মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ দলিত জনগোষ্ঠীর জীবনের উপর ধর্মের প্রভাব তাদের জীবন সংগ্রামের মতই একটি অত্যাবশ্যকীয় অংশ। ধর্মের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা আর ভালবাসা থাকায় তারা অনৈতিক, অসামাজিক, রাষ্ট্র বা সরকার বিরোধী কোন কর্মকান্ডে জড়িত হয় না। তাই দলিত জনগোষ্ঠীর অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখতে তাদের নামের আগে দলিত শব্দটি ব্যবহার না করে অন্য কোনভাবে নামান্তর করে তাদেরকে সমাজের মূল ¯্রােতে ফিরিয়ে আনার দাবি সচেতন মহলের।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সন্তোষ তাঁতী বলেন, দলিত জনগোষ্ঠীর জীবনের উপর ধর্মের প্রভাব তাদের জীবন সংগ্রামের মতই একটি অত্যাবশকীয় অংশ। তাদের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় শহরের উজ্জলতা বা প্রাচুর্য্যরে অভাব থাকলেও আন্তরিকতায় তারা কোন অবস্থাতেই পিছিয়ে নেই। ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনের ক্ষেত্রে তারা সর্বদা আন্তরিকতা ও শ্রদ্ধার উপর নির্ভরশীল। দলিত জনগোষ্ঠী চাকচিক্যহীনভাবে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করে থাকে এবং ধর্মের প্রতি তাদের অগাধ শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস থাকায় তারা সব সময়ই তাদের ধর্মের প্রতি আনুগত্যশীল হয়। যদি আমরা বর্তমান প্রেক্ষাপট চিন্তা করি, দলিতরা অন্যের দ্বারা নির্যাতিত নিগৃহীত হলেও তাদের জনগোষ্ঠী দ্বারা কোন মানুষ অত্যাচারিত হয়নি। মূলত তারা মনসা পূজা, শীতলা দেবীর পূজা, চড়ক পূজা, কালী পূজা, রাখাল পূজা করে থাকে। ইদানিংকালে তাদেরকে দুর্গা পূজাতেই বেশি মনোনিবেশ করতে দেখা যায়। এছাড়া ধর্মীয়ভাবে নিজেকে উন্নত করার জন্য তারা গুরুদীক্ষা নিয়ে থাকে। ধর্মের প্রতি দলিত শ্রেণির লোকজনের অগাধ শ্রদ্ধা ভালবাসা থাকায় তারা সমাজে অনৈতিক, অসামাজিক এবং রাষ্ট্র বা সরকার বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত হয় না বললেই চলে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ হবিগঞ্জ সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অলক কুমার চন্দ বলেন, ধর্মীয় সংখ্যাগুরুদের প্রভাবের কারণে দলিত জনগোষ্ঠীর লোকেরা নিজেদেরকে সমাজে গুটিয়ে রেখে ধর্মীয় চিন্তা চেতনায় নিজেদেরকে ব্রত রাখতে দেখা যায়। দলিত শ্রেণি আর্থিক অনটনের কারণে হয়তো তাদের চাহিদা মতো জাঁকজমকভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করতে পারে না। কিন্তু তাদের যে শ্রদ্ধা, ভক্তি এবং আন্তরিকতা থাকে সমাজে অনেক ক্ষেত্রেই তা দেখা যায় না। মূলত এই শ্রেণির মানুষেরা যুগযুগ ধরে নানা কায়দায় অত্যাচারিত নির্যাতিত হয়ে আসছে। তাই তারা সমাজে তথাকথিত মানুষরূপী লোকজনের থেকে দেব-দেবীর আরাধনাকেই তাদের একমাত্র উদ্ধারের উপায় বলে মনে করে। তাই দলিত জনগোষ্ঠীর অস্থিত্ব রক্ষায় তাদের নামের আগে দলিত শব্দটি ব্যবহার না করে অন্যকোনভাবে নামান্তর করে তাদের সমাজের মূল ¯্রােতে ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রকে গুরুদায়িত্ব নিতে হবে। আর এটি এখন সময়ের দাবি।