
স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জের বাদল ও কাজলের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে মোবাইল চোর সিন্ডিকেট। আর এ চক্রের সদস্যরা প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন স্থানে মোবাইল চুরি করছে। বিশেষ করে এ চক্রটি বিভিন্ন স্থানের জনসভা, ইসলামী ওয়াজ মাহফিল, বাউল গানের আসর, বড় বড় শপিং মলগুলোতে মোবাইল ফোন চুরি করে থাকে। এমনকি এই চক্রের সদস্যরা জানাজার নামাজ, মসজিদ, মন্দিরে মানুষের ভিড় থাকলে সেখান থেকে কৌশলে মোবাইল চুরি করে থাকে। আর এসব চোরাই মোবাইল সিলেটসহ বিভিন্ন নামীদামী মার্কেট ও দোকানে বিক্রি করে আসছে। এ চক্রের সদস্যরা এতটাই দক্ষ যে মুহূর্তেই চুরি ও ছিনতাই করে নেয়া মোবাইলের সকল প্রমাণ মুছে ফেলছে। যে কারণে এসব মোবাইল উদ্ধার করতে হিমশিম খাচ্ছে খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সম্প্রতি নবীগঞ্জ থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে চোরাই ৬টি মোবাইল উদ্বার করে। এছাড়া র্যাব সিলেটের করিম উল্ল্যাহ মার্কেটের একাধিক মোবাইল সার্ভিসিং দোকানে অভিযান চালিয়ে মোবাইলের আইএমইআই নাম্বার পরিবর্তনকারী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করে। এ সময় ওই চক্রের কাছ থেকে বিপুল মোবাইল ফোন এর আইএমইআই পরিবর্তনের বিভিন্ন ডিভাইস উদ্ধার করা হয়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, শীত মৌসুমে শহর বা গ্রামাঞ্চলে ওয়াজ মাহফিল, বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব, বাউল গানের আসরে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। তখন মোবাইল চোর ও ছিনতাইকারী চক্র সেখানে জটলা সৃষ্টি করে সুকৌশলে মোবাইল চুরি করে থাকে। বিগত ৩/৪ মাসে নবীগঞ্জে শতাধিক মোবাইল চুরি হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি আন্তর্জাতিক সুন্নী কনফারেন্সে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছিল। সেখান থেকে প্রায় ৭০/৮০টি মোবাইল চুরি হয়। সভায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোবাইলও চুরি হয়। ওই দিন স্থানীয় জনতা ৩ মোবাইল চোরকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এসব চুরির সাথে নবীগঞ্জের চিহ্নিত কিছু লোক জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে জানা যায়, নবীগঞ্জে মোবাইল চোর চক্রের মূলহোতা আনমনু গ্রামের বাদল ও কাজল। বাদল ও কাজলের অপকর্ম ঢাকতে স্থানীয় এক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা সহযোগিতা করে থাকেন। বাদল ও কাজল মোবাইল এবং বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরি সহ নানা অপকর্মে জড়িত। তারা নিজেদেরকে কখনো আওয়ামী লীগ নেতা আবার কখনো বিএনপি নেতা বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। নবীগঞ্জের গন্ডি পেরিয়ে তারা হবিগঞ্জ শহরসহ মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ, বিশ্বরোড আশুগঞ্জ ও ভৈরবে তাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মোবাইল চুরি করে থাকে। কাজল সপ্তাহে ৩/৪ দিন ভৈরব শহরে অবস্থান করে জনৈক মহিলা বাউল শিল্পীর মাধ্যমে মোবাইল কেনা-বেচা করে থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে। কাজল নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক আবার কখনো ছাত্রদল নেতা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেয়।
নবীগঞ্জ শহরের রন্জু দাস এর একটি স্যামসাং মোবাইল কাগাপাশা বাজার থেকে চুরি হয়। ২দিন পর রন্জু তার মোবাইলে কল দিলে অপর প্রান্ত থেকে কাজল ফোন ধরে বলে ৮ হাজার টাকা দিয়ে মোবাইল নিয়ে যাও। পরে রন্জু তার বন্ধু সুবল ও আনফরকে নিয়ে নবীগঞ্জ বাজারে এসে কাজলকে ৮ হাজার টাকা দেন। টাকা নেয়ার পরও মোবাইল ফেরত দেয়নি কাজল। দিনারপুর গ্রামের রফিক মিয়া নামে এক ব্যক্তি জানান, কয়েকদিন আগে নবীগঞ্জ শহরে বাজার সদাই করার সময় হঠাৎ তার হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিয়ে দৌড় দেয় ছিনতাইকারী চক্র। পরে জানতে পারেন এ চক্র কাজল ও বাদল গংয়ের।
দেওতল গ্রামের শফি মিয়া জানান, এক সপ্তাহ আগে নবীগঞ্জ বাজার থেকে তার বোনের মোবাইল ফোন চুরি হয়। পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের রোমান মিয়া জানান, কয়েক মাস পূর্বে সিলেটের করিম উল্ল্যাহ মার্কেট থেকে একটি মোবাইল ক্রয় করেন তিনি। কিছু দিন মোবাইল ব্যবহারের পর পুলিশ তার সাথে যোগাযোগ করলে মোবাইলটি চোরাই বলে জানতে পারেন। পরে চোরাই মোবাইল নিয়ে তিনি নানা ভোগান্তিতে পড়েন। এক পর্যায়ে জানতে পারেন, ওই চক্রটি মূলত কাজল ও বাদল গংদের সাথে কাজ করে থাকে। ভুক্তভোগীদের দাবি, মোবাইল চোর সিন্ডিকেটের মূলহোতা কাজল ও বাদলকে গ্রেফতার করা হলে মোবাইল চুরি বন্ধ হবে।
নবীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ কামাল হোসেন জানান, মোবাইল চোর সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের ধরতে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর নবীগঞ্জ থেকে চুরি হওয়া মোবাইল তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ধরমন্ডলে অভিযান চালিয়ে ৬টি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে।