জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে লাল-সবুজের পতাকা

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ আজ ১৬ ডিসেম্বর ৪৮তম মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্য-বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ এবং পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখন্ডের অস্থিত্ব প্রতিষ্ঠার দিন।
৯ মাসের সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামের চুড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছিল। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘যার যা কিছু আছে’ তা নিয়েই স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। পরে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে যৌথ বাহিনীর কাছে। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য উদিত হয়। বিশে^র মানচিত্রে স্থান করে নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যে প্রতি বছর সাড়ম্বরে উদযাপন করা হয়।
দেশবাসী বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের আত্মত্যাগের কথা, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছিল।
আজকের দিনে যারা ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগ করেছেন তাদের স্মরণ করার পাশাপাশি বিজয়োল্লাসে ভাসবে দেশ। আনন্দে উদ্বেলিত হবে গোটা জাতি। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে বিজয়ের আনন্দ। উৎসবের সমারোহে জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদকে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপনে এবার হবিগঞ্জে ব্যাপক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের অনুষ্ঠানমালার সূচনা। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত এবং বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, দুর্জয় হবিগঞ্জে পুষ্পস্তবক অর্পণ, প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা ও ২১শে পদকপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, হবিগঞ্জ জেলার প্রথম দুই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মহফিল হোসেন ও হাফিজ উদ্দিন এবং মুক্তিযুদ্ধের সেকেন্ড ইন কমান্ড মরহুম মেজর জেনারেল আব্দুর রব বীরউত্তম, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হবিগঞ্জ জেলার সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক মরহুম অ্যাডভোকেট মোস্তফা আলী, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত মরহুম কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম ও মরহুম ডাঃ সামছুল হোসেন উমদা মিয়ার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও ফাতেহা পাঠ করা হবে। সকাল ৮টায় জালাল স্টেডিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, বিএনসিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, কারারক্ষী, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ স্কাউট, রোভার স্কাউট, গার্লস গাইড এবং শিশু-কিশোর সংগঠনের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ ও শরীর চর্চা প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় নিমতলা কালেক্টরেট প্রাঙ্গণে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা, সকাল সাড়ে ১০টায় জালাল স্টেডিয়ামে বালকদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা একই সময়ে বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মহিলা ও বালিকাদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মহিলাদের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সকাল ১১টায় শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাছাড়াও হাসপাতাল, জেলাখানা, এতিমখানা ও শিশু পরিবারসমূহে উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করা হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদ/যুদ্ধাহত, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মসজিদে মিরাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থণা অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল সাড়ে ৩টায় জালাল স্টেডিয়ামে মুক্তিযোদ্ধা জেলা ইউনিট বনাম মুক্তিযোদ্ধা সদর ইউনিটের মধ্যে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতা, বিকেল ৪টায় জেলা প্রশাসন বনাম পৌরসভা একাদশের মাঝে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। সিনেমা হলে বিনা টিকিটে ছাত্রছাত্রীদের জন্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং উন্মুক্ত স্থানে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। সন্ধ্যা ৬টায় নিমতলা কালেক্টরেট প্রাঙ্গণে সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষে ডিজিটাল প্রযুক্তির সার্বজনীন ব্যবহার এবং মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং রাত সাড়ে ৭টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। দিবসটি উপলক্ষে হবিগঞ্জে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।
এছাড়া জাতীয় পার্টি, সিপিবি, জাসদ, বাসদ, গণফোরাম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নজরুল একাডেমি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।