বিশেষ প্রতিবেদন…
মো. মামুন চৌধুরী ॥ আকারে ছোট, গোলাকার। টকটকে হলদে বর্ণ। রসে ভরপুর। খেতেও ভারী মিষ্টি। দেখে যে কারোরই জিভে জল আসবে। নাম তার জলডুবি। নাম জলডুবি হলেও এটি আসলে আনারস। বৃহত্তর সিলেটের নামকরা এই আনারস ছড়িয়ে চলেছে শ্রীমঙ্গলের খ্যাতি। বিক্রেতারা এ আনারস শ্রীমঙ্গল থেকে ক্রয় করে নিয়ে আসেন।
এরপর হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লস্করপুর রেল গেইটের নিকটে বসে বিক্রি করেন। বারোমাস এ জাতের আনারস বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি আকারে বড় বিলাতি আনারসও বিক্রি হয়। দিন দিন ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে এই জলডুবি ও বিলাতি আনারস।
এ দুইজাতের আনারস লস্করপুর রেল গেইটের কাছে বনজদ্রব্য পরীক্ষণ ফাঁড়ির সামনে মহাসড়কের পাশে ২০১৮ সাল থেকে বসে বিক্রি করছেন মোঃ জলফু মিয়া ও তার ছেলে মোঃ হেলাল মিয়া। সকাল হলে তারা আনারস নিয়ে বসেন। রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত আনারস বিক্রি চলে। মহাসড়কে চলালচকারী যাত্রী ও চালকরা আনারস ক্রয় করতে আসেন। অনেকেই দোকানে বসেন। কেউ দাঁড়িয়ে থাকেন। দোকান মালিক বটি দিয়ে আনারস প্রস্তুত করে দেন। যাত্রী ও চালকরা আনারস খেয়ে স্বাদ পেয়ে যাওয়ার সময় বাসা বাড়ির জন্য নিয়েও যান।
এছাড়া স্থানীয়দের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এসে আনারস খেয়ে স্বাদ পাচ্ছেন। খাওয়ার পর তারাও বাসা বাড়ির জন্য আনারস ক্রয় করে নিয়ে যান। তবে এ দোকানে অধিক পরিমাণে আনারস ক্রয় ও খেতে আসেন মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকরা।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লস্করপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ জলফু মিয়া ও তার ছেলে মোঃ হেলাল মিয়া প্রথমে বনজদ্রব্য পরীক্ষণ ফাঁড়ির সামনে মহাসড়কের পাশে দোকান বসানোর পর লোকজনের কাছে আনারস জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তাদের সফলতা দেখে স্থানীয়ভাবে আরও কয়েকজন বেকার লোক আনারসের দোকান বসান। বর্তমানে সবাই আনারস বিক্রি করে লাভবান।
ক্রেতা সুজন মিয়া বলেন, প্রাইভেটকার দিয়ে যাওয়ার পথে মহাসড়কের পাশে মোঃ জলফু মিয়া ও তার ছেলে মোঃ হেলাল মিয়ার দোকানটি দেখতে পাই। গাড়ী দাড় করিয়ে আনারস খেয়ে স্বাদ পেয়েছি। কিছু আনারস ক্রয় করেছি বাড়ির জন্য।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল মিয়া বলেন, এখানে বারোমাস রসে ভরা টসটসে আনারস পাওয়া যায়। মাঝে মধ্যে আনারস খাওয়ার জন্য আসি। এ দোকানের আনারসে স্বাদ রয়েছে।
সোহেল মিয়া ও সুজন মিয়ার ন্যায় প্রতিদিন লোকজন এখানের আনারস খেয়ে স্বাদ পাচ্ছেন। অনেকে খেয়ে যাচ্ছেন। আবার নিয়েও যাচ্ছেন। ক্রেতাদের কাছে এ আনারস দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে।
মোঃ জলফু মিয়া ও তার ছেলে মোঃ হেলাল মিয়া বলেন, শুরুতে শ্রীমঙ্গল ও মুছাই থেকে কিছু আনারস ক্রয় করে নিয়ে এসে মহাসড়কের পাশে বসে বিক্রি করি। সাড়া পেয়ে আনারস বিক্রি অব্যাহত রেখেছি। বারোমাস বিলাতি ও জলডুবি আনারস বিক্রি হচ্ছে। সাপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ভোর সকালে শ্রীমঙ্গল থেকে আনারস ক্রয় করে নিয়ে আসি। দৈনিক ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার আনারস বিক্রি হলে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা লাভ হয়। আনারসের পাশাপাশি মাঝে মধ্যে লেবু ও পেঁপে বিক্রি করছি।
হবিগঞ্জ আড়াইশ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের ডাঃ মিঠুন রায় বলেন, ভিটামিন সি, নানা খনিজ পুষ্টি উপাদান যেমন পটাশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, থায়ামিন, ফোলেট, এমনকি ফাইবার এবং ব্রোমেলিন ইত্যাদি নানা কার্যকরি উপাদানে সমৃদ্ধ আনারস। আনারস শুধু যে খেতেই সুস্বাদু, তা কিন্তু নয়। এই ফলটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হজম শক্তি বাড়ায়, হাড় শক্ত করে, প্রদাহ জনিত সমস্যা দূর করে, ঠান্ডা লাগা এবং কাশি কমাতেও কাজে আসে। এখানেই শেষ নয়, গবেষণায় বলছে অতিরিক্ত ওজন কমাতেও আনারসের দারুণ ভূমিকা রয়েছে।