স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা মহামারির কারণে এবার বাংলাদেশে শারদীয় ‘দুর্গোৎসব’ নয়, ‘দুর্গাপূজা’ পালন করেছে হিন্দু সম্প্রদায়। গতকাল ছিল দুর্গাপূজার মহানবমী। মহানবমী মূলত দেবীকে প্রাণ ভরে দেখার দিন। কারণ পরের দিন কেবল বিসর্জনের পর্ব। আর নবমীর রাতই দুর্গাপূজার শেষ রাত।
আজ বিজয়া দশমী। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গাপূজার। অশ্রুসজল নয়নে ভক্তকুল দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাবেন। সনাতন ধর্ম মতে, আজ দেবী ফিরে যাবেন কৈলাসে। মহালয়ার মধ্য দিয়ে যে দেবীপক্ষের সূচনা হয়েছিল বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তার সমাপন ঘটবে আজ। এবারে দেবী দুর্গার আগমনে একটু ছন্দপতন ঘটেছিল। দেবী এসেছেন শরত পেরিয়ে হেমন্তবেলায়। শাস্ত্র মতে, এবার আশ্বিন মাস ‘মল’ মাস হওয়ায় পূজা গড়িয়েছে কার্তিক মাসের প্রথম পক্ষে। পঞ্জিকামতে, এবার দেবী এসেছেন দোলায় চড়ে। শাস্ত্রমতে- দোলায়ং মড়কং ভবেৎ। ভক্তকুলের জন্য এটা অস্বস্তির কারণ। তবে দেবী স্বর্গলোকে ফিরে যাচ্ছেন গজে চড়ে। শাস্ত্রমতে এর ফল শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা। ভক্তের জন্য এটা স্বস্তিদায়ক। জগৎজননী মা প্রকৃতি ও মানবকুলকে আলোকিত করে যাবেন। আগামী শরতে দেবী ফিরে আসবেন- এমন প্রত্যাশা নিয়েই মাকে বিদায় জানাবেন তার ভক্তরা।
বাংলাদেশ বরাবরই ধর্মীয় সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির এক মেলবন্ধন। সবাই স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার পূজাকে সীমিতকরণ করা হলেও আনন্দঘন আবহের সৃষ্টি হয়েছে। পূজায় এবার কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সামাজিক সহিষ্ণুতা ও উদারতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের তীক্ষè নজরদারি এক্ষেত্রে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে।
হিন্দুরা বিশ্বাস করেন অসুরকুলের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দেবকুলকে রক্ষা করেছিলেন দুর্গতিনাশিনী দুর্গা। সেই থেকে বিজয় ঘটে শুভশক্তির। দেবীর আগমন ঘটে অন্যায়ের বিনাশ ঘটিয়ে সজ্জনদের প্রতিপালনের অঙ্গীকার নিয়ে মানুষের মধ্যে নৈতিক আদর্শ জাগ্রত করার জন্য। মানুষের চিত্ত থেকে যাবতীয় দীনতা ও কলুষতা দূরীভূত করার জন্য। এ জন্য দুর্গোৎসব ধর্মীয় উৎসব হলেও তা সার্বজনীন উৎসব। মানুষে মানুষে প্রীতি, প্রেম, সহিষ্ণুতা, ঐক্য ও শান্তির ডাক দিয়ে যায় ধর্ম। তারপরও অসুরের আকস্মিক উন্মত্ততা নষ্ট করে দেয় আবহমানকালের প্রীতিধন্য পারস্পরিক সহাবস্থানকে। ধ্বংস করতে চায় দীর্ঘকালীন হৃদ্যতাকে। সৃষ্টি হয় বৈষম্য, বিভেদ, হিংসা, অন্যায় ও অকল্যাণ। আর এ জন্যই মঙ্গলদাত্রী দেবী দুর্গার আগমন ঘটে কল্যাণ ও শান্তি সংস্থাপন করার জন্য। এবার মহামারী করোনা ছাড়াও বন্যাসহ বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়েছে দেশবাসীকে। সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষকদের তান্ডবও চলছে। সরকার এই ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে এটা স্বস্তির বিষয়। তবে করোনামুক্ত পৃথিবী মায়ের কাছে এই মুহূর্তের প্রার্থনা। মা তার ভক্তকুলকে সকল অপশক্তির হাত থেকে রক্ষা করবেন অতীতের মতো। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট থাকুক। দূর হোক সব সঙ্কীর্ণতা ও বিভেদ- মা দুর্গা যেন সেই শক্তি, সৌহার্দ্য সবার হৃদয়ে ও মনে জাগ্রত করেন।