পূর্বের ভাড়ায় ফিরছে সিলেটের গণপরিবহন ॥ হবিগঞ্জে কমেনি
স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা ভাইরাসের প্রভাবে গণপরিবহনে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি বাতিল করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাসের দুই সিটের জায়গায় প্রতি সিটে একজন করে বসবে এবং আগের বর্ধিত ভাড়া বলবৎ থাকবে। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেট জেলার সকল রুটেও ভাড়ায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে হবিগঞ্জে এরকম কোনো সিদ্ধান্ত এখনো গৃহীত হয়নি বলে জানিয়েছেন হবিগঞ্জ মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শঙ্খ শুভ্র রায়।
জানা যায়, করোনা ভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণের মধ্যেও টমটমসহ গণপরিবহণে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। সর্বত্র চলছে অরাজকতা। অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া, স্প্রে ও মাস্ক ব্যবহার না করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে এসব গণপরিবহণের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি হবিগঞ্জের গণপরিবহণের অরাজকতা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে ভ্রাম্যমান আদালতে টমটমসহ কিছু পরিবহণ মালিককে জরিমানা করলেও এখনো কেউ মানছে না স্বাস্থ্যবিধি। ফলে দিনে দিনে করোনার ঝুঁকি বেড়েই চলছে।
যাত্রীরা বলছেন, করোনার অজুহাতে হবিগঞ্জ জেলায় তড়িগড়ি করে টমটম, সিএনজিসহ গণপরিবহণের ভাড়া ডাবল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু গতকাল বুধবার জাতীয়ভাবে ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেও রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত টমটমসহ গণপরিবহণের ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত না নেয়ায় প্রশ্ন তোলছেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগী জনসাধারণ বলছেন, ভাড়া বাড়ানোর সময় তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ নিলেও কমানোর সময় ধীরগতি কেন?
জানা যায়, প্রথম দিকে নিয়ম টমটমসহ পরিবহণ চালকরা মেনে চললেও এখন স্বাস্থ্যবিধি মোটেও মানা হচ্ছে না। অন্যদিকে সরকার গণপরিবহণের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়েছে এমন অযুহাতে শুরু হয় অনিয়ম। অভিযোগ উঠেছে অফিস, আদালতসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা খুলে দিলেও এতোদিন ৬০ শতাংশ গাড়ি ভাড়া কমানো হয়নি। ফলে অতিরিক্ত ভাড়ার চাপ পড়ছে সাধারণ মানুষের উপর। এ নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে আন্দোলনও হয়। এর প্রেক্ষিতে গতকাল সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাতিলের সিদ্ধান্ত নিলো।
এদিকে হবিগঞ্জে করোনা ভাইরাসের শুরুতে সব ধরণের যানবাহন বন্ধ থাকলে প্রশাসন ও পৌরসভা টমটম মালিক সমিতির সাথে পরামর্শ করে টমটমের ভাড়া ১ জুনকে থেকে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা করে। প্রত্যেক টমটমে তিন থেকে ৩ জন করে যাত্রী নেয়ার কথা বলা হয়। হবিগঞ্জ শহরের স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি গুলোতে যাত্রী ৩জন করে ৬০ শতাংশ ভাড়া নিলেও অন্যান্য এলাকার স্ট্যান্ড থেকে অতিরিক্ত যাত্রী ও ডাবল ভাড়া নেয়া হচ্ছে। তবে হবিগঞ্জ শহরের টমটমগুলোর অবস্থা ভয়াবহ। তারা কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কাই করছে না। ইচ্ছামতো ৩ জনের জায়গায় ৪ থেকে ৬ জন যাত্রী নিচ্ছে। টমটমগুলো ভাড়া ১০টাকা নেয়া হচ্ছে ঠিকই কিন্তু যাত্রী নেয়া হচ্ছে আগের মতো। শহরের বিভিন্ন স্থানে ট্রাফিক পুলিশের চেকপোস্ট থাকলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ ছাড়া ছোট্ট হবিগঞ্জ শহরে অনুমোদন ও অনুমোদনবিহীন ৫ হাজারের মতো টমটম চলাচলের কারণে সবসময়ই লেগে থাকে যানজট। দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। বর্তমানে করোনা আতংক থাকলেও দেখা যাচ্ছে হবিগঞ্জ শহরবাসীর অন্যতম আতংকের কারণ হচ্ছে শহরের যানজট। আর এর মূল কারণ হলো এসব ইজিবাইকসহ তিন চাকার যানবাহন। টমটমের কারণে শহরে যানজট ও দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিদিনই।
এছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকদের বেপরোয়া চালানো, যাত্রীদের সাথে খারাপ ব্যবহার, নির্ধারিত ভাড়া চেয়ে অধিক ভাড়া দাবি করায় প্রায়ই শহরের রাস্তায় বাকবিতন্ডা লেগে যায়। এহেন পরিস্থিতিতে টমটমসহ অন্যান্য যানবাহনের ডাবল ভাড়া কমানোর দাবি তোলেছেন সচেতন মহল। তবে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান জানান, প্রত্যেক টমটম মালিককে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও যদি কেউ নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন তবে আগামী রবিবার থেকে টমটমের বিরুদ্ধে ঝটিকা অভিযান শুরু হবে এবং সরকারি নিয়মের সাথে একাত্মতা পোষণ করে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে আগের ভাড়া ৫ টাকা বহাল করা হবে।
গত ৩১ মে গণপরিবহনে ৬০ শতাংশ বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছিল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। সেই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছিল, আন্তঃজেলা ও দুরপাল্লার রুটে বাস-মিনিবাস চলাচলের ক্ষেত্রে ২০১৬ সালে নির্ধারিত ভাড়ার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যাবে। এর প্রেক্ষিতে সারাদেশের মতো সিলেটও ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। তবে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার পরিবর্তে দিগুন-তিনগুণ ভাড়া আদায় করছে বাস কোম্পানিগুলো; এমন অভিযোগ ছিল প্রথম থেকেই। এছাড়া করোনার পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে যান চলাচল ও যাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেই সুযোগে আগের মতোই অতিরিক্ত যাত্রী বহন শুরু করে গণপরিবহনের মালিক শ্রমিকরা। বেশি ভাড়ার বিনিময়ে দুই সিটে একজন বসানোর নিয়ম ভেঙে এখন আসন ভর্তির পর দাঁড় করিয়েও যাত্রী নেওয়া শুরু হয় এবং যাত্রীদের সাথে প্রতিদিনই বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটে।