হবিগঞ্জে শহীদ পরিবারগুলোতে অনুদান প্রদানকালে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমির ডাক্তার শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী এদেশের সত্যিকারের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুপরিকল্পিত ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজ করতে গিয়ে জামায়াতকে সীমাহীন জুলুম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এত অত্যাচার নির্যাতন সত্ত্বেও আমরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাইনি।
তিনি দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন- আওয়ামীলীগের রাজনীতি গুম, খুন, লুটপাট, মেয়েদের ইজ্জত লুন্টনের রাজনীতি। গত সতের বছরে আওয়ামীলীগ দেশের মুক্তিকামী মানুষ ও ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের উপর চরম পর্যায়ে নির্যাতন এবং এতোটা লুটপাট করেছে যে, বিচারের ভয়ে তারা পালাতে গিয়ে এখন খালে বিলে ধরা পড়ছে। অথচ তাদের দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি পালিয়ে যাবেন না।
শহীদ পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন- ছাত্র আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন তারা জাতীয় সম্পদ, জাতীয় বীর। তাদের আত্মত্যাগের কারণে দেশ একটি জুলুমবাজ সরকারের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আল্লাহর কাছে দ্বীনের জন্য, দেশের জন্য শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের দুনিয়া ও আখেরাতের সম্মানের কথা তুলে ধরলে উপস্থিত সবাই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। মঞ্চ থেকে নেমে আমীরে জামায়াত শহীদ পরিবারের সদস্যদের কাছে যান এবং জনে জনে খোঁজ খবর নেন ও শান্তনা দিয়ে তাদের হাতে এক লাখ টাকা করে অনুদান তুলে দেন। অনুদান প্রদানের সময় ছবি তুলতে নিষেধ করে বলেন, আমরা শহীদ পরিবারকে সম্মান জানাতে চাই। বিশ্ববাসী যেন এমন দৃশ্য না দেখে যে, আমরা দিচ্ছি আর তারা গ্রহণ করছেন।
মঈনউদ্দিন ফখরুদ্দিন সরকারের সকল দূর্নীতি ও অনিয়মের দায়মুক্তির অবৈধ চুক্তি মোতাবেক শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন শুরু করেন। ১৬ বছরে জামায়াতের সাবেক দুই আমিরসহ কেন্দ্রীয় ১১জন নেতাকে জুডিসিয়াল কিলিং এর মাধ্যমে হত্যা করে। তাদের মধ্যে ৫ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে, ৫ জনকে জেলে ভেতরে রেখে এবং ১ জনকে জেলের বাহিরে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। অসংখ্য নেতা-কর্মীকে কুপিয়ে, ক্রসফায়ারের নামে গুলি করে হত্যা, গুম, করা হয়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মী ১৬ বছর ঠিকমতো ঘরে ঘুমাতে পারেনি। বুলডোজার দিয়ে বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখল করে লুটপাট করা হয়েছে। ইতিহাসের নির্মম নির্যাতনের পরও আমরা দেশে থেকেই দেশবাসীর মুক্তির জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
দীর্ঘ দিনের নির্মম নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতে হলে আমাদেরই নেয়ার কথা, কিন্তু আমরা প্রতিশোধ নেইনি, নিবও না, সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছি। পট পরিবর্তনের পর আমরা মন্দির পাহারা দিয়েছি, বারবার হিন্দু ধর্মের নেতাদের সাথে বৈঠক করেছি। তিনি বলেন-এক স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, নতুন রুপে অন্য স্বৈরাচার যাতে ক্ষমতা দখল করতে না পারে সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
শনিবার সকাল ৯টার দিকে হবিগঞ্জ পৌরসভা মাঠে জামায়াতে ইসলামী হবিগঞ্জ জেলা শাখার আমির মাস্টার আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী কাজী মহসিন আহমেদের পরিচালনায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে হবিগঞ্জ জেলার শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ, অনুদান প্রদান ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মোঃ ফখরুল ইসলাম, হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা মুখলিছুর রহমান, সিলেট মহানগরী সেক্রেটারি মোঃ শাহজাহান আলী, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য শাহীন আহমদ খান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি ও চুনারুঘাট উপজেলার শানখলা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি আব্দুর রউফ বাহার, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আশরাফ আলী, কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা আব্দুস শহীদ, জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি রবিউল হাসান, সেক্রেটারি হোসাইন আহমদসহ বিভিন্ন উপজেলা আমীর ও সেক্রেটারিবৃন্দ।
ডাক্তার শফিকুর রহমান বলেন- শেখ হাসিনা বলতেন, এটা তাদের দেশ, অন্যরা ভাড়াটিয়া, এখন তারা নিজেরাই দেশে থাকতে পারছেন না, র‌্যাবকে তারা রক্ষি বাহিনীতে রুপান্তরিত করেছিল, আদালতকে কুক্ষিগত করে নিজেদের খেয়াল খুশি মতো রায় প্রদান করিয়েছে। তাদের কাছে কেউ নিরাপদ নয়। সংখ্যা গুরু বা সংখ্যা লঘু বলতে কিছুই নেই, আমরা সবাই মানুষ। মানুষ হিসাবে আমাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডাক্তার শফিকুর রহমান বলেন- অন্তবর্তীকালীন সরকার অত্যন্ত স্বচ্ছ, তারা দীর্ঘদিন ক্ষমতা আকড়ে রাখবেন না, যথাসময়ে নির্বাচন দেবে, জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে নির্বাহী আদেশে, আওয়ামীলীগের নির্বাহী আদেশই তো আমরা মানিনা, অবৈধ কোনো সরকারের আদেশ বৈধ হতে পারে না। নিবন্ধনের বিষয়টি আদালতের রায়ের বিষয়, আমরা আইনগতভাবেই সেটা মোকাবেলা করব।
শহীদ পরিবারের পক্ষে উপস্থিত থেকে আমীরে জামায়াতের হাত থেকে আর্থিক সহযোগিতা গ্রহণ করেন শহীদ সাদিকুর মিয়ার স্ত্রী জান্নাত বেগম, শহীদ নয়ন মিয়ার মা ঝর্না বেগম, শহীদ আকিবুর মিয়ার স্ত্রী রাকিবা আক্তার, শহীদ আনাস মিয়ার ভাই রাজিব মিয়া, শহীদ তোফাজ্জুল মিয়ার পিতা আঃ রউফ, শহীদ আশরাফুল মিয়ার পিতা আঃ নূর, শহীদ মুজাক্কির মিয়ার স্ত্রী সুজিনা বেগম, শহীদ সুহেল আখঞ্জির মেয়ে শিমু আখঞ্জি, শহীদ হাসান মিয়ার পিতা সানু মিয়া, শহীদ শফিকুল ইসলাম শামীম এর স্ত্রী পিয়ারা বেগম, শহীদ নাহিদুল ইসলামের ভাই নাইমুল ইসলাম, শহীদ মামুনুল ইসলামের ভাই আমীর হামজা, শহীদ মোনায়েম আহমদ ইমরানের স্ত্রী ইয়াসমিন বেগম, শহীদ রিপন শীলের মা রুবি রাণী ও শহীদ আজমত আলীর স্ত্রী রবিরুন বেগম।