হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারের কাছে আন্দিউড়া ও বহরা ইউপি চেয়ারম্যানসহ কয়েকশ’ মানুষের অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ আপন চার ভাইসহ উজ্জল মিয়া পাঠান ও তার বাহিনী মাধবপুরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তাদের অত্যাচার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এলাকাবাসী। তাদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে এলাকার শত শত মানুষ হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। একাত্মতা পোষণ করে এলাকাবাসীর আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন আন্দিউড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ খান ও বহরা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আরিফুর রহমানসহ কয়েকজন ইউপি মেম্বার।
অভিযোগে উজ্জল পাঠান ও তার লোকজন চুরি-ডাকাতি, মাদক, দাদন ব্যবসা ও দখলবাজিসহ এহেন কাজ নেই যা এ বাহিনী করে না। তাদের ভয়ে কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষ তটস্থ। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের উপর নেমে আসে অত্যাচার ও নির্যাতন। মিথ্যা মামলা দিয়ে করা হয় হয়রানী। অনৈতিক কাজ করে শূন্য থেকে কোটিপতি বনে গেছেন উজ্জল পাঠান। মাদক, নারী নির্যাতন ও খুনসহ ডজনখানেক মামলা ও সাধারণ ডায়েরী মাথায় থাকলেও এসবের তোয়াক্কা না করে বীরদর্পে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি ও তার বাহিনী। এলাকায় শতাধিক মানুষ তার দাদন ব্যবসার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়ে এখন পথে বসেছেন। মাধবপুর পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ডের গুনি মিয়ার ছেলে উজ্জলের বাড়ির পাশ দিয়ে কয়েক গ্রামের মানুষ যাতায়াত করার সুবাদে প্রায়ই পথচারীদের টাকা-পয়সা ছিনতাই করে রেখে দেয় তার বাহিনী। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ২০১৩ সালে মাধবপুর পৌরসভার মেয়রসহ কয়েকটি গ্রামের শতাধিক মানুষ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরও কোন প্রতিকার না হওয়ায় পরবর্তীতে উজ্জল তার ৪ ভাইসহ কয়েক অপরাধীকে নিয়ে একটি বাহিনী গঠন করেন। শুরু করেন মাদক ব্যবসাও। এক পর্যায়ে গড়ে তোলেন দাদন ব্যবসার একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অসহায় লোকদেরকে ফাঁদে ফেলে সাদা স্ট্যামে স্বাক্ষর রেখে অনেকের ভিটে মাটি জায়গা-জমি নিজের নামে লিখে নিয়েছেন। অনেককে ভয়ভীতি ও মারধোর করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেন। গত ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যারাতে উজ্জল বাহিনীর অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে কয়েকটি গ্রামের হাজারো জনতা জড়ো হয়ে প্রতিবাদ সভা করেন। সভা শেষে বাড়ি ফেরার পথে প্রতিবাদী লোকজনের উপর উজ্জল বাহিনী হামলা করে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এরই মধ্যে উজ্জলের প্রতিবন্ধী ভাই রাষ্টু মিয়া নিজ বাড়িতে রহস্যজনক খুন হয়। প্রতিবাদকারীদের ফাঁসাতে উজ্জল রাষ্টু খুনের দায় চাপিয়ে দেয় এলাকার শান্তিপ্রিয় জনসাধারণের উপর। তাদের নামে দায়ের করা হয় হত্যা মামলা। মামলা দায়েরের ফলে কয়েক গ্রামের সাধারণ মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের অত্যাচার ও মিথ্যা মামলার ফাঁদ থেকে বাচঁতে আন্দিউড়া ও বহরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ কয়েকশ’ মানুষ স্বাক্ষরিত একটি আবেদন দিয়েছেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারের কাছে। আবেদনে স্বাক্ষরকারীরা রাষ্টু হত্যার সুষ্ঠু ও নিরেপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন। ঘটনার পর পরই উজ্জল বাহিনী মোটরসাইকেল নিয়ে সশস্ত্র মহড়া দেয়া শুরু করে। এতে এলাকার নারী ও শিশুরা ভয়ে আতংকে আছে।
আবেদনের অনুলিপি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী, সিলেটের ডিআইজি ও মাধবপুর থানার ওসিসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।