীনে প্রায় ২ হাজার গাড়ি চলাচল করছে। কিন্তু ওই সকল গাড়ির অন্তর্ভূক্তি ফি হিসেবে জমা নেয়া টাকারও হিসেব নেই। করোনাকালে সিএনজি শ্রমিকরা কর্মহীন অসহায় হয়ে পড়েন। ফান্ডে পর্যাপ্ত টাকা থাকা সত্ত্বেও কমিটির নেতৃবৃন্দ তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। কোন প্রকার সহায়তা করেনি। এই সকল অনিয়মের কারণে তিনি জেলা সিএনজি মালিক সমিতি হতে পদত্যাগ করে খোয়াই নদীর উত্তর পাড় অটো টেম্পু অটোরিকশা সিএনজি মালিক সমিতি নামে আলাদা সমিতি গঠন করে গত ৩ মাস ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন যার রেজিঃ নং-২৫৯৩। আর এর জের ধরেই গতকাল রাস্তা অবরোধ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মেয়র মিজানুর রহমান মিজান জানান, আমি জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলনে উন্নয়ন কর্মকান্ড করে যাচ্ছি। হবিগঞ্জ পৌরবাসীকে উন্নত সুযোগ সুবিধা দিতে কাজ করছি। আমি সিএনজি অটোরিকশার কোন সমিতিতেও নেই, তাদের কোন চাঁদাবাজিতেও নেই। তিনি বলেন- আগামী পৌর নির্বাচন আসন্ন। আগামী নির্বাচনে যাতে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা না দেন এবং আমার বিরুদ্ধে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্যই এই অবরোধ। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আগেও ষড়যন্ত্র হয়েছে। এখনো ষড়যন্ত্র চলছে, ভবিষ্যতেও হয়তো তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকবে। মেয়র মিজান দৃঢ়তার সাথে বলেন শহরবাসী আমার সম্পর্কে জানেন। গত ১৩/১৪ মাসে মেয়র হিসেবে আমি কতটুকু দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি তা জনগণ দেখেছেন। আমি আশা করি আগামী নির্বাচনে জনগণ আমার কাজের মূল্যায়ন করবেন। মেয়র মিজান তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে সড়ক অবরোধের তীব্র নিন্দা জানান।