স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার জয়পুরে অবস্থিত শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর মামার বাড়ি শচী অঙ্গন ধামে চুরির ঘটনায় জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠান হয়নি এবার। স্বর্ণসহ মূল্যবান জিনিস চুরির ঘটনায় শচী অঙ্গন কর্তৃপক্ষের মাঝে দেখা দেয় হতাশা। তবে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যার অনন্য উদ্যোগে কষ্ট লাঘব হয়েছে শচী অঙ্গন কর্তৃপক্ষের।
শচীঅঙ্গন ধামের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট সাংবাদিক অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য জানান, সোমবার শচীঅঙ্গন ধাম মন্দিরে বেশ কয়েকটি তালা ভেঙ্গে চুরি হয়েছে। চোরেরা শ্রী শ্রী শচীমায়ের কোল থেকে মহাপ্রভুকে (শিশু নিমাই) নিচে নামিয়ে রাখে। তারপর শচীমায়ের অঙ্গ থেকে স্বর্ণের গহনা নিয়ে যায়। সঙ্গে কাঁসার বাসনসহ বহু জিনিস নিয়ে গেছে।
শচী অঙ্গনে চুরির ঘটনা কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানালে মঙ্গলবার সকাল ৬টায় বাহুবল থানার ওসি কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে ঘটনাস্থলে যান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা এবং বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধা তালুকদার।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখতে পান সেখানে কোন বাউন্ডারী ও গেইট এবং সিসি ক্যামেরা না থাকায় এই সমস্যা হয়েছে। তিনি তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নেন মন্দিরের বাউন্ডারী, গেইট নির্র্মাণ ও সি সি ক্যামেরার ব্যবস্থা করার। তিনি বাহুবলের সকল ইটভাটাকে অনুরোধ করেন চাঁদা হিসাবে ইট দিতে। বাহুবল থানাকে নির্দেশ দেন প্রয়োজনীয় বালু দিতে। তিনি নিজে সিমেন্ট এবং শ্রমিক খরচ বহনের ঘোষণা দেন এবং তাৎক্ষনিক পকেট থেকে ২ হাজার টাকা প্রদান করেন। এছাড়াও মন্দিরের জন্য হবিগঞ্জ শহরের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সিসিটিভি সংগ্রহ করে দেয়ার ঘোষণা দেন। তিনি ১৫ থেকে ২০ দিনের মাঝে এই কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন।
পুলিশ সুপার এ ব্যাপারে মামলা রেকর্ডের নির্দেশ দেন এবং বাহুবল থানা পুলিশ একজনকে আটক করে। পুলিশ সুপারের এই উদ্যোগ নেয়ায় শচী অঙ্গন কর্তৃপক্ষ আনন্দিত। শচী অঙ্গন সেবা ট্রাস্টের সম্পাদক রণধীর চক্রবর্তী এই উদ্যোগ নেয়ার জন্য পুলিশ সুপারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শচী অঙ্গনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট সাংবাদিক অভিজিৎ ভট্টাচার্য্যও কৃতজ্ঞতা জানান পুলিশ সুপারের প্রতি। সবকিছু মিলে চুরির ঘটনায় হতাশার মাঝেও আনন্দ দেখা দেয় পুলিশ সুপারের এই ভূমিকায়।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন, হবিগঞ্জ জেলা হল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জেলা। শচী অঙ্গন শুধু বাহুবলের নয় এটি সমগ্র জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান। এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের সবারই এগিয়ে আসা উচিত।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৩ সালে পরম বৈষ্ণব ড. শ্রী মহানামব্রত ব্রহ্মচারী আবিষ্কার করেন পুণ্যতীর্থ শ্রীধাম জয়পুর-এ মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যের মামার বাড়ি। তারই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মহাপ্রভুর মাতৃদেবী শচীরাণীর নামে জয়পুরে ‘শ্রীশ্রী শচীঅঙ্গন ধাম’ গড়ে ওঠে। কালের আবর্তনে আধ্যাত্মিক ভাবমূর্তি হিসেবে গৌরভক্তদের কাছে মহাতীর্থভূমি রূপে শচীঅঙ্গন পরিচিতি পেয়েছে। চিরাচরিত প্রথানুসারে এখানে বার মাসে তের পার্বণ অনুষ্ঠিত হয়।