মাকে হত্যায় ভাইয়ের স্ত্রী জড়িত বলে দাবি করেন শিল্পী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জের নীলু সূত্রধর হত্যাকান্ডের ঘটনায় আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছে পুলিশ। মামলার বাদী নিহত নীলু সূত্রধরের মেয়ে শিল্পী সূত্রধরের অভিযাগ চার্জশীটে মূল ঘটনা উন্মোচিত হয়নি। তিনি দাখিলকৃত চার্জশীটের বিরুদ্ধে গত ২০ আগস্ট আদালতে নারাজি দিয়েছেন। আদালত আগামি ৩ সেপ্টেম্বর নারাজির উপর শুনানির দিন ধার্য্য করেছেন।
মামলার চার্জশীট অন্তর্ভুক্ত ৭ জন সাক্ষি আদালতে এফিডেভিট দিয়েছেন। সাক্ষিদের অভিযাগ চার্জশীটে পুলিশ যে ঘটনাটি উল্লেখ করেছে এ বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। তদন্তকারী কর্মকর্তা ইনাতগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সামসুদ্দিন খান সাক্ষীদের কোন সাক্ষ্য গ্রহণ না করেই আসামীপক্ষ দ্বারা বশীভূত হয়ে মিথ্যা, কাল্পনিক বর্ণনা দিয়ে ১৬১ ধারার জবানবন্দী নিয়ে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছেন। চার্জশীটে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সামসছুদ্দিন খাঁন তার দাখিলী ১৬১ ধারার জবানবন্দিতে আসামী রঞ্জিত সূত্রধর ২০ হাজার টাকা নিহত নিলু রানী সূত্রধরের নিকট জমা রেখেছিল বলে উল্লেখ করেন যা অসত্য আমরা কেহই জানিনা। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড এবং এই হত্যাকান্ডের সাথে আরও আসামী প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িত। মামলাটি পুন:তদন্ত করলে মূল হোতা বেরিয়ে আসবে। মামলার বাদী শিল্পী জানান- মা নিহত এবং আমি আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে শারিরীকভাবে অসুস্থ হওয়ায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। আমি এবং আমার ভাইয়ের কোন স্টেটমেন্ট ছাড়াই মাত্র একজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন এসআই সামসুদ্দিন।
নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, নিহত নিলু রানী সূত্রধরের পুত্র জীবন সূত্রধর জীবিকার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কুয়েত অবস্থান করেছেন। বাড়িতে নিলু ও তার পুত্রবধূ হ্যাপি সূত্রধরকে নিয়ে থাকতেন। সে সুবাধে জীবন সূত্রধর তার মায়ের কাছে টাকা-পয়সা পাঠাতেন। এ নিয়ে প্রায়শই শাশুড়ি বউয়ের মধ্যে ঝগড়া হত। বিভিন্ন অজুহাতে শাশুড়িকে নির্যাতন করত হ্যাপি সূত্রধর। এক পর্যায়ে পুত্রবধূ হ্যাপি সূত্রধর শাশুড়ি থেকে আলাদা হয়ে যান। ঘটনার কিছুদিন পূর্ব পুত্রবধূ পিতার বাড়িতে চলে গেলে মাকে দেখার জন্য নিলু সূত্রধরের কন্যা শিল্পী সূত্রধর মাধবপুর স্বামীর বাড়ি থেকে ৩ বছরের ছেলেকে নিয়ে ইনাতগঞ্জের ইছবপুর গ্রামে মায়ের কাছে চলে আসেন। গত বছরের ২ এপ্রিল ঘটনার দিন বিকেল থেকেই অঝোরধারায় বৃষ্টি হচ্ছিল। সন্ধা ৭টায় হঠাৎ করে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের রাজনগর ভূমিহীন গ্রামের পূর্ব পরিচিত অবিনাশ সূত্রধরের পুত্র রঞ্জিত সূত্রধর নীলু সূত্রধরের বাড়িতে আসে। এক পর্যায়ে শিল্পী সূত্রধর রান্নাঘরে গেলে কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই পেছন দিক থেকে রঞ্জিত তার উপর অতর্কিতভাবে হামলা করে। এ সময় মেয়ের চিৎকার শুনে মা এগিয়ে এলে রঞ্জিত তাদেরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বৃদ্ধার। গুরুতর আহত অবস্থায় শিল্পীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
এদিকে, ঘটনার পরের দিন কুয়েত থেক দেশে আসেন জীবন। এক সপ্তাহ ওসমানী হাসপাতাল চিকিৎসা শেষে শিল্পী বাড়িতে আসেন। ওই দিনই ইনাতগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ শামছুউদ্দিন ঘাতক রঞ্জিতকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতার পরবর্তী শিল্পী বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে রঞ্জিত আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারাক্তিমূলক জবানবদী দেয়। বর্তমান সে কারাগারে রয়েছে। এদিকে জীবন সূত্রধর মামলা দায়েরের পর আবার প্রবাস চলে গেলে তার স্ত্রী হ্যাপি আত্মীয় স্বজন নিয়ে এসে তার বাড়িতে এসে ঘরের তালা ভেঙ্গে ঘরে থাকা মালপত্র নিয়ে পুনরায় তার বাবার বাড়ি চলে যায়।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী শিল্পী জানান, আদালতে যে চার্জশীট দেয়া হয়েছে, আমি নারাজী দিয়েছি। আমি এ মামলার পুনতদন্ত চাই। আসল খুনি ধরা ছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে আমার চোখের সামনে আমার মাকে নৃশংসভাবে খুন করেছে রঞ্জিত। হ্যাপি সুত্রধরকে রিমান্ডে নিলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। সে এবং তার সহযোগীরাই পরোক্ষভাবে খুনের সাথে জড়িত। তিনি অন্য সংস্থার মাধ্যমে মামলাটি নিরপেক্ষ তদন্ত করে খুনীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
এদিকে চার্জশীটে অন্তর্ভুক্ত ৭ জন সাক্ষি গত ৯ আগস্ট আদালতে উপস্থিত হয়ে এফিডভিট প্রদান করেছেন। এফিডেভিডে উল্লেখ করেন নিহত নীলু সূত্রধরের কাছে টাকা পাওনার বিষয়টি তারা জানেন না, প্রকৃত সত্য ঘটনা আড়াল করতেই মিথ্যা চার্জশীট আদালতে দাখিল করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইনাতগঞ্জ ফাড়ির ইনচার্জ এসআই শামছুদ্দিন খাঁন এ ব্যাপারে বলেন- রঞ্জিত আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারাক্তিমূলক জবানবদি দেয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশীট দাখিল করছেন বলে তিনি জানান।