আব্দুল আউয়াল তালুকদার
ইদানিং আমাদের স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের কোটা আন্দোলন নিয়ে রাজপথ বেশ গরম করার জন্য সারাদেশে মাঠে নামানো হয়েছে। ২০১৮ সালে হাইকোর্টে এক আদেশে কোটা প্রবর্তিত হয়। কোটা কখন সরকারী চাকুরিতে প্রয়োগ হয় তা অনেকে না জেনেই শুধু গুজবের কারণে এত বড় আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছে। কোটা নিয়ে বিশদভাবে শিক্ষাবিদরা কথা বলতে পারতেন তাহলেই কেবল এত বড় ধ্বংস যোগ্য একটা আন্দোলন সৃষ্টি হতে পারতো না। এসব কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে নানাভাবে দেশ বিরোধী, মানবতা বিরোধী গুজব ছড়িয়ে এই তরুণ প্রজন্মকে আন্দোলনের দিকে ধাবিত করা হচ্ছে। আমাদের তরুণ প্রজন্মের সন্তানরা সারা দিন কি করে, কোথায় যায়, ঢাকায় কোন সব বন্ধু বান্ধবের সাথে চলাফেরা করে তাদের খোজ খবর নেওয়া অভিভাবকের উচিত নয় কি? আমি প্রতিনিয়ত দেখি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ও কলেজের মেধাবী ও কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা কিসের জন্য মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য মনোনিবেশ করছে। গত ১লা জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরদের কোটা আন্দোলন নিয়ে নিয়ম মাফিক আন্দোলনের কার্যক্রম আমরা নিজের তরফ থেকে তাদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ছিল। যদিও ঢাকা শহরে বিভিন্ন রাস্তাঘাট বন্ধ করে আন্দোলন ছিল আমাদের বাসায় পৌছাতে হতো হেঁটে তারপরও সমর্র্থন ছিল। পরবর্তীতে কোটা আন্দোলনের প্রতি সরকারী তরফ থেকে পূর্ণ সমর্থনের কথা বার বার বলার পরও তারা শুনতে চাননি। এর মধ্যে হাইকোর্টে সরকার এই আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করেছিল এবং আগামী ৭ই আগস্ট আপীল বিভাগের ৩নং নাম্বার তালিকায় ছিল।
গত ১৪ জুলাই গণভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চীন সফর শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে সমস্ত বক্তব্য আমি আদ্যপ্রান্ত সব শুনেছি। সেদিন জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমন কি বক্তব্য রেখেছিলেন? তাঁর সাংবাদিক সম্মেলনের চার পাঁচ ঘন্টা পরেই সারা বাংলাদেশ সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে রাতে বিক্ষোভ হল কেন? তিনি কোথাও কোটা আন্দোলনের কাউকে রাজাকারের সন্তান বলে সম্বোধন করেননি। জাতিকে ভুল মেসেজ দিয়ে উত্তেজিত করার প্রয়াস চালানো হল। আমাদের তরুণ প্রজন্মে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তাঁরা যদি ভাল করে শুনতো তাহলে এমন মনোভাব পোষন করতে পারতো না। আমাদের তখন বার বার মনে হয়েছে আমাদের তরুণ প্রজন্ম নিয়ে আমাদের এত অহংকার ও গৌরব করি তাঁরা বিষয়টি না বুঝে শুধু গুজবের কারণে দেশকে এমন পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করতে হতো না। তরুণ প্রজন্মের এই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী নেতাদের বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে ভিন্ন খাতে আন্দোলনের গতি পরিবর্তন করে সরকার পতনের কর্মসূচী হাতে নেয়। কোটা আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে সমন্বয়য়ের নেতৃত্বে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করতে বঙ্গভবনে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করে। সকল আন্দোলনে সংগ্রামে আমরা সব সময়ই দেখি আলটিমেটাম দেয়া হয় ১৫দিন ২০দিন সময় হাতে রেখে শুধু মাত্র কোটা আন্দোলনে দেখলাম সরকারকে সময় না দিয়ে দ্রুতই দেশকে অস্থিতিশীল গভীর ষড়যন্ত্রে সাথে তারা জড়িত হয়ে পড়ে। তবে আমার সবচেয়ে খারাপ লেগেছে আমি নিজেও কোন রাজনীতির সাথে সম্পর্ক নেই, কিন্তু মহান মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। যারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতা করেছিল সেই আল বদর রাজাকারদের নিয়ে মিছিল করে। “তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার” এই প্রজন্মের সন্তানরা তোমরা তো জান না এই রাজাকার এই দেশকে কি ক্ষতি করেছে কত মা বোনদের ইজ্জ্বত লুন্ঠীত করেছে কত মুক্তিযোদ্ধাদের শহীদ করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে সব মিথ্যা অকল্পনীয় গুজব ছড়ানো দেখলাম আমাদের প্রজন্ম এইগুলো কিভাবে করতে পারে। বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, দুর্যোগ ভবন, সেতু ভবন, বিআরটিএ অফিসে, বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নি সংযোগ সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হল ভাংচুর ও বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে অগ্নি সংযোগ কোন সুস্থ মস্তিকের মানুষ করতে পারে না। শুধুমাত্র মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে অনেক ছাত্রছাত্রীদের ভুল বার্তা দিয়ে তাদেরকে রাজ পথে নামানো হয়েছে। আমি কোটা আন্দোলনে অনেক ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞেস করলাম কিসের আন্দোলন? কার সাথে আন্দোলন? এসবের মানে কি? তারা কিন্তু সঠিক জবাব দিতে পারেনি। তবে আমি সব সময় হত্যাকারীর বিরোধী যে সকল ছাত্রছাত্রী এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন তার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী করছি এবং তাদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি। আপনার সন্তানের দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে। দূর থেকে বলবেন সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, অথচ নিজের সন্তানের দুবর্লতাগুলো আপনি দেখবেন না। আমাদের মফস্বল শহর থেকে যাদের সন্তান ঢাকায় পড়াশোনা করেন অধিকাংশ অভিভাবকরা জানেন না তাঁর সন্তান ঢাকায় গিয়ে কি করে কোথায় যায় কার সাথে চলাফেরা করে। ইদানিং বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে দেখলাম এই কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা না বুঝে সরকার বিরোধী তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে বিভিন্ন নেতিবাচক শব্দ প্রয়োগ করে পরিবেশ পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। এই সব বিভ্রান্তিকর শব্দ পরিত্যাগে বিরত থাকার জন্য কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের অভিভাকদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ করছি।