স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী তীরের প্রত্যন্ত পাড়া-গাঁ টুঙ্গীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ঐতিহ্যবাহী শেখ পরিবারে জন্ম নেয়া শেখ হাসিনা সময়ের পরিক্রমায় আজ বিশ্ব নেতাদের অন্যতম একজন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। পিতার রাজনৈতিক উত্তরসূরি হয়ে তিনি পূরণ করে চলেছেন জাতির পিতার স্বপ্ন। জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে তিনি এখন সেখানে। শেখ হাসিনার জন্মদিনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার প্রথম সন্তান শেখ হাসিনার ডাক নাম হাসু। দাদা শেখ লুৎফর রহমান ও দাদি সাহেরা খাতুনের অতি আদরের নাতনি শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দাদা-দাদির কোলে-পিঠে মধুমতি নদীর তীরে টুঙ্গীপাড়ায়। গ্রামবাংলার ধুলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সঙ্গেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। গ্রামের সঙ্গে তাই তার নাড়ির টান। শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গীপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তখন পুরান ঢাকার রজনী বোস লেনে ভাড়া বাসায় তারা ওঠেন। বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হলে সপরিবারে ৩ নম্বর মিন্টো রোডের বাসায় তারা বসবাস শুরু করেন। শেখ হাসিনাকে ঢাকা শহরে টিকাটুলীর নারী শিক্ষা মন্দিরে ভর্তি করা হয়। এখন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি শেরেবাংলা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে খ্যাত। শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ওই বছরই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়ার পর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন এক বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭শে জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দি অবস্থায় প্রথম সন্তানের মা হন। ১৯৭২ সালের ৯ই ডিসেম্বর কন্যাসন্তান পুতুলের জন্ম হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে ঘাতকের হাতে নিহত হন। এ সময় শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
এরপর থেকে দু’বোন প্রবাস জীবন কাটাতে থাকেন। ১৯৮১ সালের ১৩ থেকে ১৫ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আর ওই বছরই ১৭ই মে দীর্ঘ ৬ বছর প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি তিনটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের পরে তিনি পঞ্চম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে এবং সে বছরের ২৩শে জুন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। ওই হামলায় ২৪ জন নিহত এবং পাঁচশ’ নেতাকর্মী আহত হন। ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে ভূমিধস বিজয় অর্জন করে। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে চতুর্থবারের মতো নির্বাচনে জয়লাভ করে দলকে দেশের নেতৃত্বের আসনে বসাতে সক্ষম হন। দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি ছাত্রজীবন থেকেই আপসহীন ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। শেখ হাসিনা বর্তমানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। এর আগে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সম্মানসূচক ডিগ্রি, পদক ও স্বীকৃতি দিয়ে শেখ হাসিনার অসামান্য অবদানকে সম্মানিত করা হয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
টিকা দান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের অসামান্য সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মর্যাদাপূর্ণ ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক বিশ্বব্যাপী টিকাদান সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এবং ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই) ২৩শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে এ পুরস্কার দেয়া হয়। এর আগে এ মাসেই শেখ হাসিনাকে ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এডভাইজরি কাউন্সিলের প্রধান উপদেষ্টা অ্যাম্বাসেডর টিপি শ্রীনিবাসন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ পদক হস্তান্তর করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সক্রিয় ও দৃশ্যমান ভূমিকা এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে যুগান্তকারী উদ্যোগের জন্য ‘আইসিটি টেকসই’ উন্নয়ন পুরস্কার লাভ করেন শেখ হাসিনা। এর আগে রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতা, সৃজনশীলতা এবং সাফল্যের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে তিনি ‘সাউথ সাউথ’ ও ‘সেরেস’ পদকসহ অন্যান্য পুরস্কারে ভূষিত হন। বাংলাদেশে নারী ও শিশুর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য ইউনেস্কো থেকে ‘শান্তির বৃক্ষ (ট্রি অব পিস)’ অভিধায়ও সিক্ত হন। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তিনি অর্জন করেছেন বিশ্ববাসীর প্রশংসা। তার এ মানবতাবাদী ভূমিকার জন্য দলের পক্ষ থেকে তাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খেতাব দেয়া হয়েছে। শত ব্যস্ততার মাঝেও শেখ হাসিনা সাহিত্য চর্চা ও সৃজনশীল লেখায় নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম- তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার জন্মদিন পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। গণমাধ্যমে পাঠানো আওয়ামী লীগের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিনটি উৎসবমুখর পরিবেশে নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালন করবে দলটি।
দোয়া অনুষ্ঠিত: এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। সূত্র: মানবজমিন
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com