স্টাফ রিপোর্টার ॥ অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে ডিসপেনসারি। সরকারি ওষুধ বাইরে বিক্রি করে দেওয়া, ডিউটি না করেও কর্মচারীদের হাজিরা নেওয়া, সরকারি কোয়ার্টার ভাড়া দেওয়া, মাসের পর মাস অফিস না করাসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে ডিসপেন্সারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। এসব অনিয়মের মূলে রয়েছেন রেলওয়ে ডিস্পেন্সারির ফার্মাসিস্ট সাদিকা ইয়াসমিন।
এছাড়াও ডিসপেনসারির আয়া কবরী রানী দাসের বয়স জালিয়াতি, পরিচ্ছন্নতা কর্মী সাইদুর রহমানের অনুপস্থিত থেকেও হাজিরা দেওয়া, প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা মাহমুদা বেগমের বিরুদ্ধে অফিস ফাঁকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে ডিসপেনসারিতে যোগদান করেন সাদিকা ইয়াসমিন। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৯ সালে বদলি হয়ে যান আখাউড়াতে। তারপর থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে ডিসপেনসারীতে। কিন্তু সপ্তাহে দুই দিন শায়েস্তাগঞ্জে অফিস করার কথা থাকলেও তিনি তা করছেন না। উল্টো সরকারি ঔষধ নিজের স্বামীর ফার্মেসির মাধ্যমে বাহিরে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০২৪ সালের ওষুধ বিতরণের তথ্য রেজিস্ট্রারভূক্ত করেননি তিনি।
ছাত্র সমাজের এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে তদন্তে আসেন বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডাঃ সাজেদা বেগম ডেইজি। তদন্তকালীন সময়ে দেখা যায় ২০২৪ সালের ওষুধ বিতরণের কোন তথ্যই রেজিস্ট্রার ভুক্ত করেননি সাদিকা ইয়াসমিন। যে কয়েকটি স্লিপ তিনি তৈরি করেছেন সেগুলি একই দিনে একই সময়ে করা মর্মে প্রতিয়মান হয়। এমনকি স্লিপে উল্লেখিত একাধিক ব্যক্তি নিশ্চিত করেছেন যে, তারা স্লিপে উল্লেখিত তারিখে সেসব ওষুধ নেননি।
এ সময় আরো দেখা যায়, ডিসপেন্সারির আয়া কবরি রানী দাস ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী সাইদুর রহমান সহ সকল কর্মচারীর সরকারি ছুটিসহ সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতেও উপস্থিতি স্বাক্ষর দিয়ে রাখা হয়েছে। অথচ তারা সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিনের বেশি ডিসপেন্সারিতে যান না বলে ছাত্রদের অভিযোগ। অপরদিকে রেলের সিলেট বিভাগীয় সহকারী সার্জন মাহমুদা আক্তার সপ্তাহে একদিন শায়েস্তাগঞ্জ রোগীর দেখার কথা থাকলেও তিনি বিগত কয়েক মাসে একদিনও আসেননি। পরবর্তীতে ছাত্রদের অভিযোগ দেওয়ার পর তিনি সেখান থেকে দায়িত্ব অপসারণ চেয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট চিঠিও লিখেন।
অভিযোগের বিষয়ে সাদিক ইয়াসমিনের কাছে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি ঔষধ বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং রেজিস্ট্রারে তথ্য হালনাগাদ না করাটা তার ভুল হয়েছে মর্মে তিনি স্বীকার করেন, একই সাথে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
একই বিষয়ে বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডাঃ সাজেদা বেগম ডেইজি বলেন, একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তদন্ত করতে এসেছি। আমি যা কিছু পেয়েছি তা কর্তৃপক্ষকে অবগত করব। কর্তৃপক্ষ যে নির্দেশনা দিবেন আমি সেই মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।