আমার মেহমানভাগ্য ভালো
আতাউর রহমান কানন
১৩ জুন ২০০৮, শুক্রবার। আজ ছুটির দিন বাসাতেই ছিলাম। তবে সারাদিনই মেহমানদারি করতে করতে সময় কোথা দিয়ে চলে যায় টেরও পেলাম না। দুপুর ২টায় ব্যাচমেট-বন্ধু উপসচিব রহমত উল্লাহ দস্তগীর আসে। সে একসময় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ম্যাজিস্ট্রেট ছিল। তখন আমি হবিগঞ্জ সদরের উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট। দস্তগীর এখন ঢাকায় আর তাঁর স্ত্রী নাগুড়া ফার্মের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। দুজনেই পালাক্রমে ঢাকা-হবিগঞ্জ আসা যাওয়া করে। বন্ধুবর দস্তগীর গতকাল হবিগঞ্জ এসে নাগুড়া ফার্মেই স্ত্রীর বাসায় রাত কাটায়। আজ সে আমার এখানে এসেছে মূলত মৌলভীবাজার যাওয়ার জন্য ট্রান্সপোর্ট সাপোর্ট পেতে। দুবন্ধু একত্রে খাওয়াদাওয়ার পর তাকে একটি গাড়ি দিলাম মৌলভীবাজার যাওয়ার জন্য। সে ধন্যবাদ দিয়ে চলে যায়।
এদিকে গত পরশু আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসমেট-হলমেট বন্ধু নান্নু ও মাসুম সপরিবারে বেড়াতে এসেছে। তাঁদের সার্কিট হাউজে রেখেছি আর আপ্যায়নের ব্যবস্থা আমার বাসাতে। আজ সকালে তারা সিলেটের জাফলং দর্শনে যায়। দস্তগীর যাওয়ার পরপরই তারা এসে বাসায় ঢুকে। তারা কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে লাঞ্চের পর সন্ধ্যায় আমার বাসা থেকে বিদায় নিয়ে চুনারুঘাট উপজেলার লালচান্দ চা বাগানে চলে যায়। সেখানে তাদের আরেক বন্ধু থাকার ব্যবস্থা করে।
এদিন বিকেল ৫টায় বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন পারিবারিক আত্মীয়-স্বজন নিয়ে সার্কিট হাউজে উঠেন এবং রাত্রি যাপন করেন। এবার তাঁরা আমার মেহমান হন। অবশ্য বিজ্ঞ জেলা জজ ও তাঁর কর্মকর্তারাও দৌড়ঝাঁপে কম ছিলেন না।
আমার আবার মেহমানভাগ্য ভালো। চাকরি জীবনে কর্মক্ষেত্রের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অনেক মেহমান পেয়েছি। আমি সব সময়ই তাঁদের সাধ্যানুযায়ী কদর করেছি। চাকরিক্ষেত্রের জীবন নিয়ে এ পর্যন্ত আমার লেখা ও প্রকাশিত ‘মেঘ জোছনার দিনগুলি’, ‘ইউএনও সাহেবের আয়না’ ও ‘জীবন নদীর বাঁকে’ বইগুলোতে তাঁর গড়পরতা উল্লেখ রয়েছে।
পরের দিন শনিবার। সকাল ৯টায় সার্কিট হাউজে গিয়ে মাননীয় বিচারপতির খোঁজখবর নিয়ে অফিস হয়ে ১০টায় জেলা জজ কোর্ট কর্তৃক আয়োজিত বার্ষিক বিচারবিভাগীয় সম্মেলনে যোগদান করি। সেখান থেকে নিজ অফিসে ফিরে ১১টায় স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত ‘এলজিএসপি কম্পোনেন্ট’ সেমিনারে যোগদান করি। বিকেল ২টায় বাসায় ফিরে আসি।
রাত আটটায় গান রেকর্ডিং সংস্থা গানের ডালির কর্ণধার সৈয়দ দানিক আহমেদ ও শিল্পী মল্লিকা এসে সার্কিট হাউজে ওঠেন। সৈয়দ দানিক আমার পূর্বপরিচিত। আগামীকাল হবিগঞ্জে আয়োজিত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অনুষ্ঠানে তাঁরা যোগদান করবেন। জেলা নাজির তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। আমার সাথে টেলিফোনে হাই-হ্যালো হয়।
১৫ জুন ২০০৮, রবিবার। আজ সারাদিন অফিসেই ছিলাম। বৃষ্টিহীন আষাঢ়ের আজ প্রথমদিন। সন্ধ্যায় কিবরিয়া পৌর মিলনায়তনে হবিগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তী ও বর্ষাবরণ উপলক্ষ্যে ‘প্রথম কদম ফুল’ শীর্ষক আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ, জেলা ও দায়রা জজ মিয়াজ উদ্দিন, সেনা ইউনিটের সিও, পুলিশ সুপার-সহ জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সুধীজন আমন্ত্রিত হয়ে উপস্থিত হন। মিলনায়তন ভর্তি দর্শক এই মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
২০ জুন ২০০৮, শুক্রবার। আমি গত মঙ্গলবার ছুটি নিয়ে ঢাকায় আসি। Managing At The Top (MATT) ট্রেনিং কোর্সের জন্য আমাকে সরকার থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তবে IELTS এর ব্যান্ড স্কোর মিনিমাম ৫.৫ অর্জন হতে হবে। এ জন্য আমাকে ছুটিও দেওয়া হয়েছে। আজ দুপুর ১২টায় আমার ওই IELTS Speaking test হয়। আগামীকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় ব্রিটিশ কাউন্সিলে IELTS এর লিখিত পরীক্ষা হবে। পরীক্ষায় পাশ করলে প্রথম ধাপে দেশে-বিদেশে মিলিয়ে দুমাস ট্রেনিং হবে।
২২ জুন ২০০৮, রবিবার। সকাল ১০টায় ঢাকা থেকে হবিগঞ্জ ফিরে আসি। কদিন ঢাকায় থাকায় অফিসের কাজের চাপ পড়েছে। আর আমার কলিগরা সকালেই আমার সাথে সাক্ষাৎ করে অফিসের হালনাগাদ তথ্য দিয়েছেন। আমার IELTS পরীক্ষা কেমন হয়েছে তাও তারা জানতে চেয়েছেন। আমি বরাবরের ন্যায় ‘হয়েছে একরকম’ জবাব দিই।
বিকেলে কালেক্টরেট ভবনের একটি কক্ষে জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির অফিস উদ্বোধন করি। কয়েক মাস আগে সরকারি নির্দেশে জেলার বিশিষ্ট সুধীজনদের নিয়ে জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়। এতে সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট চৌধুরী আবদুল হাইকে কমিটির সভাপতি করা হয়।
২৫ জুন ২০০৮, বুধবার। আজ ১০টায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে বনবিভাগ কর্তৃক ‘ফরেস্ট র্ট্যানজিট রুলস্ (সংশোধনী) ২০০৮’ এর ওপর এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। পরিবেশ ও বন সচিব জনাব রেজাউল কবীর এ সেমিনার উদ্বোধন করেন। সিলেট বিভাগের সকল জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ এতে যোগদান করেন। আমিও যোগদান করি। লাঞ্চের মাধ্যমে সেমিনার শেষ হলে আমি বিকেল ৪টায় হবিগঞ্জ ফিরে আসি। আমার সঙ্গে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ব্যাচমেট-বন্ধু মো. সাবের হোসেন ও তাঁর পরিবারবর্গ মেহমান হিসেবে হবিগঞ্জ আসেন। তাঁরা এবার চা বাগানে বেড়াবে এবং রাত্রিযাপন করবে বলে ইচ্ছাপোষণ করেন। আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের আমারই সাবজেক্টের অনুজ সহপাঠী চন্ডিছড়া চা বাগানের ম্যানেজার মোহাম্মদ শাহজাহানের অতিথি বাংলোয় তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করি। রাত ৮টায় মেহমানসহ ওই চা বাগানে যাই। শাহজাহান আমাদের জন্য ডিনারের আয়োজন করেছিল। ডিনার শেষে মেহমানদের রেখে আমি হবিগঞ্জ ফিরে আসি।