মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ গাছ আমাদের উপকারি বন্ধু। একেকটি গাছ আমার একেকটি সন্তানের মতো। আর গাছ কখনো মানুষের সাথে বেঈমানী করে না। তাই সবার প্রতি গাছ লাগানোর আহবান জানালেন হবিগঞ্জের অতি পরিচিত মুখ মানবাধিকার কর্মী কবি তাহমিনা বেগম গিনি। সরেজমিন ছাদ বাগানে গিয়ে দেখা যায় গাছে গাছে ঝুলে আছে অসংখ্য কমলা, বারোমাসি কূল, বিখ্যাত জারা লেবু, হরিতকী, বারোমাসী আমসহ নানা ফল।
একান্ত আলাপচারিতায় কবি তাহমিনা বেগম গিনি জানান- ১৯৯৯ সালে তিনি ছাদ বাগান শুরু করেন। ওই সময়ে ঢাকা থেকে দুটি ক্যাকটাস কিনে এনে তিনি ছাদ বাগানে রোপন করেন। সেই থেকে তার ছাদ বাগানের শুরু। ওই গাছ দুটি আজও তার বাসার ছাদে আছে সগৌরবে। পরে তিনি আস্তে আস্তে বাগানে বাগানে নতুন গাছ রাগানো শুরু করেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তিনি বাহারী ফুল, ফল, ক্যাক্টাস, পাতাবাহারসহ বৈচিত্রময় গাছ সংগ্রহ করে তা রোপনের মাধ্যমে ছাদ বাগানকে সমৃদ্ধ করেন। এমনকি বিদেশ ভ্রমণে গেলেও তিনি গাছ সংগ্রহ করে আনেন । আর এ ক্ষেত্রে তাকে সর্বোতভাবে সহায়তা করেন বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ স্বামী ডাঃ মোঃ জমির আলী।
তিনি বলেন- বাগান করা, বই পড়া, ভ্রমণ করা আর লেখালেখি করা তার নেশা। তবে গাছের প্রতি নেশা একটু বেশিই বলতে হয়। আর এ ক্ষেত্রে তিনি ফুলকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তার মতে নিজের হাতে গাছ রোপন করে সেই গাছের ফল নিজ হাতে সংগ্রহ করে খাওয়া কি যে আনন্দের তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। বর্তমানে তার ছাদ বাগানে কামরাঙা, বারমাসী আমসহ ৪ প্রকারের আম, সিলেটের বিখ্যাত জারা লেবুসহ ৪ প্রকার লেবু, বারোমাসী কূল, জামরুল, ৪ প্রকার পেয়ারা, পেঁপে, কমলা, হরেক রকম গোলাপ, ৪ প্রকারের জবা, লাল শাপলা, কাঠ করবী, বেলী, নয়নতারা, অলকানন্দ, প্রায় ১৫ প্রজাতির ক্যাকটাস, কলাবতী, গন্ধরাজ, পুই শাক, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, পুদিনা পাতা, বিলেতি ধনিয়া পাতা, হরিতকী, মিষ্টি তেঁতুলসহ নানা প্রজাতির ফুল, ফল ও পাতা বাহার গাছ। আর গাছ সংগ্রহ করে অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকেন স্বামী ডাঃ মোঃ জমির আলী। তিনি যতটুকু পারেন সাহায্য সহযোগিতাও করে থাকেন
তিনি আরও জানান- ১৯৮০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি সৌদি আরব ছিলেন। ওই সময়ে সেখানেও তিনি বাগান করেন। সেখানে প্রচুর শাক সবজি হতো। তা তিনি নিজে খাওয়ার পাশাপাশি বাঙালিদেরও দিতেন। আর শাক সবজি চাষ করলে তার প্রতি বিশেষভাবে যতœ রাখার উপর তিনি বিশেষ গুরুত্ব দেন। কারণ মৌসুম পরিবর্তনের সাথে সাথে নানা প্রকার রোগ-জীবানু, পোকা মাকড় ও ফাংগাস গাছে আক্রমণ করে থাকে। সময়মতো যতœ না নিলে তা গাছকে নষ্ট করে দেয়। তাই গাছের প্রতি খেয়াল রাখতে হয়। কখনো কোন গাছে সমস্যা দেখা দিলে তিনি সাথে সাথে কৃষি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়ে পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন। ২/৩ মাস পর পর নার্সারী থেকে লোক ডেকে এনে তাদেরও পরামর্শ নেন। প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং সার প্রয়োগ করেন। তিনি দাবি করেন- তিনি যখন ছাদ বাগান করেন তখন হবিগঞ্জে কেউ ছাদ বাগান শুরু করেননি। সে হিসেবে তার বাগানই হবিগঞ্জের প্রথম ছাদ বাগান। বর্তমান সরকার ছাদ বাগানে উৎসাহ দিচ্ছে। সবাই ছাদ বাগান করলে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি অক্সিজেনের নিরাপদ আঁধার তৈরী হবে। আজকাল বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালতের ছাদে বাগান গড়ে উঠেছে। এ দৃশ্য তার খুবই ভাল লাগে। নিজের হাতে রোপন করা গাছের ফুল-ফল দেখতে এবং খেতে দুটোই ভাল লাগে তার।
কবি তাহমিনা বেগম গিনি বলেন- যখন তার মন খারাপ হয় তিনি তখন ছাদে গাছের সান্নিধ্যে চলে যান। আনমনে তাদের সাথে কথা বলেন। দুঃখ ভাগাভাগি করেন। তখন তার মনে হয় একেকটি গাছ তার একেকটি সন্তান। তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন- যদি কারো বাসায় বাগান গড়ে তোলেন তাহলে সে ইট পাথরের শহরেও অক্সিজেনের আঁধারে বসবাস করবে। তিনি দাবি করেন তার বাগান দেখে আরো অনেকে উৎসাহিত হয়ে ছাদ বাগান করেছেন। যা তার খুব ভাল লেগেছে। তিনি সকলের প্রতি ছাদ বাগান করার আহবান জানান। তিনি বলেন- গাছ আমাদের পরম উপকারী বন্ধু। যারা এই লেখাটি পড়বেন তাদের প্রতি অনুরোধ যার বাসায় এক চিলতে মাটি আছে তারা অন্তত একটি গাছ লাগান। হয়তো এক সময় বলতে পারবেন আমি একটি গাছ লাগিয়েছিলাম। গাছের মতো পরম বন্ধু আর কেউ নেই।