৭৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা অনুমোদনের জন্য দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রেরণ ॥ কমিটিতে কারা থাকছেন জানার জন্য অধীর আগ্রহে নেতৃবৃন্দ
পুরনো কমিটির অনেকেই নয়া কমিটিতে স্থান পাননি ॥ যুদ্ধাপরাধীদের সাথে সম্পর্ক আছে এমন কাউকেও নয়া কমিটিতে রাখা হয়নি ॥ সদস্য তালিকার শীর্ষে থাকছেন এমপি মিলাদ গাজী ও প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ॥ যে কারণে ডাঃ মুশফিক চৌধুরী ও এমপি মজিদ খানের নাম কমিটিতে না থাকার সম্ভাবনা

এসএম সুরুজ আলী ॥ এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির ও অ্যাডভোকেট মোঃ আলমগীর চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুমোদনের অপেক্ষায়। হবিগঞ্জ থেকে নেতৃবৃন্দ দলীয় সিনিয়র নেতাদের সাথে পরামর্শ করে ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে প্রেরণ করেছেন। খুব শিগগির দলীয় সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কমিটি অনুমোদন করবেন বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে।
পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা ঢাকায় প্রেরণের খবর পেয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা জানার চেষ্টা করছেন কমিটিতে কারা স্থান পেয়েছেন। এজন্য তারা দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করছেন। শুধু তাই নয়, কমিটিতে নিজের নাম অন্তর্ভূক্ত করার জন্যও অনেকেই চেষ্টা-তদবির করেছেন। তদবির সফল হয়েছে কি-না কিংবা কমিটিতে নাম আছে কি-না এ নিয়েও অনেক নেতা রয়েছেন দুঃশ্চিন্তায়। কিন্তু কমিটিতে কারা রয়েছেন তা জানতে পারছেন না কেউই।
দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকা থেকে এ বিষয়ে জানার জন্য দলীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সূত্রের সাথে যোগাযোগ করা হয়। সূত্র জানায়, হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। কমিটির বিভিন্ন পদ-পদবী ও সদস্য তালিকায় দলের ত্যাগী নেতাকর্মী ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ প্রাধান্য পেয়েছেন। সূত্র জানায়, রাজাকার আলবদর পরিবারের সন্তান অথবা পরিবারের সদস্য যারা অতীতে যে কোন ভাবেই দলে প্রবেশ করেছেন কিংবা যুদ্ধাপরাধীদের সন্তান বা তাদের নিকটতম আত্মীয়-স্বজন কেউই নয়া কমিটিতে স্থান পাবেন না। অপরদিকে, পূর্বের কমিটির এক নম্বর সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ মুশফিক হুসেন চৌধুরীকে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য করেছেন সেজন্য তিনি জেলা আওয়ামী লীগের নয়া কমিটিতে থাকছেন না। এজন্য পূর্বের কমিটির দুই নম্বর সদস্য হবিগঞ্জ-১ আসনের এমপি দেওয়ান শাহনওয়াজ মিলাদ গাজীকে এক নম্বর সদস্য করা হতে পারে। একইভাবে পূর্বের কমিটির তিন নম্বর সদস্য প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী হতে পারেন দুই নম্বর সদস্য।
বিগত কমিটির সাধারণ সম্পাদক, হবিগঞ্জ-২ আসনের তিন বারের এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খানকে যেহেতু সম্মান প্রদর্শন করে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য করা হয়েছে সেজন্য তিনিও হয়তো জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে থাকছেন না। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সাবেক জাতীয় পরিষদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরীকে জেলা আওয়ামী লীগের নয়া কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা হতে পারে। নয়া কমিটিতে থাকতে পারেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ শরীফ উল্লার মতো ব্যক্তিত্ববানরা। নয়া কমিটিতে নতুন পুরাতন মিলিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অনেকেই স্থান লাভ করেছেন এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
ডা: মুশফিক হুসেন চৌধুরী ও এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খানের নয়া কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত হওয়াকে তাদের ডিমোশন হিসেবে মনে করেন অনেক সিনিয়র নেতা। এজন্য তাদের সম্মানার্থেই জেলা আওয়ামী লীগের নয়া কমিটিতে তাদের নাম না থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোঃ আলমগীর চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির নেতৃত্বে ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি আওয়ামীলীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করি তিনি আমাদের এই কমিটি শীঘ্রই অনুমোদন করবেন। তিনি বলেন- আমরা শায়েস্তাগঞ্জ ও লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সম্পন্ন করে কমিটি উপহার দিয়েছি। পরবর্তীতে দেশের করোনা পরিস্থিতির জন্য অন্যান্য উপজেলা, পৌরসভা কমিটিগুলোর সম্মেলন সম্পন্ন করতে পারিনি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত পেলেই বাকি কমিটিগুলো যথাযথ নিয়মে গঠন করবো।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকায় প্রবীণ ও নবীনদের রাখা হয়েছে। জাতির জনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি। আমরা আশা করি শীঘ্রই জননেত্রী শেখ হাসিনা পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করবেন। কমিটিতে কারা প্রাধান্য পেয়েছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কমিটি অনুমোদিত হওয়ার আগে কোন কিছু জানাতে রাজি হননি। তবে তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন- রাজাকার আলবদর পরিবারের সন্তান অথবা যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্য যারা অতীতে যে কোন ভাবেই হোক দলে প্রবেশ করেছে তাদের কেউই নয়া কমিটিতে স্থান পাবেন না।
প্রসঙ্গত, গত ১১ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণ নিমতলায় জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরীর নাম ঘোষণা করেন। একই সাথে তিনি এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খানকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্তির ঘোষণা দেন।