স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার সাঈদ আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যু পরোয়ানা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়।’ এর আগে বুধবার সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে রায় প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
গত ১৪ জানুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে সৈয়দ কায়সারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম (সদ্য প্রয়াত), অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান।
সৈয়দ কায়সারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদন্ড আপিল বিভাগ বহাল রাখায় শুধু এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার সুযোগ পাবেন তিনি। রিভিউ খারিজ হলে তাঁর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে পারবে সরকার। এর আগে গত বছরের ২ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপিল শুনানি শেষ হয়। শুনানি শেষে রায়ের জন্য ২২ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়। গত ১০ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপিলের শুনানি শুরু হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধের দায়ে সৈয়দ কায়সারকে ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর মৃত্যুদন্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করে ওই দুই জেলায় যুদ্ধাপরাধে নেতৃত্ব দেন তখনকার এই মুসলিম লীগ নেতা। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে তিনি ছিলেন বিএনপির নেতা। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময় জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন সৈয়দ কায়সার।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক বলেন, সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ১৬ অভিযোগের মধ্যে ১৪টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাঁকে প্রাণদন্ড দেওয়া হয় ৩, ৫, ৬, ৮, ১০, ১২ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে, যার মধ্যে দুই নারীকে ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে। ওই দুই বীরাঙ্গনার মধ্যে একজন এবং তাঁর গর্ভে জন্ম নেওয়া এক যুদ্ধশিশু এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। সৈয়দ কায়সার ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন।