বিশেষ প্রতিবেদন……..
মোঃ মামুন চৌধুরী ॥ গরম তেলে ভাজা খাবারের প্রতি বাঙালির টান বরাবরই। তেলে ভাজা মানে চপ, সিঙ্গারা দেখলেই যেন আর লোভ সামলানো যায় না। সব বয়সী মানুষের কাছেই সিঙ্গারা প্রিয় একটি খাবার। হালকা খাবার হিসেবে সিঙ্গারা সব মানুষের কাছেই বেশ জনপ্রিয়।
হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ পুরানবাজারের পুরাতন ব্রিজের একপাশে মিলন বসাকের দোকানে ২৭ বছর ধরে মিনি সিঙ্গারা বিক্রি হয়ে আসছে। শুরুতে প্রতি পিস সিঙ্গারা ১ টাকায় বিক্রি হতো। এভাবে প্রায় ১৭ বছর বিক্রি হয়। পরে অর্থাৎ প্রায় ১০ বছর পূর্বে প্রতি পিস সিঙ্গারা এক টাকা থেকে দাম বেড়ে ৩ টাকায় বিক্রি হয়। এ সিঙ্গারা শায়েস্তাগঞ্জে খুবই জনপ্রিয়। লোকজন নানা স্থান থেকে এসে সিঙ্গারার স্বাদ ছেকে দেখেন। উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন মিটিংয়ে এ সিঙ্গারা দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করানো হয়। যদিও অন্যান্য দোকানে বড় সিঙ্গারা প্রতি পিস ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মিলন বসাক এখনও প্রতি পিস সিঙ্গারা ৩ টাকায় বিক্রি করে যাচ্ছেন। অতি স্বাদের এ সিঙ্গারা খেতে গিয়ে দোকান মালিক মিলন বসাকের সাথে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, শুরুতে তার দোকানে দৈনিক ৮০০ থেকে ৯০০ মিনি সিঙ্গারা বিক্রি হতো। বর্তমানে আড়াই থেকে ৩ হাজার মিনি সিঙ্গারা বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এ দামে সিঙ্গারা বিক্রি করে তেমন একটা লাভ হচ্ছে না। তারপরও বাবার পুরাতন পেশা ধরে রেখেছেন। শুরুতে এ সিঙ্গারা তৈরী করতেন তার বাবা। বর্তমানে তিনি এ সিঙ্গার তৈরী করেন। তার দোকানে ৩ জন কর্মচারী রয়েছে। তারা তাকে সহায়তা করে। সিঙ্গারা ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের খাবার তৈরী হয় দোকানটিতে।
সমাজসেবক শিক্ষক সমীরণ চক্রবর্তী শঙ্কু বলেন, মিলন বসাকের দোকানের মিনি সিঙ্গারা খেতে খুবই সুস্বাদু। শায়েস্তাগঞ্জসহ তার আশপাশ এলাকায় এ সিঙ্গারার জনপ্রিয়তা রয়েছে।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গাজীউর রহমান ইমরান বলেন, অনেক স্বাদের এ সিঙ্গারা মাঝে মধ্যে খাওয়া হয়। আমার ন্যায় লোকজন এ সিঙ্গারা খেয়ে স্বাদ পাচ্ছেন।
গবেষক আহমদ আলী বলেন, সকালে বা বিকেলে গরম গরম সিঙ্গারা খেতেই অনেকে বেশ পছন্দ করেন। এই সিঙ্গারার জন্ম হল কী ভাবে? সিঙ্গারার ইতিহাস অনেক পুরনো। এর জন্মস্থান কিন্তু বাংলাদেশ কিংবা ভারত নয়। বলা হয়, ফার্সি শব্দ ‘সংবোসাগ’ থেকেই এই সিঙ্গারা শব্দের উৎপত্তি।
আবার কোনও কোনও ইতিহাসবিদের দাবি, গজনবী সাম্রাজ্যে সম্রাটের দরবারে এক ধরনের নোনতা পেস্ট্রি পরিবেশন করা হতো। যার মধ্যে কিমা, শুকনো বাদাম জাতীয় কিছু দেওয়া হতো। ভারতে ২ হাজার বছর আগে সিঙ্গারার আবির্ভাব। বাংলাদেশে আসার পর সিঙ্গারার অনেক পরিবর্তন হয়। বাংলাদেশে সিঙ্গারাকে আরও সুস্বাদু করে তোলার জন্য তার মধ্যে মরিচ এবং কিছু মশলা ব্যবহার করা হয়। ১৬ শতকে পর্তুগিজরা যখন এ দেশে আলুর ব্যবহার শুরু করে তার পর থেকে সিঙ্গারার মধ্যে আলু দেওয়ার রীতি চালু হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে আলাদা আলাদা স্বাদের সিঙ্গারা পাওয়া যায়। কোথাও পনির ব্যবহার করা হয় তো, কোথাও শুকনো ফল। এখন আবার চাউমিনের পুর দিয়েও সিঙ্গারা তৈরি করা হয়। তবে আলুর পুর দেওয়া সিঙ্গারার চলই বেশি।