সুমন আহমেদ বিজয় ॥ লাখাইয়ে পর্দা নিয়ে শিক্ষিকাকে কটূক্তি করায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদুল হকের চাকরিচ্যুতি ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন সচেতন নাগরিক সমাজ। ১২ অক্টোবর শনিবার সকালে উপজেলা গেইটের সামনে এ মানববন্ধন করা হয়।
স্কুল শিক্ষিকাকে হেনস্তা ও হিজাব নিয়ে কটূক্তি করার প্রতিবাদে মানববন্ধনে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ শত শত সাধারণ মানুষ অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তারা কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে ওই শিক্ষা কর্মকর্তাকে অপসারণ করা না হলে উপজেলা শিক্ষা অফিস ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। বক্তারা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদুল হকের চাকরিচ্যুতি ও শাস্তির দাবি জানিয়ে আরও বলেন, প্রাইমারি স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষক যখন নারী, সেখানে উপজেলার প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কোন নারীলোভী ও নারী হেনস্তাকারী কর্মকর্তা কর্মচারী কিছুতেই থাকতে পারে না, পারবে না। তাই অতিদ্রুত এই কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে পর্দানশীন নারীদের হেনস্তার অভিযোগ আছে। হিজাব পরিহিত পর্দানশীন নারীরা কোন কারণে অফিসে গেলে তিনি তাদেরকে হিজাব খুলতে বাধ্য করেন। এমনকি পরিদর্শনে বিভিন্ন স্কুলে গেলেও সেখানে মুখ ঢেকে রাখা মহিলাদের নানাভাবে মুখ খুলতে বাধ্য করতেন। এটা স্পষ্টত তার বিকৃত মানসিকতার পরিচয়। এবং মুসলিম নারীদের শ্লীলতাহানি ও ধর্মীয় অধিকার হরণ। এসময় স্থানীয় অন্যান্য ভুক্তভোগীরাও তার বিরুদ্ধে অশোভন আচরণসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরেন।
এদিকে, অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদুল হকের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী শিক্ষিকা ই-মেইল ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হেনস্তার শিকার শিক্ষিকার স্বামী মুহিম মাহফুজ।
বিশিষ্ট সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী মিসবাহ উদ্দিন সবুজের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- মুড়িয়াউক দারুচ্ছুন্নাহ মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল হাই, শায়েস্তাগঞ্জ কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মুফতি শরিফ উদ্দিন, মাওলানা আলী আজম, মাওলানা আশরাফুল ইসলাম (সোহাগ), মাওলানা মুখলিছুর রহমান, মুফতি মুজাহিদুল ইসলাম (মাহফুজ), মাওলানা দেলোয়ার হুসাইন, মাওলানা আব্দাল হুসাইন, মাওলানা মঈনুদ্দিন, মাওলানা ফাইজুল ইসলাম ফয়েজী, হাফেজ জুনাইদ আহমেদ, মুফতি হিফজুল ইসলাম, মাওলানা আকরাম হুসাইন, মুহাম্মদ শাহিন আলম, রাফিজুল ইসলাম ও ওয়াহেদ মুরাদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, উপজেলার ধনাই মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার (মাহবুবা নার্গিস) চিকিৎসাকালীন ছুটি নেওয়ার জন্য শিক্ষা কর্মকর্তার অফিসে যান। সেখানে শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদুল হক তার সঙ্গে খুব বাজে ব্যবহার করেন। কারণ ওই শিক্ষিকা পর্দায় আবৃত ছিলো এবং পর্দা করে চলেন। একপর্যায়ে অফিসে ওই কর্মকর্তা তাকে মুখ খুলতে জোর করলে তিনি বাঁধা দেন। এসময় ওই কর্মকর্তা ওই শিক্ষিকাকে প্রশ্ন করেন- কোথায় এমন কথা বলা আছে যে, এভাবে পর্দা করতে হবে? ইসলামে এসব নাই। চাকরি করলে এভাবে চলতে পারবে না। মুখ খুলতেই হবে। প্রতিউত্তরে এ শিক্ষিকা বাচ্চাদের সামনে মুখ খুলেই ক্লাস করেন জানালে তিনি আরও খারাপ আচরণ করেন।
এর আগে বিষয়টি জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন ভুক্তভোগী শিক্ষিকার স্বামী ও স্বজনরা। স্ট্যাটাসে তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে পর্দানশীন নারীদের হেনস্থা করছেন শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদুল হক। হিজাব পরিহিত নারীরা কোন কারণে অফিসে গেলে তিনি তাদেরকে হিজাব খুলতে বাধ্য করেন। এমনকি পরিদর্শনে বিভিন্ন স্কুলে গেলেও সেখানে মুখ ঢেকে রাখা মহিলাদের নানাভাবে মুখ খুলতে বাধ্য করতেন।