![](https://dailyhabiganjermukh.com/wp-content/uploads/2025/01/004-7.jpg)
আবু জাহির ও তার পরিবারের সদস্যরা নিজেদের ১৯টি স্থাবর সম্পত্তি, দুটি গাড়ি, চারটি ব্যাংক হিসাব, দুটি শেয়ার অ্যাকাউন্ট ৯টি বীমা পলিসি, ১৭টি অস্থাবর সম্পত্তি অন্যত্র বিক্রি, হস্তান্তর বা স্থানান্তর করার অপচেষ্টায় লিপ্ত বলে গোপন সূত্রে খবর পেয়েছে দুদক। অভিযোগ নিষ্পত্তির আগে বর্ণিত সম্পদ বিক্রি, হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ঢাকার গুলশানের বাড়ি দুদককে এবং হবিগঞ্জের বাড়ি জেলা প্রশাসককে রিসিভার হিসেবে দেয়া হয়েছে ॥ সর্বমোট সাড়ে ১০ কোটি টাকার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির ও তার পরিবারের সদস্যদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হবিগঞ্জের বিজ্ঞ সিনিয়র স্পেশাল জজ এবং জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন আরা বেগম এই আদেশ দেন। একই সাথে তাদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ রাখার আদেশ দেন বিচারক। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় হবিগঞ্জ এর উপ-পরিচালক মো. এরশাদ মিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
আদালত ও দুদক সূত্রে জানা যায়, সাবেক এমপি আবু জাহির ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূতভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও আবু জাহিরের বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারী উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ দুদক তদন্ত করছে। দুদকের অনুমোদন নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা হবিগঞ্জের বিজ্ঞ সিনিয়র স্পেশাল জজ বেগম জেসমিন আরা বেগমের আদালতে আবু জাহির ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন করলে বিজ্ঞ বিচারক তা মঞ্জুর করেন।
যেসব সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেয়া হয়েছে ঃ সাবেক এমপি আবু জাহিরের নামে ঢাকার গুলশানের ১ কোটি ১৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট, হবিগঞ্জ শহরের টাউন হল সড়কে বিলাসবহুল ৫ তলা বাড়ি যার ক্রয়মূল্য ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা; হবিগঞ্জ শহরতলীর সুলতান মাহমুদপুর ও আনন্দপুর মৌজায় ৫০৭ শতক ভূমি রয়েছে, যার মূল্য ২ কোটি ৪০ লাখ ৮৪ হাজার টাকা; চুনারুঘাটের বাল্লার সীমান্ত এলাকায় গাজীপুর মৌজায় ৭৩ শতক জায়গা রয়েছে, যার মূল্য ৬১ লাখ ৯ হাজার ৩শ টাকা; শায়েস্তাগঞ্জের অলিপুর মৌজায় ১০ শতক জায়গা যার মূল্য ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৫শ টাকা।
এছাড়া অলিপুর শিল্প এলাকায় ২ কোটি ৩৬ লক্ষ ৮১ হাজার ৭২১ টাকা মূল্যের এ বি মেহজাবিন টাওয়ার স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেয়া হয়। অস্থাবর সম্পত্তির মাঝে ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ২৪০ টাকা মূল্যের জিপ গাড়ী, ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার ৪৬৮টাকা মূল্যের প্রাইভেট কার রয়েছে। পূবালী ব্যাংক হবিগঞ্জ শাখায় আবু জাহিরের মেয়ে আরিফা আক্তার মুক্তির ১৪ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬২ টাকা, কৃষি ব্যাংক হবিগঞ্জ শাখায় আবু জাহিরের ভাই আল-আমিনের নামে ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ৪৭১ টাকা, একই ব্যাংকে আরেকটি একাউন্টে তার দুই ভাইর নামে ১০ লাখ ৫৫ হাজার ৬৪৩ টাকা, জনতা ব্যাংক হবিগঞ্জ শাখায় আবু জাহিরের ছোট ভাই আল-আমিনের নামে ২৫ লাখ টাকা, ছেলে ব্যারিস্টার ইফাত জামিলের নামীয় একাউন্টে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩ টাকা, মেয়ে আরিফা আক্তার মুক্তির নামের একাউন্টে ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ২৩ টাকা, আমেরিকান লাইফ ইন্সুরেন্স এ আবু জাহিরের ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকা, তার স্ত্রী আলেয়া আক্তারের ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮৮ টাকা, ছেলে ব্যারিস্টার ইফাত জামিলের পলিসি ৫২ লাখ ৩৯ হাজার ৩৭৪ টাকা ও ছোট ভাই বদরুল আলমের ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৮ টাকা; অগ্রণী ব্যাংকের একটি করে একাউন্ট ও কৃষি ব্যাংকের দুটি একাউন্ট ক্রোকের আদেশ দেয়া হয়। এগুলোতে ৬৫ লাখ টাকার মতো স্থিতি রয়েছে। এছাড়াও সাবেক এমপি আবু জাহিরের আমেরিকান লাইফ ইন্সুরেন্স এর পলিসি, তার ছেলে ব্যারিস্টার ইফাত জামিল এর ব্যাংক হিসাব ও পলিসি, লন্ডন প্রবাসী মেয়ে আরিফা আক্তার মুক্তির ব্যাংক হিসাব ও পলিসি, স্ত্রী আলেয়া আক্তারের পলিসি, ছোট ভাই আল আমিন ও বদরুল আলম এর ব্যাংক হিসাব ও পলিসি ক্রোকের আদেশ দেয়া হয়। আবু জাহির ও তার পরিবারের ১৯টি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেয়া হয়।
দুদকের পক্ষ থেকে আদালতে বলা হয়, সাবেক এমপি আবু জাহির ও তার পরিবারের সদস্যরা নিজেদের ১৯টি স্থাবর সম্পত্তি, দুটি গাড়ি, চারটি ব্যাংক হিসাব, দুটি শেয়ার অ্যাকাউন্ট ৯টি বীমা পলিসি, ১৭টি অস্থাবর সম্পত্তি অন্যত্র বিক্রি, হস্তান্তর বা স্থানান্তর করার অপচেষ্টায় লিপ্ত বলে গোপন সূত্রে খবর পেয়েছে দুদক। অভিযোগ নিষ্পত্তির আগে বর্ণিত সম্পদ বিক্রি, হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এমতাবস্থায় উক্ত সম্পত্তির জন্য রিসিভার নিয়োগ করা জরুরি। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে সাবেক এমপি আবু জাহিরের ঢাকার গুলশানের বাসাটির রিসিভার হিসেবে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের পরিচালককে দায়িত্ব প্রদান এবং হবিগঞ্জের বাসার রিসিভার হিসেবে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দিয়েছেন বিজ্ঞ বিচারক।
দুদকের উপ-পরিচালক মো. এরশাদ মিয়া জানান, দুদক এখনও অভিযোগ তদন্ত করছে। আদালতের আদেশ হাতে আসার পর আদেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এলাকাবাসী সূত্র জানায়, সাবেক এমপি আবু জাহিরের গুলশানের ফ্ল্যাটটির ক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ১৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। যার বাজার মূল্য অন্তত ৩ কোটি টাকা। একইভাবে দুদক হবিগঞ্জ শহরের টাউন হল সড়কের ৫ তলা বাসাটির মূল্য ধরেছে ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। বর্তমানে এই জায়গার বাজারমূল্য এবং ভবনের নির্মাণ ব্যয় মিলিয়ে এর দাম হওয়ার কথা অন্তত ৮ কোটি টাকা।