নবীগঞ্জে শিশু হামজা হত্যা সম্পর্কে আরো তথ্য দিলেন পুলিশ সুপার
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ মামার বয়স তিন বছর আর ভাগ্নির বয়স মাত্র ২ বছর। শিশুবয়সী মামা-ভাগ্নির মধ্যে প্রায়ই শিশুসুলভ ঝগড়া হতো। ঝগড়ায় শিশু আমীর হামজার হাতে পিটুনির শিকার হতো ২ বছরের ভাগ্নি। এ বিষয়টি সহ্য করতে পারছিলেন না মেয়েটির মা রোজিনা বেগম ওরফে রোজী (২৫)। তাই তিনি শিশু আমীর হামজাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন। হত্যার পর বস্তাবন্দি করে লাশ গুমের চেষ্টাও করে ঘাতক চাচাতো ভাই-বোন। গ্রেফতারের পর হবিগঞ্জের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা বেগমের আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে নিহতের চাচাতো ভাই জুনাইদ আহমদ (২০) ও চাচাতো বোন রোজিনা বেগম ওরফে রোজী (২৫)। আদালতে তারা হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বিপিএম-পিপিএম।
পুলিশ সুপার জানান- নবীগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে আমীর হামজা (৩) এর সাথে প্রায়ই তার চাচাতো বোন রোজিনা বেগমের ২ বছর বয়সী মেয়ের ঝগড়া হতো। বিষয়টি সে আমীর হামজার মা অর্থাৎ তার চাচীকেও বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছে। কিন্তু চাচী তাতে জোরালো কোন পদক্ষেপ নেননি। বিষয়টি সহ্য করতে পারেনি রোজিনা। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে চাচাত ভাই আমীর হামজাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ২ নভেম্বর বিকেলে পরিকল্পনা অনুযায়ী কৌশলে হামজাকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করে রোজিনা। হত্যাকান্ডের বিষয়টি রোজিনার ভাই জুনাইদ দেখে ফেলে। পরে সে লাশ গুম করতে বস্তাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এনে সহায়তা করে। আমীর হামজাকে হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলতে রোজিনা আমীর হামজার মরদেহ বস্তাবন্দি করে নিজের ঘরে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে। এদিকে আমির হামজার মা-বাবা তাকে না পেয়ে খোঁজাখুজি শুরু করেন। কেউ যাতে সন্দেহ না করে তাই জুনাইদও খোঁজাখুজিতে অংশ নেয়। বিষয়টি যাতে ধরা না পড়ে এজন্য রাতে রোজিনা আমীর হামজার বস্তাবন্দি লাশ নিজের খাটের নিচ থেকে বের করে জুনাইদের শয়নকক্ষের পেছনে সিএনজি অটোরিকশার গ্যারেজের এক কোনে ফেলে রাখে। ওই রাতেই খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে সেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে স্কচটেপ, বালিশ ও বস্তা উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে জুনাইদ আহমদকে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে জুনাইদ হত্যাকান্ডের বিষয়টি স্বীকার করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে রোজিনাকে আটক করে। পরে আটককৃতরা হত্যাকান্ডের বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এ প্রেক্ষিতে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা বেগমের আদালতে তাদের হাজির করা হলে সেখানে তাদের স্বীকারোক্তি রেকর্ড করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা আব্দুর রশিদ বাদি হয়ে গ্রেফতারকৃত ২ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরীসহ হবিগঞ্জের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ।