![](https://dailyhabiganjermukh.com/wp-content/uploads/2024/10/002-6.jpg)
চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার উত্তর রানিগাঁওয়ে দুবাই প্রবাসী রাসেল মিয়ার বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির চেষ্টাকালে গৃহকর্তার বাবা আব্দুল হামিদকে (৬৫) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে ডাকাতরা। বুধবার দিবাগত গভীর রাত ৩টায় উপজেলার সাটিয়াজুরী ইউনিয়নের উত্তর রানিগাও গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। বৃহস্পতিবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুল হামিদ মারা যান। তিনি ওই গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের পুত্র। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন নিহতের পুত্রবধূ রিতি আক্তার (২৬)।
স্বজন, প্রতিবেশী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে বাড়িতে ঘুমিয়েছিলেন নিহত আব্দুল হামিদ ও তাঁর পুত্রবধূ রিতি আক্তার। নিহতের দুই ছেলে দীর্ঘদিন ধরে আরব আমিরাতে বসবাস করছেন। পুত্রবধূ রিতি আক্তারও দুবাই থেকে কয়েকমাস মাস পূর্বে স্বামী রাসেলের কাছ থেকে বাড়িতে এসেছেন। বুধবার রাতে নিহত আব্দুল হামিদের স্ত্রী চলে যান পিত্রালয়ে। বাড়িতে শুধু আব্দুল হামিদ ও তার পুত্রবধূ রিতি আক্তার। তারা রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। জনশূন্য প্রবাসীর ঘরে গভীর রাত অনুমান ৩টায় ৫/৬ জনের একদল মুখোশধারী ডাকাত ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে। এসময় মুখোশধারী ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে তার হাত-পা বেঁধে ডাকাতির চেষ্টা করে। এ সময় আব্দুল হামিদ চিৎকার করলে ডাকাতরা ক্ষুব্ধ হয়ে আব্দুল হামিদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে তা-ব চালায়। এসময় ঘরে থাকা পুত্রবধূও চিৎকার করলে ডাকাতরা প্রবাসী রাসেল মিয়ার সন্তানকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তার স্ত্রী রিতি আক্তারের হাতপা বেঁধে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা হাতি নেয়। এসব তথ্য জানিয়েছেন আহত রিতি আক্তারের বড় বোন রাহেলা আক্তার।
প্রবাসী রাসেলের মামাতো ভাই ছাব্বির মিয়া জানান- ঘরের ক্যাবিনেট ভাংচুর ও ঘরের আসবাবপত্র তছনছ করে মূল্যবান জিনিস লুট করে নেয় মুখোশধারীরা। ডাকাতির ঘটনা নিশ্চিত করে রানিগাও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো: সিরাজ মিয়া বলেন, প্রবাসীর ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর করা করা হয়েছে। ডাকাতরা কি পরিমাণ লুট করেছে জানতে চাইলে তিনি জানান, নিহতের পুত্রবধূর এখনও জ্ঞান ফিরেনি। তিনি চুনারুঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। তবে শুনেছি স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থকড়ি নিয়ে গেছে ডাকাতদল। তিনি আরও জানান, নিহতের ডান হাতের বাহু ও বাম পায়ের হাটুর নিচে গুরুতর কাটা জখম করা হয়েছে। রাতেই আশপাশের লোকজন উদ্ধার করে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাত ৪টায় ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি সাড়ে ৪টায় মারা যান।
অপর একটি সূত্র জানায়, নিহতের পরিবারের সাথে একই এলাকায় কতিপয় ব্যক্তির বিরোধ রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন পুর্ব বিরোধের জেরে এ ঘটনায় শত্রুপক্ষের লোকজন জড়িত। এ নিয়েও এলাকায় রয়েছে নানা গুঞ্জন। সকালে থানার উপপরিদর্শক এসআই জহিরুল ইসলাম মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে দুপুরে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মাবধবপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নির্মলেন্দু চক্রবর্তী ও থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি হিল্লোল রায়। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় ওসি জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। নিহতের পূত্রবধূ কথা বলতে পারছেন না, জ্ঞান ফিরলে বিস্তারিত জানা যাবে।
এ বিষয়ে চুনারুঘাট মাধবপুর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার নির্মলেন্দু চক্রবর্তী নিহতের স্ত্রীর বরাত দিয়ে জানান, একই এলাকার আতাউর রহমান নামে একজনের কাছে তাদের লেনদেন রয়েছে। এ নিয়ে শালিস বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু টাকা না পেয়ে তারা আতাউর রহমানসহ ৩ জনের নামে আদালতে মামলাও করেছেন। এ নিয়ে আতাউর রহমান গংরা তাদের উপর হামলার চেষ্ঠাও করেছে বলে তিনি জানান। তবে তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে।