তাহমিনা বেগম গিনি
সত্তরোর্ধ বয়সে রাজনীতি, সমাজনীতি, সন্ত্রাসনীতি, অপহরণনীতি, চৌর্যনীতি, স্বেচ্ছাচারিতা নীতি, গুমনীতি, ভীষণ বিত্তশালী হওয়ার নীতি, আবার খুব গরীব হওয়া নীতি কতকিছুই না দেখেছি। এখন মাঝে মাঝে বসে ভাবি জানি না আর কত ঘন্টা, মিনিট, বছর বাঁচবো কিন্তু এখনও কিছু কি দেখতে বাকি আছে? নতুন শব্দ সংস্কারনীতি চলছে। সবকিছুর সংস্কার হতে হবে। হলে খুব ভাল কারণ আমাদের দেশটা কেন যেন এখন মনে হয় সেই আগের মতই চলছে। শুনে থাকি মামলা থেকে নাম কাটানোর জন্য যে পক্ষ এখন শক্তিশালী তাদেরকে টাকা দেওয়া হয় বা নেয় দখলবাজি, খুন খারাবী আগের থেকে বেশী হয়েছে। গণতন্ত্র ভোট আমরা কিছু দেখেছি এবং দিয়েছি, কিন্তু গত ১৫ বছর যারা নতুন ভোটার হয়েছিল তারা কি ভোট দিতে পেরেছে? ভোট দেওয়ার যে আনন্দ সেটা কি তারা অনুভব করতে পেরেছে? গর্ব করে বলতে পেরেছে “আমি একজন ভোটার?” এখন ভোটকে ফিরিয়ে আনতে হলে অনেক সংস্কার লাগবে। সর্বক্ষেত্রে সংস্কার লাগবে। এখনই অনেকে পকেট ভারি করার চেষ্টা করছে। রূপকথার গল্পে পড়েছি প্রেতাত্মারা মরে না, ওরা যুগে যুগে ফিরে ফিরে আসে। তাই কারা ভাল, কারা মন্দ এই বিচার অনেক কঠিন। কারা স্বাধীনতা চেয়েছিল, কারা চায়নি সেটাও এখন প্রশ্ন উঠবে। এতো হিসেব নিকেশের পর ভোট। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার অনেক কঠিন কাজ। একদিন আয়না ঘরের ছবি দেখেছিলাম- এত নৃশংস মানুষ হতে পারে? ভেবে পাইনা আমরা কোন যুগে বাস করছি? আজকাল স্কুল কলেজের ছেলে-মেয়েদের মুখের দিকে তাকালে কেন যেন সেই কমনীয়তা, কোমলতা, আদরনীয় ভাবটা পাইনা, মনে হয় আমাকে যে কোনো কথা বলতে ওদের মুখে আটকাবেনা। কেন এমন লাগে? শিক্ষার কথা বলতে গিয়ে একটা গল্প বলি- “একজন বুয়া (গৃহ পরিচারিকা) সেদিন আমার সামনে গল্প করছিল ‘জানেন খালাম্মা আমার মেয়েকে এবার বি.কে.জি.সি স্কুলে ভর্তির জন্য লটারী দেওয়ামু, লাইগ্যা গেলে তো হইল।’ আমি বললাম তোমার মেয়ে কোন স্কুলে পড়ে? ও বলল গ্রামের এক স্কুলে ভর্তি করাইছি উপবৃত্তির টাকার জন্য। আমার লগেইতো কাম করে মাঝে মধ্যে স্কুলে যায়।” আমি মনে মনে ভাবলাম অবশ্যই উনার মেয়ের এই স্কুলে পড়ার অধিকার আছে কিন্তু এত ভাল স্কুলের শিক্ষার মানটা কি আগের মতো থাকবে? এমনতো অনেক হচ্ছে। শিক্ষার সংস্কার আগেই করা প্রয়োজন। বাজারে গেলে মাথা খারাপ। জানিনা দেশের সব মানুষ তিনবেলাই পেট ভরে খেতে পারছে কি না?
যাদের দেখেছি কিছুই ছিল না তাদের অনেককে বিত্তশালী হতে দেখেছি এবং এখনও হচ্ছে। আমরা মুখে যতই বলি না কেন সব বদলে যাবে, বদলে দেবো, বদলাতে হবে, আসলেই কি তা সম্ভব? দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ রাজনীতি নিয়ে ভাবে না। তারপরও শাস্তি পাচ্ছে দেশের আঠারো কোটি মানুষ। যারা দেশ ছেড়েছেন, অনেক টাকার মালিক হয়েছেন, যারা দেশে খুব ভাল অবস্থানে আছেন তাদের কথা আলাদা। কত আন্দোলন এই লম্বা জীবনে দেখলাম, এখন এই সংস্কার আন্দোলনের ফল দেখে যেতে পারব কি না জানিনা। গুলিতে মৃত হাজার ছেলে, দৃষ্টি হারানো শত ছেলে, পঙ্গুত্ব বরণ করে নেওয়া শত শত যুবক যাদের বেশির ভাগই ছাত্র, গুম হওয়া হাজার হাজার মানুষ তাদের আত্মীয় স্বজনের জন্য খুব কষ্ট হয়। তবুও দেশকে একটি গণতন্ত্র, সার্বভৌম, সাংবিধানিক রূপরেখার মাঝে আসতে হবে এবং তা আনতে হবে দেশবাসীকেই। জানিনা কে কাকে পছন্দ করবে।
আমার একটা কবিতা মনে পড়ে গেল-
“এই পৃথিবীতে সেই তত চায়
আছে যার ভূরি ভূরি।
রাজার হস্ত করে সমস্ত
কাঙ্গালের ধন চুরি।”