এম,এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ থেকে । হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় মামলার আসামি ধরতে গেলে রাতে মসজিদে মাইকিং করে “ডাকাত” ঘোষণা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশের ভ্যানগাড়ি ভাংচুর করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন রবিবার (২৯ জুন) দুপুরে জনতার বাজারে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাবের যৌথ ঝটিকা চিরুনি অভিযানে ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। শনিবার রাতে হামলাকারীরা পুলিশ সদস্যদের মারধোর, ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশের একটি ভ্যান ও দুটি সিএনজি ভাংচুর করে। শনিবার (২৮ জুন) ভোররাতে উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ গজনাইপুর গ্রামে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

এতে নবীগঞ্জ থানার কনস্টেবল শাহ ইমরান (২৭), মোজাম্মেল হক (২৫) ও পল্টন চন্দ্র দাশ (২৫) আহত হন। আহত পুলিশ সদস্যরা নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় গতকাল রবিবার দুপুরে ১৩ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন- মোঃ আল আমিন (৬৬), পিতা-মৃত তাজুত মিয়া, মাতা-জমাদার বেগম, সাং-পানিউমদা; বোবা প্রকাশ শিপন মিয়া (২৪), পিতা-মৃত আউয়াল মিয়া, সাং-রামলুহ; লিটন মিয়া (৩০), পিতা-মৃত আকিক মিয়া, সাং-দক্ষিণ গজনাইপুর; ইকবাল হোসেন (৩১), পিতা-আব্বাছ উদ্দিন, সাং-দক্ষিণ গজনাইপুর; বিপুল মিয়া (২১), পিতা-মৃত আক্কাছ মিয়া, সাং-কুড়াগাঁও, পানিউমদা; সোহেল আহমেদ (২৩), পিতা-জয়নাল মিয়া, সাং-রামলুহ, গজনাইপুর ইউপি; নিতাই চন্দ্র দাস (৩৩), পিতা-মৃত সুরঞ্জন দাস, সাং-দুর্গাপুর, ৭নং করগাঁও ইউনিয়ন; পংকজ দত্ত (৪৩) পিতা-মৃত প্রদীপ দত্ত, মাতা-সবিতা দত্ত সাং-দেওপাড়া; আবীর আহম্মদ জয় (১৯), পিতা-মোঃ জুব্দে মিয়া, সাং-রামলুহ; সাদিক মিয়া (৪২), পিতা-মৃত বশির মিয়া, সাং-শতক; মোঃ রুজেল মিয়া (২৫), পিতা-নাজির উদ্দিন, সাং-পিরোজপুর ৩নং ইনাতগঞ্জ ইউপি; কাইয়ুম মিয়া (২২), পিতা-সালেক মিয়া, সাং-দেওপাড়া, গজনাইপুর নবীগঞ্জ হবিগঞ্জ ও রায়হান মিয়া (২৪), পিতা-ইনজাব আলী, সাং-শরীফপুর, লস্করপুর ইউনিয়ন, থানা-হবিগঞ্জ সদর, জেলা-হবিগঞ্জ।

যৌথবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মে নবীগঞ্জ উপজেলার জনতার বাজার পশুর হাট অপসারণে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিনের নেত…ত্বে পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রায় ৭০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হাট এলাকায় অভিযান চালান। একপর্যায়ে হাট কমিটির সদস্য ও অন্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাঁদের কাজে বাধা দেন। তাঁরা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সন্দ্বীপ তালুকদারকে ঠেলাধাক্কা ও লাঞ্ছিত করা হয়। এরপরও দিনজুড়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পশুর হাট চালু রাখে হাট পরিচালনাকারীরা। এ ঘটনার পরদিন ১ জুন পানিউমদা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে নবীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

গত শনিবার ভোররাতে এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি দক্ষিণ গজনাইপুর গ্রামের নজর উদ্দিনকে (৪০) গ্রেপ্তার করতে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে নবীগঞ্জ থানা ও গোপলার বাজার তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ অভিযান চালায়। নজর উদ্দিনের বসতঘরে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এ সময় অন্য আসামিরা গ্রামের মসজিদে ‘ডাকাত এসেছে’ বলে মাইকিং করেন। এতে গ্রামের দুই শতাধিক লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালান এবং পুলিশের কাছ থেকে নজর উদ্দিনকে ছিনিয়ে নেন। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয় এবং সংঘর্ষে পুলিশের একটি ভ্যান ও দুটি সিএনজি ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুল হক ঘটনা¯’ল পরিদর্শন করেন এবং আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।

এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি শেখ মো. কামরুজ্জামান বলেন, জনতার বাজারের ঘটনায় দুপুরে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। যাচাই বাছাই করে কয়জন গ্রেফতার বলা যাবে।

এই বিষয়ে বানিয়াচং সেনা ক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হারুনুর রশিদ বলেন, সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ ঝটিকা অভিযান চালানো হয়। আমাদের ক্যাম্পের একদল সেনা সদস্য তাদের সহায়তা করেন। এসময় ১৩জনকে আটক করা হয়। তাদের নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এ এন এম সাজেদুর রহমান বলেন, ‘এজাহারভুক্ত আসামি গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। মামলার এজাহারভুক্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তারের সময় স্থানীয় লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের তিনজন সদস্য আহত হন, একটি ভ্যান ও দুটি সিএনজি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় নবীগঞ্জ থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে এবং দোষীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’