করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য ইসলামী একাডেমি কর্তৃপক্ষের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
বাড়িতে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলাকালে অভিভাবকরা পালন করছেন শিক্ষকের দায়িত্ব

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হঠাৎ করেই করোনা হানা দেয় বাংলাদেশে। করোনা মোকাবেলায় সারা দেশে লকডাউনসহ কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে তৎপর হয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ রাখতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে না আসায় এখনো বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা যাতে পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামী একাডেমি এন্ড হাই স্কুল কর্তৃপক্ষ। অবশ্য এতে আশাতীত সাফল্যও দেখছেন তারা। আর শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। শিক্ষকরা প্রশ্ন করে নির্ধারিত ভেন্যুতে পৌঁছে দিচ্ছেন। আর তা থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করে নিজেদের বাড়িতে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আর এ ক্ষেত্রে বাড়িতে অভিভাবকরা পালন করছেন শিক্ষকের দায়িত্ব। এতে শিক্ষার্থী-অভিভাবক উভয়েই খুশি।
এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামী একাডেমি এন্ড হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল হক জানান- করোনার কারণে ১৬ মার্চ থেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আমরা ১৫/২০ দিন অপেক্ষা করেছি স্কুল খোলার জন্য। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে না আসায় স্কুল খোলার নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। ফলে ১২ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানের ১ম সাময়িক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা নেয়া সম্ভব হয়নি। এ পরিস্থিতি আমাদের ভাবিয়ে তুলে। পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে কিভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় তার জন্য আমরা সকল শিক্ষকদের নিয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বৈঠকে বসি। পরে হোয়াট্স অ্যাপ একাউন্টের মাধ্যমে ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রথমদিকে আমরা ৭০ ভাগ সাড়া পাই। পরে অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করে তা ৯৯ ভাগে উন্নীত করি। তার জন্য পর্যায়ক্রমে অভিভাবকদের নিয়ে ২৭টি সমাবেশ করতে হয়েছে। অনলাইন ক্লাস পরিচালনার জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হয়েছে। বর্তমানে সকল বিষয়ে অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস পরিচালনা করা হচ্ছে। স্কুলে যেভাবে ক্লাস পরিচালিত হতো সেভাবেই ক্লাস নেয়া হচ্ছে। বরং আগে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে ক্লাস নিতেন কিন্তু অভিভাবকদের তেমন বেগ পেতে হতো না, কিন্তু এখন অভিভাবকদেরও এর সাথে জড়িত করা হয়েছে। ফলে এখন তারাও নিয়মিত উপস্থিত থেকে সন্তানের লেখাপড়া পর্যবেক্ষণ করছেন। জুলাই মাস থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তা করা হচ্ছে। ভিডিও কলের মাধ্যমে শিক্ষকরা ছাত্রদের পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছেন, পাশে বসে তা পর্যবেক্ষণ করছেন অভিভাবক। তাতে অভিভাবকদের অংশগ্রহণ দেখে আমরাও অভিভূত।
হবিগঞ্জ শহর, চুনারুঘাট, অলিপুরসহ বিভিন্ন স্থানের শিক্ষার্থীরা শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামী একাডেমি এন্ড হাই স্কুলে লেখাপড়া করে থাকে। করোনার কারণে যেহেতু শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারছে না সেই কথা মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের নিকটবর্তী স্থানে ১৫টি ভেন্যু পরীক্ষা কেন্দ্র নির্বাচিত করা হয়েছে। ২০ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে পরীক্ষা। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ওই নির্বাচিত ভেন্যুতে সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে প্রশ্নপত্র নিয়ে হাজির হচ্ছেন। আর অভিভাবকরা ওই ভেন্যু থেকে ৯টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে প্রশ্নপত্র গ্রহণ করে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে নিজে উপস্থিত থেকে সন্তানের পরীক্ষা গ্রহণ করছেন। বিকেল ২টার মধ্যে উত্তরপত্র সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন। তাছাড়া হোয়াট্সআপেও পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়। পরীক্ষা চলাকালীন শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের বাড়ি পরিদর্শন করেন। শিক্ষার্থীদের টেবিল থেকে পাঠ্য বই, গাইড বই, খাতা সরিয়ে বিদ্যালয়ের পরিবেশে স্কুল ড্রেস পড়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। আর অনলাইনে তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীরা নির্জিবতা কাটিয়ে অনেক চনমনে ও আত্মবিশ্বাসী হয়েছে। শুধু তাই নয় যারা করোনার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়িতে অবস্থান করছে তারাও অনলাইনে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সৌদি আরব থেকে ৩ জন শিক্ষার্থী অনলাইনে পরীক্ষা দিচ্ছে। অনলাইন ক্লাস চালুর ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় তেমন ক্ষতি হচ্ছে বলে মানতে নারাজ তিনি। তিনি বিশ্বাস করেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিলে যত কঠিন পরীক্ষাই গ্রহণ করা হোক না কেন এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভাল করবে।

আগামীকাল দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকায় পড়ুন ‘ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামী একাডেমি এন্ড হাই স্কুল ॥ বার বার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করছেন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল হক’