আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌঁড় প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে চাপাইনবাবগঞ্জের ১০ বছরের কিশোরী সোনিয়া। তার ঘোড়া দৌঁড়ের ছবি ফেসবুকে এখন ভাইরাল। শুক্রবার উপজেলার শাইলগাছে অনুষ্ঠিত হয় এ ঘোড়দৌঁড় প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতায় সাতক্ষীরা, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও হবিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক ঘোড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। দৌঁড়ে প্রথম হয় চাপাই নবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বকলা গ্রামের দিনমজুর মতিউর রহমানের কিশোরী কন্যা সোনিয়া আক্তার। সে টাঙ্গাইলের আবুল হাসেম এর সাথে ঘোড়ার সওয়ারী হিসেবে এসেছিল। আবুল হাসেম এর ঘোড়া প্রথম পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে একটি মোটরসাইকেল। দ্বিতীয় পুরস্কার একটি ফ্রিজ ও তৃতীয় পুরস্কার একটি টিভিও একই ঘোড়ার মালিক আবুল হাসেম ছিনিয়ে নেন। সেখানে অন্য দুই কিশোর সওয়ারী হিসেবে আসে। তাদেরকে পেছনে ফেলেই সোনিয়ার ঘোড়া প্রথম হয়।
শুক্রবার এ প্রতিযোগিতার পর সন্ধ্যায় সোনিয়ার ঘোড়া দৌঁড়ের ছবিটি মুহূর্তেই ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এতে কিশোরীকে উৎসাহ দিয়ে শত শত ফেসবুকার অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং তাকে নারীর এগিয়ে যাওয়ার বাহক হিসেবে প্রচারণা চালান। অনেকেই সোনিয়াকে অনুসরণ করে নারীকে বেরিয়ে আসার আহবান জানান। এ নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয় সারা হবিগঞ্জে।
এ বিষয়ে প্রথম হওয়া ঘোড়ার মালিক টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার আবুল হাসেম বলেন, আমি সারা দেশেই সৌখিন হিসেবে ঘোড়া দৌঁড়াতে যাই। সোনিয়াকে আমি বগুড়ায় প্রথম ঘোড়া দৌঁড়ে দেখি। পরে তার পিতা মতিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করে আজ (১৩ মার্চ) তাকে সওয়ার হিসেবে চুনারুঘাটে ঘোড়া দৌঁড়ে নিয়ে আসি। তিনি বলেন, সোনিয়া গরীব পিতার সন্তান। তার আয় দিয়ে সে লেখাপড়া করে।
সোনিয়ার সাথে কথা হলে সে জানায়, তারা গরীব। তার পিতা অন্যের জমি চাষ করেন। সে স্থানীয় ভিটেবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে গত ৪ বছর ধরে এভাবে সারা দেশেই ঘোড়ার সওয়ারী হয়ে অনেক পুরস্কার পেয়েছে। সে বিজয়ী হলেও পুরস্কার পায় ঘোড়ার মালিক। আর তাকে দেওয়া হয় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। তা দিয়েই সে লেখাপড়া করে ও পরিবারে সাহায্য করে।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লস্কর। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আবু তাহের, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কাউসার আহমেদ। প্রতিযোগিতায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ দর্শক ছিল বলে ধারণা করা হয়।