সচেতন ও শিক্ষিত লোকজন ছিলেন শহর কেন্দ্রীক ॥ মামলা মোকদ্দমা ছাড়া গ্রামের মানুষ খুব একটা শহরে আসতেন না
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ যারা একটু সচেতন ও শিক্ষিত ছিলেন তারা প্রায় সকলেই ছিল শহর কেন্দ্রীক। জমিজমায় বিত্তশালীসহ সাধারণ লোকজন গ্রামীণ পরিবেশে বসবাসই বেশি পছন্দ করতেন। মামলা মোকদ্দমা ছাড়া গ্রামের মানুষ শহরে আসতেন না। হবিগঞ্জ শহরের বাসিন্দা, বানিয়াচংয়ের কৃতি সন্তান ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মমিন হবিগঞ্জ শহরের শতবছরের কথা বলতে গিয়ে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ১৯৬৮ সাল থেকে তিনি পরিবার পরিজনের সাথে হবিগঞ্জ শহরে বসবাস করে আসছেন। তিনি বৃন্দাবন কলেজে পড়াশোনা করাকালীন সময়ে প্রশাসনের সাথে সম্পৃক্ততা থাকায় অনেক কিছুই দেখতে পেয়েছেন। হবিগঞ্জের তৎকালীন এসডিও ছিলেন আকবর আলী খান (সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা)। ওই সময়ে হবিগঞ্জ আসা যাওয়া এখনকার মতো এতো সহজ ছিল না। যানবাহন না থাকায় বানিয়াচং হতে হবিগঞ্জ আসতে হলে পায়ে হেঁটেই আসতে হতো। যদিও এক পর্যায়ে গাড়ি চলাচল শুরু হয়। তখন হবিগঞ্জ-বানিয়াচং সড়কে কিছু গাড়ি চলাচল করতে শুরু করে। এগুলোকে চান্দের গাড়ি হিসেবে অভিহিত করা হতো। পরে মুড়ির টিন (বাস বিশেষ) চলাচল শুরু করে। এরপরও অধিকাংশ মানুষই আজমিরীগঞ্জ হতে হবিগঞ্জ পর্যন্ত পায়ে হেঁটেই চলাচল করতেন। ভাটি এলাকার মানুষ কামড়াপুর এলাকায় এসে বাঁশের পুল পেরিয়ে হবিগঞ্জ শহরে প্রবেশ করতেন। বন্যার সময় এই পুল ভেসে যেতো। তখন মানুষের দুর্ভোগের অন্ত থাকতো না। ওই সময়ে নদীর এপার হতে ওইপাড় পর্যন্ত লম্বা রশি বাঁধা থাকতো। আর রশির নিচে থাকতো বড় নৌকা। ওই নৌকায় যাত্রী উঠার পর রশি টেনে নৌকা অপর পাড়ে নিয়ে যাওয়া হতো। এভাবেই এক পাড়ের লোকজন অপর পাড়ে যাওয়া আসা করতেন। তৎকালীন সময়ে শহরের একমাত্র বাহন ছিল প্যাডেল চালিত রিক্সা। মানুষ কোর্ট কাচারি বা জরুরী প্রয়োজনে রিক্সায় উঠতেন। আর রিক্সার ভাড়াও ছিল অত্যন্ত কম। এক স্থান হতে অন্য স্থানে যেতে জনপ্রতি ভাড়া ছিল এক আনা দুই আনা। আবার শেয়ার করেও রিক্সায় উঠা যেতো। শহরে তখন পাকা ঘর-বাড়ি ছিল না বললেই চলে। শহরে বারান্দা ওয়ালা টিনের ঘরের আধিক্য ছিল বেশি। তাছাড়া ছিল ছনের ঘর। তবে মাঝে মাঝে দু’একটি পাকা বাড়ি চোখে পড়তো। যার মধ্যে শহরের পুরাতন হাসপাতাল এলাকার উমেশ ভবন উল্লেখযোগ্য। ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলম শেঠ, কুদ্দুছ খান, শ্রীশ পাল ছিলেন উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া বাণিজ্যিক এলাকাস্থ দেয়ানতরাম সাহার বাড়িতে পাকা বিল্ডিং ছিল। শহরের বর্তমান খোয়াই মুখ এলাকায় কোন বিল্ডিং ছিল না। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বাসা-বাড়ি সবই ছিল টিনের।