দুর্নীতি আর যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় সন্তানদের স্কুলে ভর্তির ভরসা পাচ্ছেন না অভিভাবকরা
স্টাফ রিপোর্টার ॥ জেলার সবচেয়ে বেশী শিক্ষার্থীর স্কুল কোনটি অথবা খেলাধুলায় শ্রেষ্ঠ কোন স্কুল। এই প্রশ্নগুলো করলেই হবিগঞ্জ জেলায় এক বাক্যে যে স্কুলটির নাম আসত সেটি হল জে কে এন্ড এইচ কে (যোগেন্দ্র কিশোর এন্ড হরেন্দ্র কিশোর) হাই স্কুল এন্ড কলেজ। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় স্কুলটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। মাত্র তিন বছরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধেকে। শিক্ষকদের দুর্নীতি আর যৌন কেলেঙ্কারিতে স্কুলে নিজেদের সন্তানদেরকে ভর্তি করার ভরসা পাচ্ছেন না অভিভাবকরা। সর্বশেষ বহিরাগত ছাত্রীদেরকে নিয়ে কাবাডি দল গঠন করে জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় চারিদিকে নিন্দার ঝড় বইছে।
অভিযোগে জানা যায়, স্কুলের শিক্ষকদের দলাদলির কারণে প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর চৌধুরীকে সাময়িক বহিস্কার করা হলে সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহ মো. আবুল হাসান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ৫১তম বাংলাদেশ জাতীয় স্কুল, মাদ্রাসা কারিগরি শিক্ষা সমিতির শীতকালীন প্রতিযোগিতায় চারজন বহিরাগত শিক্ষার্থীকে নিয়ে দল গঠন করে জেলা চ্যাম্পিয়ন হন। প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরিত তালিকার ১২ জন খেলোয়াড়ের মাঝে লুকড়া আইডিয়াল হাইস্কুলের ছাত্রী তন্বী আক্তারকে তার স্কুলের সুরাইয়া আক্তার নামে, হবিগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুলের ছাত্রী সামি আক্তারকে তার স্কুলের তিশামা আক্তার নামে, বৃন্দাবন সরকারি কলেজের ছাত্রী ফাতিহা আক্তারকে তার স্কুলের রিতা আক্তার নামে এবং বহিরাগত ছাত্রী মাজু আক্তারকে তার স্কুলের ফাহমিদা জান্নাত নামে রেজিস্ট্রেশন করান এবং তারা খেলায় অংশগ্রহণ করে।
বহিরাগত ছাত্রী নিয়ে জেলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সিলেটে বিভাগীয় পর্যায়েও এই দল অংশ নেয়। সেখানে হোটেলে ছাত্রীদের সাথে ক্রীড়া শিক্ষকের রাত্রী যাপনের ঘটনায় হবিগঞ্জে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
এদিকে সম্প্রতি স্কুলের সহকারী শিক্ষক লাইব্রেরী কর্তৃক স্কুলের ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় ওই শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এবং ধর্ষণ মামলা চলার পর স্কুলের প্রতি অভিভাবকরা আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। ২০২১ সালে যেখানে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২শ জন সেখানে এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে এক হাজারের কিছু বেশি রয়েছে। স্কুলের একটি পুরাতন দ্বিতল ভবন গণপূর্তের প্রত্যয়ন ছাড়াই ভেঙ্গে ফেলায় সেখানে শ্রেণী কক্ষের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। স্কুলের দোকান ও জমি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট ভাড়া প্রদানকালে গ্রহণকৃত অগ্রীম জামানত প্রায় কোটি টাকা এফডিআর না করে অন্য খাতে বিধি বহির্ভূতভাবে খরচ করারও অভিযোগ উঠেছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ওই প্রধান শিক্ষক এডহক কমিটি থাকাকালিন বিধি বহির্ভূতভাবে লক্ষ লক্ষ টাকার পুরাতন মালামাল সিন্ডিকেট করে মাত্র ৪২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে প্রতিষ্ঠান থেকে মাসে ১হাজার ৫শ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও তিনি গ্রহণ করছেন ৪হাজার ২শ টাকা করে। প্রভিডেন্ট ফান্ডে ১০ শতাংশ টাকা নেয়ার বিধান থাকলেও তিনি নিচ্ছেন ১২ শতাংশ। এছাড়াও এক ফান্ডের টাকা অন্য ফান্ডে বিধি বহির্ভুতভাবে খরচেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহ মো. আবুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল্লাহর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com