স্টাফ রিপোর্টার ॥ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সিলেটে পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক এটিএম তুরাব হত্যা মামলার ৬নং আসামি সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন শিপনকে (৪৩) বিজিবি’র টাস্কফোর্স এর গ্রেফতারের বিষয়টি গুজব বলে দাবি করা হয়েছে। এদিকে সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন শিপনকে বিজিবি’র টাস্কফোর্স গ্রেফতার করেছে এমন একটি সংবাদ মুহূর্তের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এ প্রেক্ষিতে ডিএসবি হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার স্বাক্ষরিত একটি পত্রে সকল বিভ্রান্তির অবসান ঘটে। ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়, গত ২২ সেপ্টেম্বর রাত অনুমান সাড়ে ১১টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৫৫ বিজিবি ব্যাটালিয়ন হবিগঞ্জ এর সহকারি পরিচালক মোঃ ইয়ার হোসেন জানতে পারেন, হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানাধীন গোপিনাথপুর মাস্টার বাড়ি মনতলা সাকিন এলাকায় জনৈক ব্যক্তির বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। উক্ত সংবাদের প্রেক্ষিতে তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান পরিচালনার নিমিত্তে রওয়ানা হন। টাস্কফোর্স কর্তৃক অবৈধ অস্ত্র জব্দ করার প্রয়োজনীয়তা থাকায় মনতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের রাত্রীকালীন টহল দলের সহযোগিতা নেয়া হয়। সহকারি পরিচালক মোঃ ইয়ার হোসেন সঙ্গীয় ১৪ জন বিজিবি সদস্যসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাধবপুরকে নিয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর রাত অনুমান দেড়টায় মাধবপুর থানাধীন গোপিনাথপুর মাস্টার বাড়ি মনতলা সাকিনের মঈন উদ্দিনের বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু ওই বাড়িতে কোন অবৈধ অস্ত্র পাওয়া যায়নি। ওই সময় মঈন উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি সুনামগঞ্জ জেলা হতে ১টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নং-০৫/২০২২ (জগন্নাথপুর) গ্রহণ করলেও উক্ত লাইসেন্সের বিপরীতে কোন আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করেননি। তার নামে ইস্যুকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সটি বৈধ কিনা এবং উক্ত লাইসেন্সের বিপরীতে আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে বর্ণিত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স গ্রহীতাকে নিয়ে বিজিবি দল মাধবপুর থানায় যায়। পরবর্তীতে মাধবপুর থানায় রক্ষিত বেসরকারী আগ্নেয়াস্ত্র রেজিস্টার যাচাই বাছাই করে মঈন উদ্দিনের নামে কোন আগ্নেয়াস্ত্রের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তার হেফাজতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সটি সঠিক মর্মে প্রতীয়মান হয় এবং জানা যায় তিনি একজন পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) পদ মর্যাদার কর্মকর্তা। পরবর্তীতে পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মঈন উদ্দিন এর বিরুদ্ধে বিজিবির সহকারী পরিচালক মোঃ ইয়ার হোসেন এর কোন অভিযোগ নেই বা তার নিজ পরিবারের কাছে চলে যেতে পারেন মর্মে মাধবপুর থানার ওসি বরাবর লিখিতভাবে জানালে পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মঈন উদ্দিন সকাল অনুমান ১১ টায় নিজ বাড়ীর উদ্দেশ্যে চলে যান।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই সিলেট মহানগরের বন্দরবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাংবাদিক এটিএম তুরাব। ঘটনার এক মাস পর নিহতের ভাই আবুল আহসান মো. আযরফ (জাবুর) বাদী হয়ে ১৯ আগস্ট সিলেট অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালকে। এজাহারে আসামি হিসেবে পুলিশসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয় ২০০ থেকে ২৫০ জনকে। মামলার ৬ নাম্বার আসামি সে সময়ের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন।