১৯৭১ সালে এইদিনে নবীগঞ্জ মুক্ত হয়েছিল
উত্তম কুমার পাল হিমেল, নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ আজ ৬ ডিসেম্বর নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব গাঁথা দিনগুলোর মধ্যে একটি দিন হল নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস। সেদিন পূর্বাকাশের সুর্যোদয়ের সাথে সাথেই মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে মুক্ত করেছিল নবীগঞ্জকে।
৩ দিনের সম্মুখ যুদ্ধের পর সেদিন সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ আগে নবীগঞ্জ থানা সদর হতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে বিতাড়িত করে মুহর্মূহু গুলি চালিয়ে বীরদর্পে এগিয়ে আসে কয়েক হাজার মুক্তিকামী জনতা। এ সময় তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের সাব সেক্টর কমান্ডার মাহবুবুর রব সাদীর নেতৃত্বে থানা ভবনে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। পরে নবীগঞ্জ ডাক বাংলোর সামনে হাজার হাজার জনতার আনন্দে উদ্বেলিত ভালবাসায় সিক্ত মাহবুবুর রব সাদী আবেগজড়িত কন্ঠে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন এবং ঐদিন বিকেলে বাহিনীসহ সিলেট রওয়ানা দেন।
৬ ডিসেম্বর নবীগঞ্জ মুক্ত হওয়ার পূর্ব থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। বিভিন্ন সময় পাকিস্তানী বাহিনীর উপর গেরিলা হামলা চালিয়ে তাদের ভীত সন্ত্রস্থ করে রাখে মুক্তিকামী সেনারা। কৌশলগত কারণে নবীগঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা নবীগঞ্জ থানা ক্যম্পাস দখলের সিদ্ধান্ত নেন। নবীগঞ্জে পাকিস্তানী বাহিনীর অন্যতম ক্যাম্প নবীগঞ্জ থানাকে লক্ষ্য করে তিন দিকে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেন। ৩ ডিসেম্বর রাত থেকে ক্ষণে ক্ষণে গুলি বিনিময় চলে উভয়ের মধ্যে। মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলগত কারণে ও আত্মরক্ষার্থে কখনোও পিছু হটা, আবার কখনোও আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানী বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করতে থাকেন। সারাদেশে পাকিস্তানী বাহিনীর অবস্থান খারাপ হওয়ায় নবীগঞ্জেও তাদের খাদ্য এবং রসদ সরবরাহ কমে আসে।
অন্যদিকে মুক্তিবাহিনী একেক সময়ে একেক দিক দিয়ে আক্রমণ চালিয়ে যায়। ৪ ডিসেম্বর রাতে থানা ভবনের উত্তর দিকে রাজনগর গ্রামের নিকট থেকে মুক্তিযোদ্ধা রশিদ বাহিনীর লোকজন পাকিস্তানী বাহিনীর উপর প্রচন্ড আক্রমণ চালায়। এ যুদ্ধে অন্যতম বীর কিশোর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা ধ্রুব ৪ ডিসেম্বর শহীদ হন এবং কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। পরদিন ৫ ডিসেম্বর রাতে নবীগঞ্জ থানায় অবস্থিত পাকিস্তানী ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা চরগাঁও ও রাজাবাদ গ্রামের মধ্যবর্তী শাখা বরাক নদীর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থান নেন। প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপী প্রচন্ড যুদ্ধের পর শক্র বাহিনী পালিয়ে যায়। পরদিন ৬ ডিসেম্বর ভোর রাতে পাকিস্তানী বাহিনীর কাছ থেকে কোন বাঁধা না আসায় মুক্তিবাহিনী বীরদর্পে শ্লোগান দিয়ে থানা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে নবীগঞ্জ উপজেলাকে মুক্ত ঘোষণা করে।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com