স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবৈধভাবে ভারতে পালাতে গিয়ে বিজিবির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে তাকে সিলেট মহানগর হাকিম-১-এর বিচারক আলমগীর হোসেনের আদালতে হাজির করে কানাইঘাট থানা পুলিশ। এসময় বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা তাকে ঘিরে বিক্ষোভ করতে থাকেন। কেউ কেউ সাবেক এই বিচারপতির দিকে ডিম ও জুতা ছুঁঁড়ে মারেন।
এর আগে শুক্রবার সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত দিয়ে মানিক ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন। রাত ১০টার দিকে সীমান্ত থেকে বিজিবির হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। পরে মানিকের সাহায্যকারীরা মারধর করে সঙ্গে থাকা টাকা ও মোবাইলফোন ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বিজিবির ১৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আসাদুন নবী জানান, অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় ডোনা সীমান্ত থেকে বিচারপতি মানিককে গ্রেপ্তার করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্থানীয় থানায় হস্তান্তর করা হয়।
গতকাল মানিককে আটকের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে। সেটিতে দেখা যায়, প্যান্ট ও হাফ শার্ট পরে সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক শুয়ে আছেন কলাপাতার ওপর। তার কোলের কাছে একটি টুপি। মুখে কয়েক দিনের না কাটা দাড়ি। পাশে রয়েছে ছোট কয়েকটি পুটলা। ওই ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তোমাদের পয়সা দিয়ে দেব। তবে ওই ফালতু লোক দুইটারে আইনো না। আমি এই দেশে (ভারত) এত কষ্ট কইরা আইছি কি বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য?’
অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মানিকের গলায় একটি গামছা, যেটা ধরে রেখেছেন একজন। তাকে প্রশ্ন করেন, আপনি ইনডিয়া পালাইতাছেন কেন, বলেন? উত্তরে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ভয়ে পালাইতেছি। কার ভয়ে? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রশাসনের ভয়ে।
আওয়ামী লীগের সরকার পতনের কয়েক দিন আগে চ্যানেল আইয়ের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে একজন সঞ্চালককে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে সমালোচিত হন সাবেক বিচারপতি মানিক। সেই প্রসঙ্গ ধরে বিজিবি সদস্য প্রশ্ন করেন, ওই একটা মেয়েরে যে বলছিলেন ইয়ের বাচ্চা। মানিক তখন বলেন, ওইটা আমি ক্ষমাও চাইছি। এইযে দেখেন আমি বলি, আমি ইয়ের রোগী।
এরপর শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আটক করার সময় তার সঙ্গে কী কী ছিল। উত্তরে তিনি বলেন, তার সাথে ছিল ব্রিটিশ পাসপোর্ট, বাংলা পাসপোর্ট, টাকা আর কয়েকটি ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড।
বিজিবি সদস্য তখন প্রশ্ন করেন, কালকে যে দুজন টাকা নিছে, ওদের কাছে কত টাকা ছিল? উত্তরে সাবেক বিচারপতি মানিক বলেন, ওরা নিছে ধরেন, ষাট, সত্তরের মতো নিছে। বিজিবি সদস্য প্রশ্ন করেন, ষাট সত্তর লাখ? উত্তরে মানিক বলেন, হ্যাঁ। ওই দুই ছোকরা নিছে। আমি ১৫ হাজার টাকা ওদের বলছিলাম। ওইটা আমি দিছি। কিন্তু পরে এই দুই ছেলে আমারে মাইরা ধইরা সব টাকা নিয়ে গেছে।
পাশে থাকা আরেকজন সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় প্রশ্ন করেন, মাইরটা কুনজাগাত মারছে ভাইয়া? বর্ডারে আনিয়া মারছে? শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, না ভিতরে, ইন্ডিয়ার ভিতরে।
বিজিবি সদস্য প্রশ্ন করেন, আপনি তো বাংলাদেশে অনেকের বিরুদ্ধে অন্যায় করছেন, জুলুম করছেন, এইটা সঠিক? সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, আমি জুলুম করি নাই, আমি বিচারপতি হিসেবে যেগুলো রায় দেওয়ার আমি দিছি।