প্রতিপক্ষ অনিক পান্ডেসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করে থানায় জোনাকীর মায়ের মামলা
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বানিয়াচঙ্গে পরকীয়া প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গিয়ে দুই সন্তানের জননী জোনাকী আক্তার (২২) নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার সকালে মামলাটি দায়ের করেন নিহত জোনাকীর মা হেনা আক্তার। মামলায় জোনাকীর প্রেমিক অনিক পান্ডেসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করা হয়।
মামলায় উল্লেখ করা হয় জোনাকীকে অপহরণ করে নেত্রকোনায় নিয়ে অনিক পান্ডে ও তার সহযোগীরা হত্যা করে। নিহতের মা হেনা আক্তার হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের মর্গের সামনে গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, অনিক পান্ডেদের সাথে তাদের পূর্ব বিরোধ চলছিল। এ বিরোধের জের ধরে ইতিপূর্বে অনিক পান্ডে বলেছিল আমাদেরকে দেখে নেবে। এর জের ধরেই আমার মেয়েকে অপহরণ করে হত্যা করে লাশ গুম করতে চেয়েছিল। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। এদিকে গতকাল নিহত জোনাকী আক্তারের লাশের ময়না তদন্ত শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। অপরদিকে অনিক পান্ডেকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
শনিবার রাতে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অনিক পান্ডে স্বীকার করে কয়েক মাস পূর্বে ফেসবুকের মেসেঞ্জারে চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে পরিচয় হয় একই উপজেলার রঘুচৌধুরী পাড়া গ্রামের আবু মিয়ার কন্যা দুই সন্তানের জননী জোনাকী আক্তারের (২২)। পরিচয়ের সময়ে অনিক পান্ডে জোনাকীর কাছে নিজেকে মুসলিম যুবক হিসেবে পরিচয় দেয়। এক পর্যায়ে জোনাকীর সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের টানে জোনাকী অনিকের কর্মস্থল নেত্রকোনায় চলে যায়। সেখানে যাওয়ার পর অনিকের সাথে কথা বলে জোনাকী জানতে পারে অনিক হিন্দু। এ অবস্থায় ঘরছাড়া হয়ে জোনাকী বিপাকে পড়ে। অপরদিকে অনিক মুসলিম মেয়েকে তার স্ত্রী হিসেবে কিভাবে ঘরে রাখবে এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায়। মানুষের কাছে নিজেদেরকে স্বামী-স্ত্রী বুঝানোর জন্য জোনাকীকে বুঝিয়ে তার কপালে সিদুঁর ও হাতে শাঁখা পরিয়ে তাকে স্ত্রী হিসেবে বাসায় তুলে। যেদিন জোনাকী অনিকের বাসায় গিয়েছিল সেদিন অনিক তার সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করতে চেয়েছিল। কিন্তু হিন্দু জেনে জোনাকী তার সাথে দৈহিক মিলনে রাজি হয়নি। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। তাকে নির্যাতন শুরু করে অনিক। গত শুক্রবার রাতে জোনাকী মারা যায়। জোনাকী মারা যাওয়ার পরই অনিক তার লাশ গুম করার জন্য নেত্রকোনা থেকে বানিয়াচঙ্গের উদ্দেশ্যে এম্বুলেন্সে করে রওয়ানা দেয়। শনিবার বিকেলে হবিগঞ্জ-বানিয়াচং সড়কের শুটকি এলাকায় এসে লাশ পানিতে ফেলার সময় স্থানীয় লোকজন দেখে তাকে আটক করে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অনিক তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক ও জোনাকীর পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে। তবে সে জোনাকীকে হত্যার কথা অস্বীকার করে।
বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ-ওসি মোহাম্মদ এমরান হোসেন জানান, আটক হওয়ার পর অনিক পুলিশের কাছে জোনাকীর সাথে তার পরকিয়া প্রেমের ঘটনার বর্ণনা দেয়। তবে সে জানায়, জোনাকী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ওসি বলেন- জোনাকীর লাশের ময়না তদন্ত হয়েছে, রিপোর্ট পাওয়ার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।