মাধবপুর প্রতিনিধি ॥ মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী, বহরা, মনতলা, শাহজাহানপুর, সুরমা, তেলিয়াপাড়া, ভান্ডারুয়া, এক্তিয়ারপুর, জালুয়াবাদ, নোয়াপাড়া, জগদীশপুর এলাকায় উচ্চ ফলনশীল জাতের টমেটোর চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন সহ¯্র্রাধিক কৃষক। এসব এলাকায় টমেটোর চাষ করে কৃষকের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে। প্রথমে ২/১ জন কৃষক উচ্চ ফলনশীল জাতের টমেটোর চাষ স্বল্পপরিসরে শুরু করে লাভবান হওয়ায় এখন শত শত কৃষক টমেটোর চাষ করছেন। বর্তমানে টমেটো চাষ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের সাতপাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে টমেটো চাষি আলমগীর হোসেন জানান, তিনি এ বছর ৫০ শতক জমিতে টমেটোর চাষ করেছেন। তার খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। তার ধারণা ওই টমেটো ক্ষেতটি থেকে ৫ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি হবে। আলমগীর শুরুতেই ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে টমেটো বিক্রি শুরু করেন। তিনি ওই জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের টমোটো চাষ করে এ সফলতা পেয়েছেন। ওই এলাকার সহ¯্রাধিক কৃষকের মধ্যে আলমগীর একজন সফল সবজি চাষি। মাধবপুরে এসব অঞ্চলে কৃষকরা মূলত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে টমেটোর চাষাবাদ করে থাকেন। প্রথমে যে সব কৃষক ক্ষুদ্র পরিসরে টমেটোর চাষ করতেন। দিনে দিনে তারা বাণিজ্যিক পর্যায়ে টমেটোর চাষাবাদ শুরু করেছেন। এতে কৃষকরা হাজার হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন। টমেটো চাষাবাদ করে এখন পর্যন্ত কোনো কৃষক লোকসানে পরেননি বরং স্বাবলম্বী হয়েছে কৃষকরা। টমেটো দেখতে সোনালী বর্ণের রং অনেকটা লাল আপেলের মত। মাধবপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় টমেটোর পাইকারী ক্রেতারা ক্ষেত চুক্তি টমেটো ক্রয় করে পিক-আপ ভ্যান, ছোট ও বড় ট্রাকসহ বিভিন্ন বাহনে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান। টমেটো চাষী আলমগীর তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে জানান, ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে অর্থের অভাবে বেশী দূর এগুতে পারেননি তিনি। এর পর খুব কষ্টেই তার সংসার চলতো। এক পর্যায়ে গত ৮/১০ বছর পূর্বে তিনি টমেটোসহ অন্যান্য সবজি চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তখন থেকেই উচ্চ ফলনশীল জাতের সবজির চাষ করেন আলমগীর। প্রথমে সবজি চাষাবাদে আশানুরূপ ফলন না হলেও ধীরে ধীরে টমেটোসহ সবজির চাষ পদ্ধতি নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তিনি। এখন নিজেই নার্সারীতে চারা উৎপাদন করে টমেটোসহ লাউ, ঝিঙ্গা, তরমুজ, বাধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, ও শিমের চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে তার সংসারে। টমেটো সাধারণত শীত কালীন ফসল। আগে আমাদের এলাকার চাষীরা শীতকালে দেশী জাতের টমেটো চাষ করতেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এলাকার কৃষকরা গ্রীষ্মকালে টমেটো চাষ করছেন। টমেটো একটি সুস্বাদু সবজি হওয়ায় এ এলাকার টমেটোর কদর রয়েছে সারা দেশে।
মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় এ বছর মাধবপুরে উচ্চ ফলনশীল আগাম জাতের টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সকল প্রকার সহযোগিতা করা হয়। চলতি বছর মাধবপুরে টমেটোর আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ৩২০ হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে প্রায় ৪শ’ হেক্টর জমিতে। মাধবপুরের উচু ভূমির মাটি আগাম জাতের টমেটো চাষের খুবই উপযোগী।