হবিগঞ্জে স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবানে কর্মশালা
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জে স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নবিষয়ক দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার হবিগঞ্জ শিল্পকলা অডিটরিয়ামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের সহায়তায় জেলার প্রশাসন এই কর্মশালার আয়োজন করে। এ কর্মশালার উদ্বোধনী সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মর্জিনা আক্তারের পরিচালনায় কর্মশালায় ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (এসডিজি বিষয়ক) মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান এনডিসি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আশরাফ উদ্দিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট পরিচালক (উপসচিব) মোহাম্মদ আলী নেওয়াজ রাসেল। কর্মশালা সম্পর্কে ধারণা দেন গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের উপপরিচালক (সিনিয়র সহকারী সচিব) মোঃ আরিফুল হক মামুন। ভার্চুয়াল বক্তৃতায় জুয়েনা আজিজ বলেন দেশের কোন মানুষকে আর পিছিয়ে রাখা যাবে না। দেশের মানুষ যাতে সুখে থাকে, শান্তিতে থাকে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
কর্মশালায় জানানো হয়, সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সাফল্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকার জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০ এজেন্ডা তথা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) এবং নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে বদ্ধ পরিকর। এই উদ্দেশ্যকে সম্মুখে রেখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট (জিআইইউ) নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এই ধারাবাহিকতায় জিআইইউ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে জনপ্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় “আমার গ্রাম আমার শহর” আদর্শকে ধারণ করে প্রতিটি জেলায় ও উপজেলায় ‘স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়ন’ বিষয়ক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
২০১৬ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত মেয়াদের বৈশ্বিক এ উন্নয়ন এজেন্ডা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা প্রণয়নে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করে। এসডিজির ১৭ টি অভীষ্টের আওতায় ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রার প্রতিটির জন্য ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়, বিভাগ চিহ্নিত করা হয়েছে। এসডিজি বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত প্রাপ্তিকল্পে ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও সম্পদের প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিতকরণ পূর্বক প্রণীত হয়েছে। অধিকন্তু, সকল মন্ত্রণালয়- বিভাগ কর্তৃক এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। যেহেতু এসডিজি মূলত একটি বৈশ্বিক উন্নয়ন এজেন্ডা এবং এর বাস্তবায়ন একটি দীর্ঘমেয়াদি বিষয়, কাজেই যথাযথভাবে এটি অর্জনের জন্য স্থানীয়করণ ও অগ্রাধিকার নির্ণয়ের কোন বিকল্প নেই।
এজেন্ডা ২০৩০-তে ১৭টি অভীষ্টের আওতায় ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রা এবং ২৩২টি সূচক রয়েছে। সূচকসমূহ সকল দেশের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য নয়। অনেক দেশের জন্যে বেশকিছু সূচক প্রযোজ্য নয়। সূচক সমূহের ব্যাপ্তি এত বিস্তৃত যে সবগুলো সূচক বাস্তবায়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। অন্য দিকে বেশকিছু সূচক রয়েছে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা নিবিড়ভাবে বাস্তবায়ন করলে অন্য অনেক সূচক আপনা আপনি বাস্তবায়িত হয়ে যাবে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রাসমূহ পারস্পরিকভাবে সম্পর্কিত। কোন একটি লক্ষ্যমাত্রায় ভালো ফলাফল প্রত্যাশা করা মানে এর সাথে যুক্ত সকল সূচকে ভাল ফলাফল নিশ্চিত করা। ফলশ্রুতিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা, রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার এবং চাহিদার আলোকে এসডিজির সূচকের অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন করছে। সকল দেশ অবশ্যই সকল লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর, তবে এই পদ্ধতি এসডিজি বাস্তবায়নের একটি স্থানীয় কৌশল হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে, বাংলাদেশে ‘এসডিজি ওয়ার্কিং টিম’ এর তত্ত্বাবধানে ৩৯টি সূচকের মাধ্যমে ‘সূচকের ভিত্তিতে বাংলাদেশের এসডিজি অগ্রাধিকার তালিকা’ প্রস্তুত করা হয়েছে (সংযুক্ত)।
স্থানীয় পর্যায়ে এসডিজি বাস্তবায়নের নিরিখে নাটোর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘স্থানীয় করণের মডেল’ ইতোমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। যেখানে জেলা পর্যায়ের সকল সরকারি দপ্তরের আগামী ২০৩০ পর্যন্ত স্থানীয় চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে ভবিষ্যতের জন্য ‘টেকসই বাংলাদেশ’ গড়ার মানষে দপ্তর ভিত্তিক কৌশল, কর্মকান্ড এবং সূচক নির্ধারণ করেছে। আশা করা যায় একই ভাবে যদি সকল জেলাসমূহ কৌশল পত্র প্রণয়ন করে, তাহলে কেন্দ্রিয়ভাবে এসডিজি বাস্তবায়ন কৌশল এবং কর্মকান্ড নির্ধারণ বা পুনঃনির্ধারণ সহজ হবে।
এ কর্মশালায় জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা, মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা, শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা, হাওর উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ ১০০ অংশগ্রহণ করেন।